গল্প- ঘরে ফেরা by মিলি জাফতা
অনুবাদ : মেহবুব আহমেদ।
বাস
থামতেই যাত্রীরা সব হুড়মুড়িয়ে নেমে পড়ল। সেদিন শুক্রবার, সপ্তাহের শেষ,
মাসের শেষ, বছরেরও শেষ, আর উইন্ডহিক থেকে উত্তরের এই অফুরন্ত পথে কি গরম!
এবার আমি আগের মতো তাড়াহুড়ো করলাম না, বাস খালি না হওয়া পর্যন্ত বসেই
রইলাম। তারপর মালপত্র গুছিয়ে নিয়ে দরজার দিকে এগোলাম। জানালা দিয়ে চোখে পড়ল
মারিয়া ঠেলেঠুলে এগিয়ে আসছে আমার স্যুটকেস দুটো ধরার জন্যে।
বাস থেকে নামতেই গায়ে লাগল শেষ বিকেলের তাপ। বাইরের এই উষ্ণতা আর বাসের ভেতরকার মানুষের শরীরের তাপ আলাদা। ঘাম আর বেশি মশলার ফাস্টফুডের গন্ধ এখন মনে হলো দূরস্মৃতি।
এখানে নাক ভরে পেলাম কড়া রোদে মেলে রাখা মাংসের সুগন্ধ। গাছের ডাল আর অস্থায়ী সব দোকানে ঝুলিয়ে রাখা মাংসের ওপর চকচকে সবুজ রঙের মাছিগুলো চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে বসছিল। ঘুরে ঘুরে বসছিল, চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে বসছিল – সেই গুনগুন শব্দও আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। ক্রেতা-বিক্রেতারা ব্যস্তসমস্ত হয়ে দিনের শেষ বেচাকেনা সেরে নিচ্ছিল। প্রত্যাশায় ভরা ছিল বাতাস।
মারিয়া নিচু হয়ে দায়সারা গোছের একটা চুমু দিলো। তারপর হেসে বড় স্যুটকেসটা তুলে মাথায় চাপিয়ে আমার আগেই হাঁটতে শুরু করল। অন্য স্যুটকেসটা তুলে মাথায় বসিয়ে আমি দুহাত কোমরে রেখে নিজেকে স্থিত করে নিলাম, তারপর ওর পেছনে চলতে শুরু করলাম। দেখলাম মেরুদন্ড সোজা করে মারিয়া দৃপ্ত ভঙ্গিতে মাথা উঁচিয়ে দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছে। অদমিত মানবসত্তা কত সুন্দর। কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল আমার; কিন্তু প্রাণান্ত চেষ্টা করেও শব্দ জোগাতে পারলাম না। ‘মাথায়’ কতরকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল কিন্তু মুখ ছিল বাকরুদ্ধ এবং শূন্য। সুতরাং অচেনা মানুষটি – আমারই কন্যা – আর আমি নীরবে হেঁটে চললাম।
তো এই হলো ঘটনা। কী আশা ছিল আমার? সারা গ্রাম ভেঙে চলে আসবে তার বহুকালের হারানো মেয়ের ঘরে ফেরা উদযাপন করতে? কতদিন হয়েছে? চল্লিশ বছর? প্রায় চল্লিশ তো হয়েছেই। কীভাবে হারিয়ে ফেলেছি হারানো সময়? সময়ের হিসাব রাখব সে- আশা কি করা যায়, যখন বিদেশবিভুঁইয়ে, নিজেকে কতদিনে কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারছি কেবল সেটাই ছিল সময়ের মাপকাঠি? আমি বীজ বুনেছি কিন্তু চারা গজাতে দেখার সুযোগ হয়নি, সন্তান ধারণ করেছি – তাদের বড় হতে দেখা হয়নি কারণ আমি তখন এক বিজাতীয় ভাষায় নিজেকে বোধগম্য করে তোলার চেষ্টা করছি, শিখছি কীভাবে ইলেকট্রিক কেটলি ব্যবহার করতে হয়, কখন কীভাবে স্টোভ নেভাতে হয়, বুঝতে হয়েছে অচেনা কাউকে দরজা খুলে দিতে হয় না আর আমি সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সম্ভাষণ করতে পারি না।
