নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বিদ্যমান আইন সংস্কারের প্রস্তাব -ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের পলিসি ডায়ালগ

বিদ্যমান আইন দিয়ে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনরা। নির্বাচন কমিশন নিয়োগে বিদ্যমান আইন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ বিষয়ে শনিবার এক সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ মত দেন। রাজধানীর একটি হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এ সংলাপের আয়োজন করে।

নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু’ উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘যত ভালো কমিশন গঠন হোক ভালো নির্বাচন করতে হলে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজন।’ এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য তিন স্তরের একটা সার্চ কমিটির প্রস্তাব করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটির প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘দায়মুক্তির বিধানযুক্ত করে ২০২২ সালের প্রণীত আইনে যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এর আগের নির্বাচন কমিশন পোস্ট অফিসের ভূমিকা পালন করেছেন, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। রাজনৈতিক ঐক্যমতের ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ইসি গঠনে তার কমিটি প্রস্তাব করবে।’

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের মুখ্য পরিচালক ড. আব্দুল আলিম উপস্থাপিত পলিসি ব্রিফে (নীতি প্রস্তাবনা) বলেন, ‘যেকোনো নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকেই শুরু হয়। স্বাধীন কমিশন গঠনে তিনি এসময় সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেন।’

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসহ আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিবষদ, গণফোরাম, গণসংহতি আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএমসহ ১০ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও আলোচনায় অংশ নেন।

সংলাপে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে অংশ নেন, আরিফুল ইসলাম আদিব মো. মিরাজ মিয়া ও নাহিদা সারওয়ার চৌধুরী সামান্তা। তাদের বক্তব্য হলো, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য না থাকলে শুধু নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব না। কমিশনকে ডি ফ্যাক্টো অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ পাওয়ার দেয়া হলে নির্বাচন পরিচালনা সহজ হবে। ছোট বড় সকল দলের মতামতকে সমান গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন তারা।

গণ অধিকার পরিষদের প্রেসিডেন্ট নূরুল হক নূর সাত শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি নিয়ে সাত সদস্যের সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন। এছাড়াও তিনি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং আনুপাতিক নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান নবীন প্রবীনের সমন্বয়ে আগামীর নির্বাচন কমিশন দেখতে চান। আর, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে পাওয়া নাম নিয়ে আবার রাজনৈতিক দলের কাছে ফিরে যেতে হবে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো এর সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সবার আগে প্রয়োজন বিদ্যমান আইনটি বাতিল করা। তিনি আরও বলেন, এমনভাবে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া প্রণয়ন করতে হবে যাতে কোনো সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, স্থায়ী সমাধান এখন চিন্তা না করে কি করে পরবর্তী নির্বাচন ভালো করা যায় সেই পদক্ষেপ এখন ভাবতে হবে।  

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, বিচারবিভাগকে কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন কমিশন গঠনে যুক্ত করা ‍উচিত হবে না। সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিকদল, সুশীল সমাজ ও ছাত্র প্রতিনিধির সমন্বয়ে সার্চ কমিটি গঠনের তিনি প্রস্তাব করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রফেসর আশরাফ আলী আকন্দ, বিগত কমিশনকে দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতার দায়ে আইনের আওতায় আনার তাগিদ দেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা নয়, বাংলাদেশের বাস্তবতার আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. রওনক জাহান। সংলাপে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি ডানা এল. ওল্ডস।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.