জনমত জরিপ, অভিজ্ঞদের মত: বিতর্কে জিতেছেন কমালা
বিতর্কের পর দর্শকদের ওপর সিএনএন জরিপ করেছে। তাতে দেখা গেছে, জয়ী হয়েছেন কমালা হ্যারিস। তাকে সমর্থন করেছেন শতকরা ৬৩ ভাগ মানুষ। আর ট্রাম্পকে জয়ী মনে করছেন শতকরা ৩৭ ভাগ। আরেকটি জরিপ নিবন্ধিত ভোটারদের ওপর চালিয়েছে ইউগভ। তাতে দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষ কমালা হ্যারিসকে জয়ী বলে মত দিয়েছেন। ট্রাম্পকে সমর্থন করে রক্ষণশীল টেলিভিশন ফক্সনিউজ। তাদের নিউজেও বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন কমালা। প্রার্থীদের পারফরমেন্সের ওপর ভিত্তি করে ভোটাররা সিদ্ধান্ত পাল্টাবেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়। অনলাইন সিএনএন, বিবিসি, আল জাজিরা সহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই বিতর্কের চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। আল জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, কমালা হ্যারিস কি আসলেই জিতেছেন, নাকি ট্রাম্পের দুর্বলতাই তাকে বিজয়ী করে তুলেছে? এ ব্যাপারে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ট্রাম্পের দুর্বল জায়গাগুলোতে খোঁচা দিয়ে সাফল্য পেয়েছেন কমালা হ্যারিস। আবার কেউ বলছেন, ট্রাম্পকে বিচলিত করে দেয়ার কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন কমালা। তা করতে গিয়ে তিনি ভোটারদের নিজের নীতিমালা কী হবে, সে সম্পর্কে খুব বেশি কিছু বলতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের হফস্ট্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টোমেকা এম রবিনসন। তিনি বলেন, বিতর্কে জিতেছেন কমালা। তিনি খুব সহজেই জিতেছেন এমন নয়। ট্রাম্প সম্পর্কে তার মত হলো, রিপাবলিকান এ নেতা বিভিন্ন বিষয়ে নিজের অবস্থানে অটল থাকতে পারেননি। তিনি মনে করেন, অবৈধ অভিবাসী এবং প্রজনন বিষয়ক (গর্ভপাতের অধিকার) একই ধরনের আক্রমণাত্মক বক্তব্য না দিয়ে ট্রাম্পের উচিত ছিল প্রেসিডেন্ট হলে তার নীতিমালা কী হবে, তা নিয়ে কথা বলা। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণমাধ্যম বিষয়ক অধ্যাপক ট্যামি আর ভিজিলও বলেছেন, ট্রাম্পের দুর্বলতাগুলোকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়েছেন কমালা। তবে তিনি তার নীতিমালা সংক্রান্ত পরিকল্পনাগুলো সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। ভিজিল বলেন, হ্যারিস বিতর্কে জিতেছেন। কারণ, তিনি ভালো করেই জানতেন যে ঠিক কোন জায়গায় খোঁচা দিলে ট্রাম্প তার চিরাচরিত রূপে নিজেকে প্রকাশ করতে শুরু করবেন। তিনি যা বলেন, তা খুব কম সময়েই সত্য হয়। তিনি চান কথাগুলোকে দর্শকরা আবেগ দিয়ে বিবেচনা করুক, যুক্তি দিয়ে নয়। মঙ্গলবার রাতেও তিনি একই কাজ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ আবার আগের বিতর্কে ট্রাম্পের আচরণের সঙ্গে মঙ্গলবার রাতের বিতর্কে তার আচরণের তুলনা করছেন। আগের বিতর্কে ট্রাম্পের মুখোমুখি হয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে ট্রাম্পের কাছে বিতর্কে ধরাশায়ী হওয়ার পর বাইডেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নিক বিউচ্যাম্প আল জাজিরাকে বলেন, প্রথম বিতর্কে বাইডেন নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে এনেছিলেন। ট্রাম্প ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করে, শান্ত থেকে এবং বেশির ভাগ সময় নিজের বার্তা দেয়ার মধ্যদিয়ে কাজটি আরও সহজ করে তুলেছিলেন। অপরদিকে কমালা-ট্রাম্প বিতর্কে কমালা একনাগাড়ে ট্রাম্পকে খোঁচা দিচ্ছিলেন, বিদ্রূপ করছিলেন এবং ছোটখাটো অপমান করে যাচ্ছিলেন। আর এতে ট্রাম্প কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তিনি ক্রমাগত রেগে যেতে থাকেন এবং অসংলগ্ন আলোচনা করতে থাকেন। কমালা সম্পর্কে বিউচ্যাম্প বলেন, তিনি (কমালা) নিজের সম্পর্কে, নিজের মূল্যবোধ সম্পর্কে খুব একটা স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি। বরং তিনি ট্রাম্পকে বেসামাল করে দেয়ার চেষ্টাতেই ব্যস্ত ছিলেন।
মিথ্যা নিয়ে ট্রাম্পের কিছু আসে যায় না:
সত্যতা যাচাই সংক্রান্ত সংস্থাগুলো ট্রাম্পকে ভুল প্রমাণের মতো অনেক তথ্য পেলেও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, বিতর্কে কে জিতেছেন, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ভুল এবং অযৌক্তিক সব দাবি করেন, তা নতুন কিছু নয়, তা অনেক আগেই প্রমাণিত। বরং তার এসব কথাবার্তার কারণে অন্য রাজনীতিকদের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই প্রার্থীর কাছ থেকে দুই ধরনের আচরণ যখন আশা করা হয়, তখন বিতর্কের ফলাফল নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে যায়। উইলিয়ামস কলেজের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক স্টিভেন ফেইন বলেন, যখন একজন প্রার্থীর কাছ থেকে সত্য কথা শোনার প্রত্যাশাই করা হয় না, আবার অন্য প্রার্থীর কাছ থেকে নীতিমালা বিষয়ে স্পষ্টবাদী হওয়ার মতো প্রচলিত মানদণ্ড পূরণের আশা করা হয়, তখন একটি বিতর্ককে বস্তুনিষ্ঠভাবে মূল্যায়ন করা সহজ নয়। মঙ্গলবার রাতে কমালার বিরুদ্ধে ট্রাম্প যেসব মিথ্যা কথা বলেছেন, সেগুলো উল্লেখ করে ফেইন বলেন, ‘সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা মানুষেরা বলেন, তারা দুই প্রার্থীর মধ্যে ভিন্নতা দেখেন না। কারণ, হ্যারিস তার নীতিমালা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। এটা আপেলকে কমলার সঙ্গে তুলনা না করে ওয়াশিং মেশিনের সঙ্গে তুলনা করার মতো হয়ে যায়।’
No comments