জর্জেভিচের প্রথম ক্লাস

সাতসকালেই নিজের প্রথম ক্লাসটা শুরু করে দিলেন জোরান জর্জেভিচ। বাফুফে ভবনের তৃতীয় তলায় ৩৭ জন ফুটবলারকে নিয়ে কাল এক টেবিলে বসলেন সার্বিয়ান কোচ। বসা তো নয়, যেন রণহুঙ্কার আর কঠোর সতর্কবাণী মেশানো এক বক্তৃতা দিলেন। খেলোয়াড়দের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতার মূল সুর ছিল, মাঠে ২০০ ভাগ দেওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে। দুর্বল চিত্ত আর ঢিলেমি দেওয়ার মানসিকতা আছে যাঁদের, সেসব ফুটবলারের ঠাঁই হবে না তাঁর এসএ গেমসের ক্যাম্পে।
বেলা একটা নাগাদ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল দল বিকেএসপিগামী গাড়িতে উঠল। এসএ গেমস শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আগামী ১৫-১৬ দিন দলটা সেখানেই অনুশীলন করবে। যাওয়ার আগে খেলোয়াড়দের দেখে মনে হচ্ছিল, ‘বাঘের খাঁচা’য় বন্দী হতে চলেছেন। একটু আগে জোরানের প্রথম ক্লাসে ওই খেলোয়াড়দের জনা পাঁচেক তো ‘শাস্তি’ও ভোগ করেছেন। শাস্তিটা প্রতীকী, কিন্তু ওতেই নতুন কোচ বুঝিয়ে দিয়েছেন তাঁর ক্লাসে নড়েচড়েও বসা যাবে না। হাতের নখ খুঁটলে কোচ বলবেন, ‘তোমার মনোযোগ নেই। উঠে এসে আমার পাশে বসো।’ আবার কেউ ঝিমুচ্ছে মনে করে তাঁর প্রতি কড়া নির্দেশ জারি হবে, ‘মুখ ধুয়ে এসো। এখানে বসে ঝিমুনো চলবে না, ম্যান...।’
এসবই ঘটল সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে। এমনিতে কোচের ব্রিফিংয়ে মিডিয়ার প্রবেশাধিকার থাকে না। কিন্তু জোরান কাল সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ভেতরে নিলেন এবং তাঁর ‘কথার ঝড়’ বইল সাংবাদিকদের ওপরও। খেলোয়াড়দের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতা থামিয়ে হঠাত্ সংবাদমাধ্যমের ‘কী করা উচিত’ বলা শুরু করলেন। এই ফাঁকে গোটা তিনেক প্রশ্নের উত্তরও দিলেন, যা ছিল মূলত প্রস্তুতিবিষয়ক।
এই প্রস্তুতিটা ১৯৯৯ কাঠমান্ডু সাফে জেতা ফুটবলের একমাত্র সোনা পুনরুদ্ধারের। কিন্তু এবার গেমস আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সম্ভাব্য ১৭টি সোনার যে তালিকা করেছে, তাতে নেই ফুটবল!
সাফ ফুটবলে বিপর্যরের পরও এসএ গেমসে সোনা জয়ের ব্যাপারে অবশ্য খুবই আশাবাদী দেখাল ফুটবলারদের। গোলরক্ষক আমিনুল বললেন, ‘সাফে আমরা পারিনি। এসএ গেমসে পারতেই হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে অবশ্যই পারব।’ স্ট্রাইকার এমিলির কথা, ‘আমি মনে করি, এটা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো টিম। সব সময়ই বাংলাদেশ দল সাফ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলে। এবার, আমি মনে করি, দলের সব খেলোয়াড়ই ভালো। এখন মাঠেই প্রমাণ করতে হবে নিজেদের।’
এই ‘মাঠে প্রমাণে’র ওপরই জোর দিলেন জর্জেভিচ। খেলোয়াড়দের বললেন, ‘দেশ তোমাদের অনেক কিছু দিচ্ছে, এখন তোমাদের দেবার পালা।’ শুধু চাইলেই হবে না, প্রস্তুতিটা ভালো হওয়া চাই। সেই প্রস্তুতিটা মাত্র ১৫-১৬ দিনে ভালোই হবে বলে তাঁর বিশ্বাস, ‘সময় যা আছে, চলবে। এটা কোনো সমস্যা নয়।’
গত দুটি গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ ফুটবল দল খেলেছে বলে গেমস ফুটবলের আকর্ষণ এখন তেমন নেই। এই দুবার বাংলাদেশ সেমিফাইনালেই যেতে পারেনি। তার আগ পর্যন্ত ফুটবল ছিল আকর্ষণের কেন্দ্রে এবং ফুটবলের সোনাই ছিল সবার কাঙ্ক্ষিত। এখনো যে পুরোপুরি আকর্ষণহীন তা নয়। তবে বাংলাদেশের জন্য এটা বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং জোরান তাঁর প্রথম ক্লাসেই সেটা মেনে নিলেন, ‘অবশ্যই এটা বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য।’
ইংল্যান্ড প্রবাসী দুই ফুটবলারই শুধু ছিলেন না কাল। ওই দুজন আসবেন ১৫ জানুয়ারি।

No comments

Powered by Blogger.