পথশিশুদের সুরক্ষা -অধিকার ও চাহিদার জোগান নিশ্চিত করতে হবে

রাষ্ট্র ও সমাজে পথশিশুরা অত্যন্ত অসহায়। প্রায় সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত তারা। দারিদ্র্য ও সামাজিক অস্থিরতা অজস্র শিশুকে অনিশ্চিত এই জীবনের দিকে দেয়। অভিভাবকহীন এই শিশুদের বেশির ভাগ পথঘাটে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। প্রতিনিয়ত তারা শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু তাদের প্রায় সবাই কারও কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পায় না। সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ বৃদ্ধি পেলেও তা বেশ অপর্যাপ্ত; সামগ্রিক পরিস্থিতিতে তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারছে না। সরকার যদি বিষয়টিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনায় না নেয়, তবে পরিস্থিতি বদলানো কঠিন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেমোগ্রাফিক সার্ভের (বিআইডিএস) তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে তিন লাখ ৮০ হাজার পথশিশু রয়েছে। প্রতিনিয়ত উপেক্ষা ও হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় তাদের; নানা নৃশংসতার শিকার হতে হয়। তাদের জীবন চূড়ান্ত অরক্ষিত। এমন করুণ অবস্থার সুযোগ নেয় স্বার্থান্বেষী মহল। সরলমতি পথশিশুদের প্ররোচনার মাধ্যমে সামাজিক অপকর্ম ও অপরাধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য করে তারা। নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা জড়িয়ে যায়। তাদের প্রতি অন্যায় আচরণ করা সত্ত্বেও অন্যায়কারী পার পেয়ে যায়। শিশু অধিকার রক্ষায় দেশে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ হয় না বললেই চলে। দুঃখজনক বিষয় হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায়ই তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
পথশিশুরা পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শারীরিকভাবে দুর্বল, মানসিকভাবে পশ্চাত্পদ ও আর্থিকভাবে অভাবগ্রস্ত হিসেবে বেড়ে ওঠে। এত বিপুলসংখ্যক শিশুকে এমন মানবেতর অবস্থার মধ্যে বেড়ে উঠতে দিয়ে কোনো উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারা যায় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, খাদ্য ইত্যাদির মতো মৌলিক অধিকারবঞ্চিত অজস্র পথশিশু রেখে কোনো সুস্থ সমাজ তৈরি সম্ভব নয়। অথচ উপযুক্ত পরিবেশ পেলে অসাধারণ কিছু করার সামর্থ্য তাদেরও আছে। জনগণের এই বিশাল অংশের শৈশব অন্ধকারে হারিয়ে যেতে পারে না।
পথশিশুদের নিরাপত্তা বিধান ও জীবনমান উন্নয়নে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। পথশিশুসহ সব শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সমাজের প্রান্তে বসবাসকারী এসব শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.