চিনির দাম বাড়ানোর দাবি অযৌক্তিক -দ্রব্যমূল্যে এখনো উত্তাপ

বাজার-পরিস্থিতি নিয়ে তেমন একটা সুখবর মিলছে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে তাই অসন্তোষ বাড়ছে। মূলত জিনিসপত্রের দাম একটা চড়া পর্যায়ে উঠে রয়েছে; সেখান থেকে নামার কোনো লক্ষণ নেই। এটাকে বাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে তর্কের খাতিরে মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এই চড়া স্তরের স্থিতিশীলতা কাঙ্ক্ষিত নয়, বরং আতঙ্কের; এ জন্য যে কোনো কোনো দ্রব্যের দাম আরও বাড়বে—এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এক বছর আগের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায় কিছু পণ্যের দাম কমেছে। সরকারি পরিসংখ্যান থেকে এমন চিত্রই পাওয়া যায়। এতে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। এক বছর আগে দেশের পরিস্থিতি যা ছিল, এখন নিশ্চয়ই তা নয়। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেও উঁচু স্তরের স্থিতিশীলতা কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
এখন কেন দাম কমছে না—এ প্রশ্নের জবাব মেলা কঠিন। সরবরাহ-ঘাটতি কতখানি দায়ী আর ব্যবসায়ীদের কারসাজি কতখানি দায়ী, এ নিয়ে বিতর্ক আছে। বিশেষ করে বাজার যখন অস্থির হয়ে ওঠে, তখন এই বিতর্ক জোরদার হয়। একইভাবে পণ্যের চাহিদা-জোগানের বিষয়ে সরকারের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য-পরিসংখ্যান নেই, নেই বাজার নিয়ে যথাযথ গবেষণা। সর্বোপরি বাজারে চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে—এমন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানও হয়ে রয়েছে দুর্বল। এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে বাজার তদারক ও নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা বহু ক্ষেত্রেই হিতে বিপরীত হয়েছে। সুতরাং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজার সরকারের জন্য বরাবরই একটি স্পর্শকাতর বিষয়।
এর মধ্যে প্রথম আলোর এক সংবাদ থেকে জানা গেছে, চিনি ব্যবসায়ীরা আবারও চিনির দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী অবশ্য সরাসরি এ দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। কিন্তু তাতে বাজারে যে চিনির দাম বাড়বে না, এ নিশ্চয়তা মেলেনি। বস্তুত, কয়েক মাস ধরে চিনির দাম নিয়ে যেসব কাণ্ড হয়েছে, তাতে সরকারের অদক্ষতাই প্রকাশ পেয়েছে। বিশেষত, অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী চিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি চিনির মূল্য ৪৯ টাকা নির্ধারণ করে দেন। অথচ বাজারে এই দাম থাকেনি। টিসিবির হিসাব অনুসারেই গতকাল বাজারে কেজিপ্রতি চিনি ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তাহলে কোন যুক্তিতে চিনির দাম আরও বাড়ানোর দাবি তোলা হয়?
আবার আগামী দিনগুলোয় চালের দাম নিয়ে একটি শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উত্পাদনে ঘাটতি হওয়ায় ভারত বিশ্ববাজার থেকে চাল কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। ভয়াবহ বন্যার কারণে ফিলিপাইনে চালের উত্পাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো বিশ্ববাজারের চালের দামের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর তার কিছুটা প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়া বিচিত্র কিছু নয়। নীতিনির্ধারকদের তাই এই দিকটায় নজর রাখা প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.