ঘুমধুমে আওয়ামী লীগ নেতা আজিজের ত্রাসের রাজত্ব by নুরুল কবির
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা ঘুমধুম ইউনিয়ন। সেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ। সেই সুবাদে এলাকার জায়গা দখলসহ বহু অপকর্মের মূলহোতা হিসাবে ঘুমধুমের ত্রাসে পরিণত হয়েছেন চেয়ারম্যান আজিজ। দুই ক্ষমতাকে পুঁজি করে আজিজ ঘুমধুমে তার অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কাছে অসহায় করে তোলেন পুরো ইউনিয়নবাসীকে। অন্যের জমি দখল, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনিয়ম-দুর্নীতি, সীমান্ত চোরাই পণ্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ অসংখ্য অপরাধ জগতে নিজেকে জড়িয়ে কায়েম করেন ত্রাসের রাজত্ব এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। তার অপকর্মের সহযোগী এলাকার ২৬৭ মৌজার হেডম্যান নুরুল হক। আজিজের অবৈধ চোরাই গরু-মহিষের ব্যবসা, প্রত্যয়ন বাণিজ্য, দখল বাণিজ্য, রোহিঙ্গা ভোটার, হত্যাকাণ্ডের মতো সীমান্ত চোরাই বাণিজ্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণসহ পাহাড়সম অভিযোগ এই আজিজের বিরুদ্ধে। জানা যায়, ২০১৪ ও ২০১৯ সালের দুই ইউপি নির্বাচনে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাহাঙ্গীর আজিজ নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট কারচুপির মাধ্যমে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই থেকে তিনি জড়িয়ে পড়েন নানান অপরাধ কর্মকাণ্ডে। এসব অপরাধ কর্মকাণ্ড সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করেন তার ছোট ভাই বারেক আজিজ, মুস্তকিম আজিজ, বোরহান আজিজসহ তাদের সিন্ডিকেটের সদস্যরা। তাদের ভয়ে এলাকায় কারও মুখ খোলার সাহস ছিল না বলেই এসব এতদিন অজানা ছিল। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছে। তুলছেন নানান অভিযোগ এবং উঠে আসছে ভয়ঙ্কর সব তথ্যও। এলাকা ঘুরে আরও উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আজিজ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সরকারি লিজ প্লটের নামে স্থানীয় অসংখ্য মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগ দখলীয় বসতভিটা ও খাসজমি জোরপূর্বক দখল করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিক্রি করে নিঃস্ব করে দিয়েছেন অনেক পরিবারকে। বিনিময়ে তিনি কামিয়েছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের হয়ে উঠেন আস্থাভাজন। সেই কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দৃশ্যমান ছিলেন বাহাউদ্দীন নাসিমের নাম। সেই সুযোগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটিও বাগিয়ে নেন জাহাঙ্গীর আজিজ। চেয়ারম্যান ও সভাপতি দুই ক্ষমতার দাপটে মিয়ানমার থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাই পথে হাজার হাজার গরু-মহিষ এনে তুমব্রু গরু বাজারের ইজারাদারের মাধ্যমে গরুর রশিদ বানিয়ে সারা দেশে পাচার করতো তার নিয়ন্ত্রিত একটি সিন্ডিকেট। আর সেই সিন্ডিকেটের প্রধান হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন তারই আপন ছোট ভাই বারেক আজিজ। সেই সিন্ডিকেট মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে আনা গরু-মহিষের পাশাপাশি মরণ নেশা ইয়াবা, আইস, বিভিন্ন আইটেমের বিদেশি মদ এমনকি স্বর্ণের চালানও এপারে এনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করতো বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আজিজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, চেয়ারম্যান সাহেব আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন অনেক অন্যায় অবিচার করেছে মানুষের সঙ্গে। স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও এই আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান এখনো বহাল তবিয়তে। সকলকে ম্যানেজ করে টিকিয়ে রাখছেন ইউপি চেয়ারম্যানের পদটি। নাইক্ষ্যংছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মান্নান জানান, ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ রতন বড়ুয়া হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ নেই। এনআইডি জালিয়াতি মামলার বিষয়ে সিআইডি আদলতে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আদালত থেকে নির্দেশনা আসলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নাইক্ষ্যংছড়ি বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়া জানান, ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের বিরুদ্ধে এনআইডি জালিয়াতি ও হত্যা মামলা রয়েছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, আদালত বা ডিসি মহোদয় থেকে নির্দেশনা পেলেই তার বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিত্ব বা অপরাধ দমনে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments