সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেথাইল্যান্ড -থাকসিনকে কম্বোডিয়ার উপদেষ্টা নিয়োগ

দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। থাইল্যান্ড গতকাল শুক্রবার সীমান্তবর্তী চেকপয়েন্ট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এ ছাড়া ২০০১ সালে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত একটি তেল-গ্যাস চুক্তিও বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে থাই সরকার।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার থাকসিনের নিয়োগ নিয়ে দুই দেশ চরম কূটনৈতিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। ওই দিন উভয়েই তাদের নিজ নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
২০০৬ সালে ক্ষমতাচ্যুত হন থাকসিন সিনাওয়াত্রা। গত বছর থেকে স্বেচ্ছানির্বাসনে আছেন তিনি। থাইল্যান্ডের এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কম্বোডিয়া সরকার এবং সেদেশের প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় গত বুধবার।
থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী সুদীপ দুগসুবান বলেছেন, ‘কম্বোডিয়া চরমপন্থাসম্পৃক্ত নীতি অবলম্বন করলে এবং কোনো ধরনের মীমাংসায় আসতে না চাইলে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতেই থাকবে। এমনকি সীমান্তের নিরাপত্তা চৌকি বন্ধ করে দিতে পারে থাইল্যান্ড।’ তবে সুদীপ জানান, এখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত-বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো ধরনের সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাসিট পিরমিয়া বলেন, থাইল্যান্ড উপসাগরে ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় একটি বিতর্কিত অঞ্চলে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কম্বোডিয়া ও তখনকার থাকসিন সরকারের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তিটি এখন বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে থাই সরকার। তিনি বলেন, থাইল্যান্ড সরকার মনে করে, থাকসিনকে কম্বোডিয়ার উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি এই চুক্তিকে প্রভাবিত করেছে। কেননা, থাকসিন সিনাওয়াত্রা কম্বোডিয়ার সঙ্গে থাইল্যান্ডের অবস্থান সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল।
কাসিট পিরমিয়া বলেন, বিগত আট বছরে এই চুক্তির ফলে কোনে উন্নতি হয়নি। আগামী মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি চুক্তিটি বাতিল করার প্রস্তাব করবেন।
থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রিহ ভিহিয়া নামের একটি প্রাচীন মন্দির অবস্থিত। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে এখানকার ভূমির মালিকানা নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে এ পর্যন্ত দুই দেশের সেনাদের মধ্যে বেশ কয়েকবার ছোটখাটো যুদ্ধও হয়েছে।
কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে গতকাল খুব ভোরে ব্যাংকক থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। থাইল্যান্ড সরকার ব্যাংককে কম্বোডিয়ার দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
গতকাল জাপানের টোকিও নগরে মেকং নদীবিধৌত দেশগুলোর একটি সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেখানে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অভিজিত ভেজ্জাজিভা ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।
থাইল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী সুদীপ বলেছেন, ‘ওই সম্মেলনের বাইরে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক করার কোনো পরিকল্পনা নেই।’ এ ব্যাপারে কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকেও তাত্ক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে কম্বোডিয়া টেলিভিশন বলেছে, রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশ্যে থাইল্যান্ড সরকার থাকসিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে। একজন সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, থাকসিনের নেতৃত্ব ও ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার প্রতি কম্বোডিয়া সরকারের শ্রদ্ধা রয়েছে। থাকসিন উপদেষ্টা হিসেবে যোগদান করলে তিনি কম্বোডিয়ার জন্য একটা সম্পদে পরিণত হবেন।
অন্যদিকে থাইল্যান্ড সরকার আভাস দিয়েছে, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত থাকসিন কম্বোডিয়া সফর করলে অথবা সেখানে বসতি স্থাপন করলে তাঁকে ফেরত চাইবে থাইল্যান্ড।

No comments

Powered by Blogger.