বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন না কাজী সালাউদ্দিন

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন না কাজী সালাউদ্দিন। গতকাল বাফুফে ভবনে এসে এই ঘোষণা দেন ২০০৮ থেকে বাফুফের সভাপতি পদে থাকা সাবেক এই ফুটবলার। আগামী ২৬শে অক্টোবর বাফুফের পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা। বাফুফে ভবনে সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি চার মেয়াদে দায়িত্বে ছিলাম। সেজন্য নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করি, যে এমন সুযোগ আমার জীবনে এসেছে। এখন বাফুফের যে নির্বাচন আসছে, ২৬ অক্টেবরে; আমি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো না। এটা আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এটা জানানোর জন্য এসেছি।’
২০০৮ সালে প্রথম দফায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তারপর থেকে তিনি এখনও সেই একই পদে আছেন। তার আসন পরিবর্তন না হলেও ফুটবলে কোনো উন্নতি হয়নি। বরং এই ১৬ বছরে দেশের ফুটবলের চরম অবনতি হয়েছে। তিনি যখন বাংলাদেশের ফুটবলের দায়িত্বনেন তার আগের বছর অর্থাৎ ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ফুটবলের বিশ্ব র‌্যাঙ্কিং ছিল ১৫১, এখন হয়েছে ১৮৪। এক পর্যায়ে এটা ১৯৭-তে গিয়ে ঠেকেছিল। ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সংগঠন সালাউদ্দিনের পদত্যাগের দাবি তোলে । দুটি সংগঠন দুই দফায় বাফুফের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করে। এরপর সংগঠন দুটি সালাউদ্দিনকে পদত্যাগের আলটিমেটামও দেয়। তবে সেই আলটিমেটামকে গুরুত্ব না দিয়ে গত ১৩ই আগস্ট সালাউদ্দিন জানিয়েছিলেন, তিনি পদত্যাগ তো করবেনই না, বরং আবার বাফুফের সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন। সেই ঘোষণার এক মাস পর নিজের অবস্থান বদলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানালেন সালাউদ্দিন। ১ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন নির্বাচন পেছানোর দাবির বিষয়ে বলেন, ‘২৬শে অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন পেছানোর দাবি ছিল। বাফুফে ফিফাকে চিঠি লিখলেও বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি নির্বাচন পেছানোর আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। ফিফা একটি চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, একদিনও নির্বাচন পেছানো যাবে না।’ ২৬শে অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন হলে কিছুদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। সভাপতি পদে মনোনয়ন সংগ্রহ না করলেই হতো। এত আগে ঘোষণা দেওয়ার কারণ জানিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘কোনো কনফিউশন যাতে না হয় এজন্য (আগেভাগে) ঘোষণা।’   ২০০৮ সালের এপ্রিলে কাজী সালাউদ্দিন বাফুফে সভাপতি হিসেবে প্রথম নির্বাচিত হন। এরপর টানা চার মেয়াদে সভাপতির পদে ছিলেন তিনি। ১৬ বছর দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকদের সঙ্গে লম্বা সময় কাটাতে হয়েছে। তাই পরবর্তী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণার সময় সাংবাদিকদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন আপনাদের সঙ্গে নানা বিষয় আন্ডারস্ট্যান্ডিং-মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। এটা চলার পথে হতেই পারে। আমি কিছু মনে রাখবো না, আশা করি আপনারাও রাখবেন না।’
বিদায় বেলায় বাংলাদেশ সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তিনি খানিকটা তৃপ্ত। এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চার টার্ম বাফুফে সভাপতি হিসেবে কাজ করেছি। এজন্য আমি সৌভাগ্যবান। আমার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি নির্বাচন না করার। কিছুদিন আগে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ছেলেরা। এজন্য ভালো লাগা কাজ করছে।’ বাফুফে সভাপতি পদ ছাড়ার দিন দেশের কিংবদন্তি ফুটবলার ফুটবল ও বাফুফের পথ ভালো চলুক সেই কামনা করেছেন।
২০০৮ সালে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমিন আহমেদ চৌধুরীকে ৬২-৪৯ ভোটে হারিয়ে প্রথমবার বাফুফে সভাপতি হন সালাহউদ্দিন। এর পর ২০১২ সালে আবার সালাহউদ্দিন সভাপতি নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েন, তবে শেষ পর্যন্ত কামরুল আশরাফ খানকে (৫০ ভোট) হারিয়ে বাফুফেতে নিজের সিংহাসন ধরে রাখেন সালাহউদ্দিন (৮৩ ভোট)। ২০২০ সালের নির্বাচনে সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বাফুফের প্রাক্তন সহসভাপতি ও সাবেক ফুটবলার বাদল রায় এবং সাবেক ফুটবলার ও কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। সেই নির্বাচনে ৯৪ ভোট পেয়ে আবার জয়ী হন সালাহউদ্দিন। অসুস্থতার কথা বলে প্রথমে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিয়ে বাদল রায় পান ৪০ ভোট, মানিক পান ১ ভোট।
বাফুফে থেকে সালাহউদ্দিনের সরে যাওয়ার দাবি গত কয়েক বছরে প্রবল হয়ে উঠে। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গত বছর এপ্রিলে বাফুফের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় ফিফা। বাফুফের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম দুই বছর নিষিদ্ধ হন। বাফুফের অর্থ কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে সিনিয়র সহসভাপতি সালাম মুর্শেদীকে ফিফা ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করে। সালাম অবশ্য রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এর আগে প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়ে অস্বচ্ছতার নানা প্রশ্ন তুলে নির্বাহী কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক ফুটবলার আরিফ হোসেন মুন।
সালাউদ্দিন সরে যাওয়ায় নিশ্চিত ভাবেই নতুন সভাপতি পাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন ভাবে এই পদের জন্য আলোচনায় আছেন বাফুফের সাবেক সহসভাপতি তাবিথ আউয়াল।
mzamin

No comments

Powered by Blogger.