অ্যানি ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি সংরক্ষণকারী মেইপ গিয়েস মারা গেছেন

নািস বাহিনীর হাত থেকে অ্যানি ফ্র্যাঙ্কের বিখ্যাত সেই ডায়েরি সংরক্ষণকারী মেইপ গিয়েস মারা গেছেন। গত সোমবার নেদারল্যান্ডের একটি নার্সিং হোমে ১০০ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেদারল্যান্ডে নািসদের হাত থেকে অ্যানি ফ্র্যাঙ্ক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের লুকিয়ে থাকতে যাঁরা যাহায্য করেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন হলেন মেইপ গিয়েস। নািস বাহিনী নেদারল্যান্ড দখল করে নেওয়ার পর অ্যানির বাবা অটো ফ্র্যাঙ্ক পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাঁর অফিস ভবনের একটি গুপ্তকক্ষে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের খাবারসহ অন্যান্য জিনিস সরবরাহ করত মেইপ গিয়েসসহ কয়েকজন। পরে সাহায্যকারীদের কোনো একজনের বিশ্বাসঘাতকতায় নািস বাহিনী অটো ফ্র্যাঙ্কের পরিবারকে গ্রেপ্তার করে বন্দিশিবিরে নিয়ে যায়। গ্রেপ্তারের সাত মাস পর টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে মাত্র মাত্র ১৫ বছর বয়সে বন্দিশিবিরে মারা যায় অ্যানি ফ্র্যাঙ্ক। একমাত্র বাবা ছাড়া অ্যানির পরিবারের অন্য সদস্যরাও মারা যায় ওই শিবিরে।
নািস বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গুপ্ত ওই অফিসভবনে দুই বছর বাস করার সময় কিশোরী অ্যানি ফ্র্যাঙ্ক একটি ডায়েরি লেখেন। নািস বাহিনী যখন অ্যানি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বন্দী করে নিয়ে যায় তখন ডায়েরিটি সংরক্ষণ করেছিলেন মেইপ গিয়েস। তিনি আশা করেছিলেন একদিন হয়তো তিনি ডায়েরি অ্যানিকে ফেরত দিতে পারবেন।
যুদ্ধ শেষে অ্যানির বাবা অটো ফ্র্যাঙ্ক আমাস্টারডামে ফিরে এসে পরিবারের সদস্যদের কাউকে জীবিত পাননি। তবে তিনি অ্যানির লেখা ডায়েরিটি সংগ্রহ করেন। মেইপ গিয়েসের কাছ থেকে। ১৯৪৭ সালে তিনি ‘এ ডায়েরি অব এ ইয়াং গার্ল’ নামে ডায়েরিটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীকালে ডায়েরিটি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বিক্রি হয় এর লাখ লাখ কপি। এই ডায়েরিকে উপজীব্য করে অনেক নাটক ও চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।
অ্যানির পরিবারকে সাহায্যের বিষয়ে ১৯৯৮ সালে একটি পত্রিকাকে এক সাক্ষাত্কারে মেইপ গিয়েস বলেন, ‘তাঁরা ছিলেন অসহায়, কোথায় যেতে হবে জানেন না। মানবিক দায়িত্ব হিসেবেই আমরা তাঁদের সাহায্য করেছিলাম।’ তিনি জানান, তাঁর দায়িত্ব ছিল তাঁদের সবজি ও মাংস সরবরাহ করা, অন্যরা দিত রুটি ও বই।
অ্যানি সম্পর্কে গিয়েস বলেন, তার কথাবার্তা ছিল প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই। তিনি বলেন, ‘একদিন দেখলাম সে ডায়েরি লিখছে। আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না তার কাছে যাব নাকি চলে যাব। ওই মুহূর্তে সে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল, যা আমি কোনো দিন ভুলব না।’
গিয়েস আরও বলেন, ‘অ্যানিকে আমি খুবই প্রাণচঞ্চল, হাসিখুশি একটি মেয়ে হিসেবেই জানতাম। কিন্তু সে আমার দিকে তাকানোর পর দেখলাম, চোখেমুখে ভীষণ রাগের ছাপ। সে উঠে দাঁড়াল। ডায়েরিটি বন্ধ করে রেখে গম্ভীরভাবে বলল, ‘হ্যাঁ, আমি আপনার সম্পর্কেও লিখছি।’
গিয়েস বলেন, ‘আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী বলি, শুধু মুখে আসল, ‘সেটা তো অনেক মজার ব্যাপার।’

No comments

Powered by Blogger.