বখাটের ছোড়া এসিডে ঝলসে গেছে মৌয়ের শরীর by নজরুল ইসলাম

‘রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে বাসার পাশেই বাইরের বাথরুমে যাই। সঙ্গে ছিল আমার বোন। এ সময় ওপর থেকে আমার ওপর গরম পানির মতো ফোঁটা পড়ছিল। টর্চ ধরে দেখতে পাই পাশের কাঁঠালগাছে বখাটে সেলিম বসে আছে। ভয়ে আপাকে জড়িয়ে ধরলে সেলিম ওপর থেকে আমার ওপর এসিড ঢেলে দেয়। এসিড লাগে পুরো শরীরে। শুরু হয় জ্বালাপোড়া। আমি চিত্কার দিলে বাসার সবাই এগিয়ে আসার আগেই সেলিম গাছ থেকে নেমে পালিয়ে যায়। সবাই এসে আমার শরীরে পানি ঢালে এবং পরে হাসপাতালে আনা হয়।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিত্সাধীন স্কুলছাত্রী রোকাইয়া পারভীন ওরফে মৌ গতকাল শুক্রবার দুপুরে এভাবেই এসিড-সন্ত্রাসের বর্ণনা দেয়। গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার নিজ বাড়িতে বখাটে সেলিম তার ওপর এসিড ছুড়ে মারে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মৌয়ের সারা শরীরে ব্যান্ডেজ। ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারে না। ব্যথায় কাতরাচ্ছে। পাশে ছিল তার উদ্বিগ্ন মা-বাবা ও ভাই।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক সামন্তলাল সেন। সামন্তলাল প্রথম আলোকে বলেন, রোকাইয়ার শরীরের ১২ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে ক্ষতগুলো গভীর। তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত নয়।
হাসপাতালের বিছানায় রোকাইয়া জানায়, সে শেরপুরের সীমাবাড়ি এস আর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী। আগামী বছর ওই স্কুল থেকে সে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে।
রোকাইয়ার বাবা সৌদি-প্রবাসী আবদুর রশীদ বলেন, আট-নয় বছর ধরে তিনি সৌদি আরবে আছেন। পাশের বাড়ির জয়নাল আবেদিন তাঁর জমি বর্গা চাষ করতেন। দরিদ্র জয়নালের সংসারে অভাবের কারণে তাঁর বড় ছেলে সেলিম আহমেদকে তাঁর বাসায় আশ্রয় দেন এবং স্কুলে ভর্তি করে দেন। দুই-তিন বছর আগে সে এস আর পরিবহনে চাকরি নেয়। এর পর থেকেই সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। বিপথগামী যুবকদের সঙ্গে তার চলাফেরা। গভীর রাতে বাড়ি ফিরত।
রশীদের স্ত্রী কোহিনূর বেগম বলেন, এসব কারণে সেলিমকে তাঁদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও সে বাসায় আসত। গত জুন মাসে তাঁর স্বামী দেশে এসে জয়নালকে ডেকে তাঁর বিপথগামী ছেলেকে তাঁর হাতে তুলে দেন।
রশীদ-কোহিনূর দম্পতির দাবি, প্রতিশোধ নিতেই সেলিম এসিড মেরে মৌয়ের শরীর ঝলসে দেয়। এর আগে ছদ্মনামে চিঠি দিয়ে সেলিম তার কাছে চাঁদা চেয়ে হত্যার হুমকি দেয়।
এসিড ছোড়ার ঘটনায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর কোহিনূর বেগম বাদী হয়ে শেরপুর থানায় এসিড অপরাধ দমন আইনে মামলা করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, ঘটনার ২২ দিন পরও শেরপুর থানার পুলিশ বখাটে সেলিমকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রশীদ বলেন, আজ (গতকাল শুক্রবার) রাতে তাঁকে সৌদি আরব যেতে হচ্ছে। তিনি সেলিমের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আলহাজউদ্দিন বলেন, ঘটনার পর এজাহারভুক্ত আসমি সেলিম গা ঢাকা দিয়েছে। মামলার অভিযোগপত্র তৈরির কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।

No comments

Powered by Blogger.