সামনের দীর্ঘ ধুলাওড়া পথটা না দেখে চলার চেষ্টা করছিলাম তবে বিশেষ করে দেখার মতো কিছু ছিলও না। সব মনে হচ্ছিল নিষ্ফলা আর শূন্য। গাছ না, ঘাস না, চারদিকে কেবল কমলাটে বাদামি রঙের অগোছালো জমি। অস্তমান সূর্যরশ্মি যেন তাতে সোনালি আভা দিয়েছে। আমরা দুজন মালপত্র মাথায় নিয়ে সরু রাস্তাটা ধরে পরপর হেঁটে চলেছি – অস্তমান সূর্যের বিপরীতে আমাদের ছায়া পড়েছে – নিশ্চিত জানি, এ-দৃশ্যের সুন্দর একটা ছবি হতো। সেটা ডিসেম্বর মাস – তখন ওরকম বড় একটা ছবি দেখেছিলাম, ছবিটা জিরাফের। মনে আছে, ছবিটা দেখতে দেখতে একটা মুহূর্তে বৃষ্টিভেজা মাঠের গন্ধের জন্য আকুল হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু আমি তখন গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে সোয়াকপমন্ডে আছি, তিনি সেখানে পরিবার নিয়ে গিয়েছেন বিশ্রামের প্রয়োজনে। তখন ছুটির সময়, পরিবারের সঙ্গে কাটাবার সময়; কিন্তু আমি আমার পরিবারের সঙ্গে ছিলাম না, আর আমার সারাটা বছর ওভাবেই কেটে গেছে। ওভাবেই কেটেছে আমার জীবনের অধিকাংশ ভালো সময়।
এখন সেসব পেছনে ফেলে এলাম। আমি ঘরে ফিরছি। বহু বছর আগে যে-পথে হেঁটে গিয়েছিলাম, সে-পথেই ফিরছি। কেবল তখন আমি সতেরো বছরের এক মেয়ে আর আমার দৃষ্টি ছিল সামনে। চলে গিয়েছিলাম এক কিশোরী মেয়ে – এই চল্লিশ বছরে তিনটি সন্তানের মা হয়েছি, বারদুয়েক গ্রামে এসেছি – এখন ঘরে ফিরছি এক বৃদ্ধা।
আমার অপরিচিত ওই মেয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল, তারপর ঘুরে জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে তাকাল আমার দিকে। বুঝলাম একটা উত্তর বা কোনো এক ধরনের ইশারার অপেক্ষা করছে ও। এমনভাবে চিন্তায় হারিয়ে গিয়েছিলাম যে, ও কিসের অপেক্ষা করছে ধারণা করতে পারছিলাম না। অবশ্য আমার সন্তানরা কখন কী চায় সে-ধারণা তো আমার ছিল না। আবার ও শান্তস্বরে প্রশ্নটা করল, ওকি বেশি জোরে হাঁটছে, আমার কি তাতে অসুবিধে হচ্ছে। ঈশ্বর আমার – এত মায়া। অন্তত একজন সত্যিই জানতে চাইছে আমার তাল মিলিয়ে, চলতে অসুবিধে হচ্ছে কি-না, আমাকে বলছে না আরো দ্রুত হাঁটতে, বলছে না আমার ঘরে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ, বলছে না আরো ভোরে ঘুম থেকে উঠতে, কাজে আরো মনোযোগী হতে, কুকুরটাকে স্নান করাতে … আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। জলে ভরে গেল আমার দুটো চোখ, গলা বুজে এলো কিন্তু জেগে উঠল আমার প্রাণ। অপরিচিত ওই মেয়ে মাথা থেকে স্যুটকেসটা মাটিতে নামাল। তারপর আমারটা ধরে নামিয়ে ওটার পাশেই রাখল।
আস্তে বলল, ‘একটু জিরিয়ে নিই আমরা।’ বাক্স দুটোর ওপর পাশাপাশি বসার পর বলল, কী যে ভালো হয়েছে, তুমি বাড়ি ফিরেছ।’
এরপর একেবারে চুপচাপ বসে রইলাম আমরা।
বাতাসে কেবল ঝিঁ-ঝিঁ পোকার শব্দ। এত সুখ, এত শান্তি আমি কখনো পাইনি। ওই অপরিচিতার দিকে তাকিয়ে আমারই কন্যাকে দেখলাম। জানলাম আমি বাড়ি ফিরে এসেছি। আমি অযাচিত নই। আমার গর্ভজাত ফল আর আমি একত্রিত হয়েছি। আমারই শরীরে জন্মেছিল এই ফল। নিজের বিধ্বস্ত, বিকৃত শরীরটার দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর কথা মনে হলো – কত সুন্দর সব ফুল ফোটে এর মাটিতে।
উঠে পড়ে মারিয়া বলল, ‘আমাদের যেতে হবে, সবাই অপেক্ষা করে আছে।’ ‘তুমি আগে চলো, তোমার সুবিধামতো এগোও, আমি তোমার পেছনে থাকব।
এবার আমি মেরুদন্ড সোজা রেখে, দৃষ্টি সামনে প্রসারিত করে ওই সরুপথে মারিয়ার আগে আগে চলতে শুরু করলাম। তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে।
---------
লেখক-পরিচিতি
মধ্য-পঞ্চাশের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের পোর্ট এলিজাবেথে মিলি জাফতার জন্ম। ইউনিভার্সিটি ও হস্টেল ম্যাগাজিনের জন্য তাঁর লেখালেখির শুরু। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর ‘Home Coming’ বা ঘরে ফেরা গল্পটি প্রথম প্রকাশিত রচনা। তিনি ফিল্মের জন্য আরেকটি ‘Home Coming’ লিখেছেন, কিন্তু তার বিষয়বস্ত্ত আলাদা। তিনি কবিতাও লিখেছেন। ১৯৯০ সালের স্বাধীনতার পর তিনি নামিবিয়া প্রজাতন্ত্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং রাজধানী উইন্ডহিকে বসবাস করছেন, কাজও করছেন।
