মাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদলেন মুশফিক আনসারী by ওয়েছ খছরু
দীর্ঘদিন পর দেখা। এমন পরিবেশে সবার চোখে জল। উপস্থিত স্বজনরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, মা ও ছেলের এই দেখা আবেগময় পরিবেশের জন্ম দেয়। ছেলের জন্য অস্থির ছিলেন মা। আর মায়ের দেখা পেতে অস্থির ছিলেন মুশফিকুল ফজল আনসারীও। ফলে ১০ বছর পর দেখায় তাদের চোখে কেবলই জল। বেশি আবেগাপ্লুত ছিলেন মুশফিক। বার বার ফিরে ফিরে মাকেই দেখছিলেন। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। দুপুরের দিকে বিএনপি’র কয়েকজন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন মুশফিকুল। এ সময় সেখানে দুই বোন সহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে; উপস্থিতির মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন বিএনপি’র নেতাকর্মী। ছিলেন সিলেটের সাংবাদিকরাও। বিমান থেকে নামার পরপরই ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন মুশফিকুল। একে একে সিলেট বিএনপি’র নেতারা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী গিয়েছিলেন সাংবাদিক মুশফিককে বরণ করতে। দেখা হতেই করমর্দন ও কোলাকুলি করেন। জেলা ও নগর বিএনপি’র নেতারা তাকে রিসিভ করে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন; প্রায় ১০ বছর আগে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। শেষ বার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে বাসায় মায়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ভার্চ্যুয়ালি কথা হলেও সরাসরি দেখা হয়নি। সাংবাদিক হিসেবে যখন হোয়াইট হাউস ও স্টেট ডিপার্টমেন্টে ভূমিকা রাখছিলেন তখন দেশে থাকা মা মজমুনা বেগম চৌধুরী, বোন আফিয়া সুলতানা, খালেদা আনসারীকে বার বার গোয়েন্দা জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। প্রতি মাসেই একবার গোয়েন্দারা তার বাসায় আসতো।
নানা ধরনের প্রশ্নবাণে মা ও বোনদের জর্জরিত করতো। পুরুষশূন্য বাসায় অনেক সময় গায়ের জোরে ঢুকে পড়তো। অনেক সময় হুমকির সুরেও কথা বলতো। স্বজনদের মতে; সিলেটের গোয়েন্দাদের এই তৎপরতার কারণ ছিল দেশে থাকা স্বজনদের মাধ্যমে মুশফিকুল ফজল আনসারীকে চাপের মুখে রাখা। কিন্তু শত চাপেও তিনি মাথা নত করেননি। বিগত সরকারের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। এ কারণে সাংবাদিক মুশফিকুলও দেশের মানুষের কাছে আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেন। তার এই ভূমিকার কারণে এখন পতিত সরকারের পতনের অন্যতম নায়ক হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে তাকে। সিলেটে এসেই মায়ের সঙ্গে দেখা করার আগে সিলেটের প্রাচীন গোরস্থান হযরত মানিকপীর (রহ.) কবরস্থান জিয়ারতে যান মুশফিকুল। সেখানে শায়িত আছেন তার দাদা, চাচা সহ পরিবারের স্বজনরা। সেখানে তিনি আত্মীয়স্বজন ও বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নিয়ে কবর জিয়ারত করেন। সাংবাদিক মুশফিকুলের বড় বোন আফিয়া সুলতানার স্বামী সিলেটের সাংবাদিক ও সাহিত্যিক সেলিম আউয়াল।
সিলেটে ফেরার পর থেকে তাকে সব সময় সঙ্গ দিচ্ছেন তিনি। সংবাদ সংস্থা বাসসের এই সাংবাদিক মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ১০ বছর আগে যেমনি সাদামাটা ছিলেন মুশফিকুল, এখনো তেমনটিই রয়েছেন। সিলেটে তাকে থাকার জন্য উন্নত সুযোগ-সুবিধায় সমৃদ্ধ একটি রিসোর্ট বুকিং দিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু মুশফিকুল সেই রিসোর্টে উঠবেন না বলে জানিয়েছেন। মায়ের কাছে নিজ বাসাতেই তিনি থাকছেন। এ ছাড়া, পাশের বাসায় সবাইকে নিয়ে এক সঙ্গে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেখানেও যাননি তিনি। মাকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাসায় বসেই দুপুরের খাবার খেয়েছেন। সিলেটে ফেরা সাংবাদিক মুশফিক ফজল আনসারী খুব দ্রুতই নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের বাসায় যাবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া, সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
গতকাল শনিবার বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী এক সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন; সিলেটে আমার জন্মভূমিতে আসতে পেরেছি সেজন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। যারা বিমানবন্দরে কষ্ট করে এসেছেন সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিপ্লব ও বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যারা তাদের নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত অবস্থায় আছেন তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন- বিশ্বে আমরা একটি সমৃদ্ধ, বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় সক্ষম হবো। আমি মনে করি যদিও আমি পলিসি লেভেলের কেউ না তবুও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে পারবো।
No comments