দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা চলছে জোড়াতালি দিয়ে -দীর্ঘদিন ধরে কোনো পূর্ণাঙ্গ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নেই by হাসান ইমাম

দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা চলছে জোড়াতালি দিয়ে। বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জ দুটিতে ব্যবস্থাপনার প্রধান পদে কোনো পূর্ণকালীন কর্মকর্তা নেই। ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে চালানো হচ্ছে শেয়ারবাজারের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল এ দায়িত্ব।
অবশ্য চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সম্প্রতি একজনকে পূর্ণকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু তাঁর কাজে যোগ দিতে এখনো সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগবে।
অন্যদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিইওর পদটি প্রায় চার মাস ধরে চালানো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তাকে দিয়ে। প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার (সিওও) পদটিও আট মাসের বেশি সময় ধরে ফাঁকা রয়েছে।
নিয়মানুযায়ী ৯০ দিনের বেশি প্রধান নির্বাহীর পদটি ভারপ্রাপ্তদের দিয়ে চালানোর কথা নয়। সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ডিএসইকে একটি চিঠিও দিয়েছে। জবাবে ডিএসইর পক্ষ থেকে সিইও নিয়োগ দেওয়ার জন্য আরও তিন মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, স্বনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহীর কর্মকর্তার পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (বোর্ড ও প্রশাসন) বিধিমালা, ২০০০ অনুযায়ী মুক্ত, অবাধ, স্বচ্ছ ও দক্ষ বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সিইওকে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি স্টক এক্সচেঞ্জের কোনো সদস্য ব্রোকারেজ হাউসে অনিয়ম করলে এর তদারকির প্রাথমিক দায়িত্বও সিইওর ওপরই বর্তায়। তাই সিইওকে পুঁজিবাজারের বিধিবিধান জানার পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে দক্ষ হতে হয়। একই সঙ্গে হতে হয় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, যাতে করে তিনি সদস্যদের অন্যায্য অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা রাখেন।
এসব কারণেই স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ সিইও নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিলেও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় এসইসি। এর মাধ্যমে সিইওর ক্ষমতাকে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদের কোনো কোনো সদস্য চায় প্রতিষ্ঠানের সিইও এমন ব্যক্তি হোক যিনি হবেন তাঁদের অনুগত। এ কারণেই তারা পূর্ণাঙ্গ সিইও নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সিইও রাখার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী।
তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও বাজারের স্বচ্ছতা ধরে রাখতে পূর্ণকালীন সিইওর কোনো বিকল্প নেই বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডিএসইর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিইও নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একজন নতুন সিইও এবং সিওও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে।
ডিএসই সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির এ যাবত্কালের সবচেয়ে সফল সিইও অধ্যাপক সালাহউদ্দীন আহমেদ খান পাঁচ বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি দায়িত্ব ছাড়ার পর প্রতিষ্ঠানটির সিওও শরিফুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় সিইও নিয়োগ দেওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়।
শেষ পর্যন্ত বাইরে থেকে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে ২০০৯ সালের ১ মার্চ শরীফুল ইসলামকেই পূর্ণাঙ্গ সিইও হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে পদত্যাগ করেন শরীফুল ইসলাম। এর পর থেকে ডিএসইর প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) সতিপতি মৈত্র ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) মার্কেট অপারেশনস ও কমপ্লায়েন্স বিভাগের প্রধান মো. আতিকুজ্জামান গত আগস্ট থেকে সিএসইর ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগের সিইও আবু বকর সিদ্দিকীকে স্টক এক্সচেঞ্জের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তবে যোগাযোগ করা হলে স্টক এক্সচেঞ্জের একজন কর্মকর্তা জানান, মালেয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. আবদুল্লাহ মামুমকে পূর্ণকালীন সিইও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের ২৯ তারিখ তাঁর কাজে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.