মৌসুমের শেষ প্রান্তেও ডেঙ্গুর প্রকোপ

অক্টোবরের শেষে এসেও ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। চলতি বছর সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখা যাচ্ছে এই মাসেই। চলতি মাসেই মারা গেছেন ১০৬ জন। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর এখন আর শুধু বর্ষা মৌসুমের রোগ নয়। ধরন বদলে সারা বছর জুড়ে দাপট দেখাচ্ছে। এমনকি শীতেও ছড়াচ্ছে প্রকোপ। আগে রাজধানী ঢাকায় বেশি দেখা দিলেও এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিভাগীয় শহরগুলোতেও। জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কমবেশি মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১লা জানুয়ারি থেকে ২৫শে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণে মারা গেছেন ২৬৯ জন। এখন পর্যন্ত একক বছরে মৃত্যুর সংখ্যা বিচারে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৫৪ হাজার ৭০২ জন। অক্টোবরে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ৭৬৪ জন।

চলতি বছর সর্বোচ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু দেখা যাচ্ছে অক্টোবরে। অক্টোবরের প্রথম ২৫ দিনেই মারা গেছেন ১০৬ জন। এর আগের মাস সেপ্টেম্বরে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আগস্টে ২৭ জন, জুলাইয়ে ১২ জন, জুনে ৮ জন, মে মাসে ১২ জন, এপ্রিলে ২ জন, মার্চে ৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩ জন, জানুয়ারিতে ১৪ জন মারা যান।

কীটতত্ত্ববিদরা আগে থেকেই অক্টোবরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন। সেপ্টেম্বর থেকেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকায় উড়ন্ত মশা মারার দিকে নজর দেয়ার পরামর্শও দেয়া হয়। তবে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো কার্যক্রমের দেখা মেলেনি।

কীটতত্ত্ববিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমি আগেও বলেছিলাম সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এ সংখ্যাটি হঠাৎ করে বাড়েনি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় প্রশাসন এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ অবস্থায় অক্টোবরে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারে।

পুরুষরা ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত হলেও বেশি মারা যাচ্ছেন নারীরা। চলতি বছর এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ নারী। তবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ও ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া নারীদের বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীর মৃত্যু হয়েছে বেশি। ২৫শে অক্টোবর পর্যন্ত মোট নারীর মৃত্যু ১৪৩ জন। যার মধ্যে ২১ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৪৯ জন। এ ছাড়া ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারী ২০ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে। অন্যদিকে, মৃত্যু বেশি হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। উত্তর ও দক্ষিণে আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কাছাকাছি। উত্তর সিটি করপোরেশনে ১১ হাজার ৪৪৯ জন এবং দক্ষিণে ১১ হাজার ৯০ জন। দক্ষিণে মৃত্যু ১৩৩ জন। উত্তরে মৃত্যু হয়েছে ৪৭ জনের। এর পরের অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ, সেখানে আক্রান্ত ৯ হাজার ৮৬৫ জন, মৃত্যু ২৬ জনের।

১লা জানুয়ারি থেকে ২৫শে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ঢাকা বিভাগে মোট আক্রান্ত ৮ হাজার ৮২৭ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত ৯ হাজার ৮৬৫ জন, মৃত্যু ২৬ জনের। বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত ৪ হাজার ৭২৯ জন, মৃত্যু ৩২ জনের। খুলনা বিভাগে আক্রান্ত ৪ হাজার ৬৮৬ জন, যার মধ্যে মারা গেছেন ১৬ জন। ময়মনসিংহ বিভাগে ১ হাজার ৪৮৪ জন আক্রান্ত হলেও মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১৫২৬ জন আক্রান্ত এবং মারা গেছেন ১ জন, রংপুরে ৮৬৩ জন ও সিলেট বিভাগে ১৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই দুই বিভাগে কেউ মারা যাননি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। ওই বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক মাসে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়। ওই সময় ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ৭৯ হাজার ৫৯৮ জন। সেপ্টেম্বরে মারা যান ৮০ জন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.