গান, কবিতা, ছবিতে বৈচিত্র্যময় আয়োজন

মঞ্চের এক পাশে বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ছবি। ছবির গলায় মালা। কারও ছবিতে যখন মালা পরানো হয় তখন বোঝাই যায়, সেই মানুষটি আর নেই। তিনি নীরব। আছে তাঁর গান। মঞ্চে ‘সুরের ধারা’র বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা সার বেঁধে বসেছে। সমবেত কণ্ঠের সুরে ভরে উঠল রাজধানীর লালমাটিয়ায় সংগীতপ্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র নিজস্ব মিলনায়তন।
শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গড়া প্রতিষ্ঠান সুরের ধারার মাসিক শ্রোতার আসর ‘মিলনী’র ১৬তম আয়োজন ছিল গতকাল শুক্রবার। আসরে গতকাল সন্ধ্যায় প্রয়াত বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমকে স্মরণ করা হয়। রবীন্দ্রসংগীতের পাশাপাশি শিল্পীরা পরিবেশন করেন তাঁর গান।
নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার উদাহরণ খুব কম প্রতিষ্ঠান দেখাতে পারে। তবে গতকাল তা দেখিয়েছে সুরের ধারা। শুরুতে শ্রোতাদের শুভেচ্ছা জানালেন সুরের ধারার অধ্যক্ষ রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। জানালেন সুরের ধারা নিয়ে নানা স্বপ্ন আর পরিকল্পনার কথা। শান্তিনিকেতনের আদলে এটি গড়ে তোলার ইচ্ছা তাঁর। তিনি বলেন, সুরের ধারা এমন একটি প্রতিষ্ঠান হবে, যেখানে শিশুরা মনের আনন্দে গান করবে, গানের রস আস্বাদন করবে, প্রকৃতির লালিত্যে তৈরি হবে তাদের মন ও রুচিবোধ।
সংগীত পর্ব শুরু হলো একটি সম্মেলক সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। ‘ফিরে ফিরে ডাক্ দেখি রে’ গানটি পরিবেশন করলেন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বর্ষের শিল্পীরা। এরপর একক পরিবেশনা।
আসরে একক সংগীত পরিবেশন করলেন শিল্পী কনক খান, স্বাতী বিশ্বাস ও স্বপন বিশ্বাস। তাঁদের পরিবেশনায় রবীন্দ্রনাথের ‘কোন আলোতে প্রাণের প্রদীপ’, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি’, ‘তোমার খোলা হাওয়া’, ‘আমার প্রাণের মানুষ’ প্রভৃতি গানের সঙ্গে বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের ‘কোন মিস্তিরি নাও বানাইছে’, বিজয় সরকারের ‘কোন দিনে খুলিবে নৌকা’—এসব গান অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। সমবেত কণ্ঠে ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।
উদীচীর প্রাণবন্ত আবৃত্তি আড্ডা
পঞ্চাশোর্ধ্ব এক দর্শক মিলনায়তনে প্রবেশ করেই প্রশ্ন করলেন, ‘কী হবে এখানে?’ আয়োজকদের একজন বললেন, ‘কবিতা আবৃত্তি।’ মিলনায়তনের চারদিক তাকিয়ে বিস্মিত হয়ে তিনি প্রশ্ন করলেন, ‘কবিতা শুনতে এত মানুষ!’ এরপর কথা না বাড়িয়ে বসে পড়লেন তিনি। মঞ্চ আলোকিত হলো। অতিথি আসাদ চৌধুরী। এরপর আড্ডা। আবৃত্তি। শুক্রবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় উদীচীর কেন্দ্রীয় বিভাগের আয়োজনে এই ‘আবৃত্তি আড্ডা’। শুরুতেই ছিল উদীচীর এক শিল্পীর চিঠিপাঠ। ‘সেজ দিদি’র কাছে লেখা সেই চিঠিতে ছিল শিল্পীর ব্যক্তিজীবনের কিছু সমস্যার কথা। এরপর বুদ্ধদেব বসুর কবিতা আবৃত্তি। আবৃত্তির আগে আসাদ চৌধুরী বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণা করেন।
চোখের বালি চলচ্চিত্রে বিনোদিনী চিঠি লিখেছিল মহেন্দ্রর কাছে। চলচ্চিত্র দেখে সেই চিঠি মুখস্থ করেন ইকবাল আহসান। তা-ই পাঠ করেন তিনি। বিনোদিনী জানতে চেয়েছিল, মহেন্দ্রর কাছে লেখা চিঠির উত্তর কেন পায়নি সে? চিঠি পড়া শুনে আসাদ চৌধুরী বললেন, ‘আমি যদি মহেন্দ্র হতাম, তাহলে বলতাম, বিনোদিনী তুমি চিঠি পাবে কী করে, তোমার জন্য কোনো চিঠিই লিখিনি।’
কবিতা আবৃত্তি, চিঠি পড়া—এর মধ্যে আসাদ চৌধুরীর আহ্বানে একজন গলা ছেড়ে গাইলেন, ‘কৃষ্ণকলি তারেই বলি।’ একের পর এক চলছে আবৃত্তি আর আড্ডা। অংশ নিয়েছেন বেলায়েত হোসেন, সুমিত পাল, সৈয়দ সাইফুল্লাহ, ইকবাল আহসান, শিখা, মৌমিতা, অনিতাসহ অনেকে।
রাশেদ স্মরণে অষ্টম শিল্পকর্ম প্রদর্শনী
বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর চারুকলা বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন রাশেদ। বন্ধুদের সঙ্গে আশুলিয়ায় গিয়ে পানিতে নেমেছিলেন। সাঁতার জানতেন না। রাশেদকে চিরকালের জন্য হারালেন বন্ধুরা। ২০০১ সালের ঘটনা।
শিল্পী রাশেদের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখতে তাঁর বন্ধুরা ২০০২ সাল থেকে প্রতিবছর শিল্পকর্ম প্রদর্শনী করে আসছেন। গতকাল শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমীর চিত্রশালা গ্যালারিতে শুরু হয়েছে রাশেদ স্মরণে অষ্টম শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিল্পী শহিদ কবীর, বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর সভাপতি শামযুয জাহান নূর প্রমুখ। এর আগে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শিল্পীদের সেরা পাঁচজনকে ‘শিল্পী রাশেদ স্মৃতিপদক ২০০৯’ দেওয়া হয়। এবার সেরা শিল্পকর্মের পদক পেয়েছেন শিল্পী এম ডি মাঈনউদ্দিন।
প্রদর্শনীতে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৭২ জন শিক্ষার্থীর আঁকা ২২২টি শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। প্রদর্শনী চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

No comments

Powered by Blogger.