লাভের গুড় যেন পিঁপড়ায় না খায় -চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরের চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল জেটিতে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজে দামের ক্ষেত্রে এত দিন যে বড় রকমের ফাঁকি ছিল, তা দরপত্র ডাকার পর স্পষ্ট হয়ে গেছে। গত শনিবারের প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাইফ পাওয়ার টেক প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ কনটেইনার ওঠানো-নামানোর জন্য এখন ৫০৫ টাকা নিচ্ছে। অথচ দরপত্র আহ্বান করার পর একই প্রতিষ্ঠান এ কাজে দর উল্লেখ করেছে ১৫৫ টাকা। আগে এ কোম্পানিটি একই কাজের জন্য নিত এক হাজার ২০০ টাকা।
কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পর কয়েক বছরের মধ্যে দরের এমন পার্থক্য হওয়া বিস্ময়কর। এই সময়ে সার্বিক ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু দরের এ নাটকীয় পতন থেকে অনুধাবন করা যায় যে একতরফাভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে কাজের দায়িত্ব দেওয়াতেই এত দিন তারা বেশি দরে কাজ করতে পেরেছে। এখন প্রতিযোগিতায় নামতে গিয়ে তারা দর কমাতে বাধ্য হচ্ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে এত দিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজের দাম নিত। এর ফলে নিশ্চয় লাভবান হয়েছে বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, কিন্তু ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি ও ভোক্তার স্বার্থ। কথায় বলে, লাভের গুড় পিঁপড়ায় খায়। একদিকে আমদানি-খরচ বেশি হওয়ায় ভোক্তাকেই এর জন্য মূল্য দিতে হয়েছে সবচেয়ে বেশি, পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার কাছ থেকেই সে অর্থ তুলে আনা হয়েছে। অন্যদিকে এতে রপ্তানি-ব্যয়ও বেড়ে যায়। বন্দর কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে এই বাড়তি অর্থ চলে যায় একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজের কাছে।
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। জলপথে দেশের বেশির ভাগ আমদানি-রপ্তানির পণ্য ওঠানো-নামানো হয় এ বন্দর দিয়ে। সঠিকভাবে তদারক করতে ব্যর্থ হলে এখানে অনিয়ম-দুর্নীতি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। বন্দরের কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেওয়া না গেলে আমদানি-রপ্তানিতে অতিরিক্ত ব্যয় চলতেই থাকবে, আর এতে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হবে দেশের জনগণ।

No comments

Powered by Blogger.