সারা রাইত নিন্দ পারবার পারি নাই’ by সফি খান,

‘বাবা গো, সারা রাইত নিন্দ (ঘুম) পারবার পারি নাই। একে ঝড়ি (বৃষ্টি) দেওয়ার ডাক, হের উপর নদীর পানির টানে (স্রোতে) বাড়িঘর ভাঙি নিয়া যায়। ছাওয়া-পাওয়ায় সগাই মিলি ঘর সরাছি, গাছ কাটি নিয়া যাই। এলা কোটে ঘর তুলমো জানি না। পানি ছাড়া এলাও প্যাটোত একনা দানাও পড়ে নাই।’
কথাগুলো ধরলা নদীর পারের খোদেজা খাতুনের। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের নন্দ দুলালের ভিটা গ্রামে তাঁর বাড়ি। গত দুই দিনের প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে নদীর ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে খোদেজা খাতুনও একজন।
গতকাল শুক্রবার ওই এলাকায় গিয়ে ভাঙনকবলিত মানুষের আহাজারি দেখা যায়। ঘরবাড়িসহ অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘরবাড়িসহ মূল্যবান জিনিস সরিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে ভুক্তভোগীরা। দিলজন নেছা বলেন, ‘ধরলাত সোমানে পানি আসপার নাগছে। আর বাড়ি, গাছপালা ভাঙি নিয়া যায়। সরবার সময় দেয় না। একনা ঘর বাঁচাইছি। তাক স্কুলের মাঠত নিয়া রাখছি। গরিব মানুষ, জাগা জমি নাই। কোটে ঘড় তুলমো জানি না।’ জগমনের চরের কৃষক তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বন্যার পর অনেক কষ্টে চারা লাগাই। তাও নদীত ভাঙি যাবার নাগছে। পাঁচ বিঘা যদি শ্যাষ হয়া যায়, না খায়া মরা নাগবে।’
পাঁচগাছি ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও একই অবস্থা। কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৪ ঘণ্টায় নদীতে বিলীন হয়েছে। সেখানকার ৫০টি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে এখন নিঃস্ব। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের সড়ক থেকে নদী মাত্র ১০ হাত দূরে। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধটি ভেঙে যেতে পারে। গতকাল সকালে জেলা প্রশাসক আসাদুজামান, উপজেলা চেয়ারম্যান পনির উদ্দিন আহাম্মেদ নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।

No comments

Powered by Blogger.