খাদ্য রপ্তানি বন্ধের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছে এলডিসি- স্বল্পোন্নত দেশগুলোর খাদ্যনিরাপত্তা অর্জনে এটি গুরুত্বপূর্ণ: বাংলাদেশ by শওকত হোসেন

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সপ্তম মন্ত্রিপরিষদের সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) পক্ষ থেকে শুল্ক ও কোটামুক্ত পণ্যের প্রবেশাধিকারের দাবিটি আবারও জোরালোভাবে করা হচ্ছে। পাশাপাশি এবার নতুন একটি দাবি তোলা হচ্ছে। আর সেটি হলো, কোনো সদস্য-দেশ থেকে এলডিসি খাদ্য আমদানি করতে চাইলে তা নিষিদ্ধ করতে পারবে না। বাংলাদেশ এই দাবির সমর্থন দিয়ে বলেছে, এলডিসির জন্য খাদ্যনিরাপত্তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
১৬ অক্টোবর তাঞ্জানিয়ার দারেস-সালামে শেষ হয়েছে ষষ্ঠ এলডিসি বাণিজ্যমন্ত্রী সম্মেলন। এই সম্মেলনে গৃহীত দারেস-সালাম ঘোষণায় এ ধারাটি যুক্ত করা হয়েছে। খসড়া আকারে ঘোষণাটি সদস্য দেশগুলোতে পাঠানো হয়েছিল। সে সময়ও বাংলাদেশ একে জোরালো সমর্থন করেছে।
আগামী ৩০ নভেম্বর জেনেভায় অনুষ্ঠিত হবে ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন। এই সম্মেলন সামনে রেখে তাঞ্জানিয়ায় অনুষ্ঠিত হলো এলডিসির বাণিজ্যমন্ত্রী সম্মেলন। বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়।
হংকংয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী পর্যায়ের ষষ্ঠ সম্মেলনে এলডিসির জন্য ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। ২০০৫ সালের পর আর মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন হয়নি। ৯৭ শতাংশ পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়নি। এখনো কোন কোন পণ্যে এই সুবিধা দেওয়া হবে তা ঠিক হয়নি। এলডিসি ২০০৯ সালের মধ্যেই এর পরিণতি চায়।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, উন্নত দেশগুলোর কেউ কেউ এ সুবিধা দিতে সমস্যায় পড়ছে। এ ক্ষেত্রে এমনভাবে ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে হবে, যাতে এলডিসির বাজার অর্থপূর্ণভাবে সম্প্রসারিত হয়। এমনভাবে এই সুবিধা দিতে হবে, যাতে করে এলডিসির আমদানির মোট ৬০ শতাংশ পণ্যে যাতে এ সুবিধা বহাল থাকে।
সূত্র জানায়, অর্থপূর্ণ বাজার সম্প্রসারণের বিষয়টি যুক্ত হয়েছিল ২০০৮ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ডব্লিউটিওর মন্ত্রী পর্যায়ের ক্ষুদ্র পর্যায়ের সম্মেলনে। কেননা, ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হলেও এতে অনেক দেশেরই তেমন কোনো লাভ হবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশ এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল প্রথম থেকেই। কেননা, টেক্সটাইল পণ্য বাদ দেওয়া হলে এ সুবিধা থেকে বাংলাদেশ কোনোভাবেই লাভবান হবে না। কোন কোন পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিতে পারবে না ধনী দেশগুলো, তারও তালিকা চেয়েছে এলডিসি।
জেনেভায় মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে আরেকটি কাজ একতাবদ্ধ থেকে এলডিসির হয়ে দাবিগুলো তুলে ধরা। কেননা, বস্ত্র ও পোশাক খাতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সমর্থন করছে না অধিকাংশ আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ার এলডিসি। বিশেষ করে আফ্রিকার এলডিসিগুলোই বেশি সমর্থন করছে না। সুতরাং বাংলাদেশ আফ্রিকার স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সঙ্গে মতভেদ ও ব্যবধান কমিয়ে আনতে চেষ্টা করছে। পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোয় পণ্য রপ্তানিতে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে যে বিশেষ শুল্কসুবিধা দেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রাপ্য সুবিধা যাতে কোনো অংশেই তাদের চেয়ে কম না হওয়া সে চেষ্টাও বাংলাদেশের রয়েছে। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ব্যাপারে উন্নত দেশগুলোর পক্ষ থেকে বিশেষ শুল্ক সুবিধার প্রস্তাব রয়েছে।
আসন্ন সম্মেলনে পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে শ্রমের মানসহ বিভিন্ন বিষয়ে চাপের মধ্যে রাখা হয়েছিল স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে। তবে এ বিষয়ের মাধ্যমে নতুন করে যাতে বিধিনিষেধ আরোপ না করা হয়, সে জন্য এলডিসিগুলো জোরালো পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে এলডিসির দারেস-সালাম ঘোষণায় বলা হয়েছে, পরিবেশ-সম্পর্কিত বিভিন্ন কৃষি ও শিল্পপণ্যের শুল্ক হার কমানোর কোনো বাধ্যবাধকতা এলডিসির ওপর আরোপ করা যাবে না। এ জাতীয় পণ্যের প্যাটেন্ট সংরক্ষণ থেকেও এলডিসিগুলো ১০ বছরের ছাড় পাবে। পাশাপাশি কোনো পণ্য উত্পাদনকারী দেশের জন্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলে তা রপ্তানিও নিষিদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া ডব্লিউটিও কারিগরি সহায়তা এবং বাণিজ্যের জন্য সাহায্য স্কিমের অনুদানের আওতায় পরিবেশগত প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি ও উপকরণ, পণ্য এবং সেবা এলডিসির জন্য সহজলভ্য করার কথাও বলা হয়েছে এলডিসির ঘোষণায়।
সব মিলিয়ে ভর্তুকি, শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার এবং বাণিজ্যের জন্য সাহায্যের ক্ষেত্রে অভিন্ন অবস্থান নিয়ে ৮৪টি পয়েন্ট-সংবলিত দারেস-সালাম ঘোষণা গৃহীত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.