ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ধারণ করে দেশ গড়ার অঙ্গীকার
বিপ্লবে শাহাদাতবরণকারী সকল শহীদ ও ছাত্র-জনতার আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং দোয়া মোনাজাতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু করা হয়।
এ সময় বক্তব্য রাখতে গিয়ে লে. কর্নেল (অব.) মোশারফ জানান, সমপ্রতি ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা অগ্রভাগে ছিল। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা গণঅভ্যুত্থানে দুইভাবে ভূমিকা রেখেছেন। অবসরপ্রাপ্তরা সরাসরি মাঠে নেমেছেন এবং চাকরিরতরা চূড়ান্ত সময়ে অবদান রেখেছেন। আবু সাইদ হত্যার পর সেনাবাহিনীর সর্বস্তরের সদস্য মাঠে নামেন। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে তারা প্রতিবাদ ও জনসংযোগ শুরু করেন। ১৮ই জুলাই মিরপুর ডিওএইচএস থেকে প্রতিবাদের সূচনা হয়। এটাই সর্বপ্রথম সশরীরে আন্দোলন।
তিনি বলেন, সরকার পতনের এক মাস পার হলেও এখনও আমাদের বিষয়ে জানার আগ্রহ কারও নেই। আমাদের দাবি আদায়ে কোর্টে যাওয়ার অধিকারও নেই। অন্যান্য সেক্টরের মতো মেধাহীন পদোন্নতির মাধ্যমে এই সেক্টরকেও ধ্বংস করা হয়েছে। এ নিয়ে আগে থেকেই সশস্ত্র বাহিনীতে ক্ষোভ ছিল।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিমুল গনি (অব.) বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ গড়ার নতুন সুযোগ হয়েছে। কাঙ্ক্ষিত দেশ গড়তে দেশপ্রেমিক, নিবেদিত মানুষ এবং সঠিক তদারকি প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বেসরকারি অফিসার, প্রবাসী এবং বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্টদের দিয়ে সংস্কার কাজ করা সম্ভব। সশস্ত্র বাহিনীতে বিভিন্ন খাতে দক্ষ অবসরপ্রাপ্ত ৪ হাজার জনবল আছে।
অপরাধীদের বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত সরকার সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীকেও ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। সশস্ত্র বাহিনীসহ সব জায়গায় মেধাহীন নিয়োগ দিয়ে নৈরাজ্য তৈরি করেছে। অনেক সংকট ও ৪০ লাখ মামলা রেখে গেছে। এখনো প্রতি-বিপ্লবের জন্য টাকা ছড়ানো হচ্ছে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর ড. শহীদুজ্জামান, ডা. জাহেদ উর রহমান। সভা পরিচালনা করেন লে. কর্নেল (অব.) মনীষ দেওয়ান।
অধ্যাপক মাহাবুবউল্লাহ বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবে গুলি না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে সেনাবাহিনী, তা ইতিহাসে বিরল। দেশে বড় ধরনের কোনো বিশৃঙ্খলার সুযোগ নেই। তবে ছোট ছোট গোলযোগ তৈরি করে অস্থিরতা তৈরির ষড়যন্ত্র করছে আওয়ামী লীগ। তাই দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ড. শহীদুজ্জামান বলেন, সেনাবাহিনীর প্রতিপক্ষ বানিয়ে পুলিশকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিলেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে জঙ্গি কায়দায় দেশে স্বৈরশাসন ও নির্বাচন পরিচালনা করেছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ডা. জাহেদ উর রহমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের ও বিনির্মাণে জাতীয় সংহতি উন্নয়ন এবং লেজুড়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আসার ওপর গুরুত্ব দেন।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে মুক্ত আলোচনার সময় সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচ্যুত ক্ষুব্ধ কয়েকজন কর্মকর্তা বক্তব্য দেয়ার জন্য হইচই শুরু করেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বক্তব্য দিতে এসে গ্রেপ্তার বরখাস্তকৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, বরখাস্ত রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোয়াহেল, বরখাস্ত প্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমানদের ব্যাপক সমালোচনা করেন। তাদের জন্যই প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) কার্যালয় আয়নাঘর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে ও সেনাবাহিনীর নাম ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। নতুন বাংলাদেশে তাদের সবার বিচার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
No comments