বাস থেকে নামতেই গায়ে লাগল শেষ বিকেলের তাপ। বাইরের এই উষ্ণতা আর বাসের ভেতরকার মানুষের শরীরের তাপ আলাদা। ঘাম আর বেশি মশলার ফাস্টফুডের গন্ধ এখন মনে হলো দূরস্মৃতি।
এখানে নাক ভরে পেলাম কড়া রোদে মেলে রাখা মাংসের সুগন্ধ। গাছের ডাল আর অস্থায়ী সব দোকানে ঝুলিয়ে রাখা মাংসের ওপর চকচকে সবুজ রঙের মাছিগুলো চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে বসছিল। ঘুরে ঘুরে বসছিল, চক্রাকারে ঘুরে ঘুরে বসছিল – সেই গুনগুন শব্দও আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। ক্রেতা-বিক্রেতারা ব্যস্তসমস্ত হয়ে দিনের শেষ বেচাকেনা সেরে নিচ্ছিল। প্রত্যাশায় ভরা ছিল বাতাস।
মারিয়া নিচু হয়ে দায়সারা গোছের একটা চুমু দিলো। তারপর হেসে বড় স্যুটকেসটা তুলে মাথায় চাপিয়ে আমার আগেই হাঁটতে শুরু করল। অন্য স্যুটকেসটা তুলে মাথায় বসিয়ে আমি দুহাত কোমরে রেখে নিজেকে স্থিত করে নিলাম, তারপর ওর পেছনে চলতে শুরু করলাম। দেখলাম মেরুদন্ড সোজা করে মারিয়া দৃপ্ত ভঙ্গিতে মাথা উঁচিয়ে দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছে। অদমিত মানবসত্তা কত সুন্দর। কিছু বলতে ইচ্ছে করছিল আমার; কিন্তু প্রাণান্ত চেষ্টা করেও শব্দ জোগাতে পারলাম না। ‘মাথায়’ কতরকম চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল কিন্তু মুখ ছিল বাকরুদ্ধ এবং শূন্য। সুতরাং অচেনা মানুষটি – আমারই কন্যা – আর আমি নীরবে হেঁটে চললাম।
তো এই হলো ঘটনা। কী আশা ছিল আমার? সারা গ্রাম ভেঙে চলে আসবে তার বহুকালের হারানো মেয়ের ঘরে ফেরা উদযাপন করতে? কতদিন হয়েছে? চল্লিশ বছর? প্রায় চল্লিশ তো হয়েছেই। কীভাবে হারিয়ে ফেলেছি হারানো সময়? সময়ের হিসাব রাখব সে- আশা কি করা যায়, যখন বিদেশবিভুঁইয়ে, নিজেকে কতদিনে কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারছি কেবল সেটাই ছিল সময়ের মাপকাঠি? আমি বীজ বুনেছি কিন্তু চারা গজাতে দেখার সুযোগ হয়নি, সন্তান ধারণ করেছি – তাদের বড় হতে দেখা হয়নি কারণ আমি তখন এক বিজাতীয় ভাষায় নিজেকে বোধগম্য করে তোলার চেষ্টা করছি, শিখছি কীভাবে ইলেকট্রিক কেটলি ব্যবহার করতে হয়, কখন কীভাবে স্টোভ নেভাতে হয়, বুঝতে হয়েছে অচেনা কাউকে দরজা খুলে দিতে হয় না আর আমি সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে সম্ভাষণ করতে পারি না।
সামনের দীর্ঘ ধুলাওড়া পথটা না দেখে চলার চেষ্টা করছিলাম তবে বিশেষ করে দেখার মতো কিছু ছিলও না। সব মনে হচ্ছিল নিষ্ফলা আর শূন্য। গাছ না, ঘাস না, চারদিকে কেবল কমলাটে বাদামি রঙের অগোছালো জমি। অস্তমান সূর্যরশ্মি যেন তাতে সোনালি আভা দিয়েছে। আমরা দুজন মালপত্র মাথায় নিয়ে সরু রাস্তাটা ধরে পরপর হেঁটে চলেছি – অস্তমান সূর্যের বিপরীতে আমাদের ছায়া পড়েছে – নিশ্চিত জানি, এ-দৃশ্যের সুন্দর একটা ছবি হতো। সেটা ডিসেম্বর মাস – তখন ওরকম বড় একটা ছবি দেখেছিলাম, ছবিটা জিরাফের। মনে আছে, ছবিটা দেখতে দেখতে একটা মুহূর্তে বৃষ্টিভেজা মাঠের গন্ধের জন্য আকুল হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু আমি তখন গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে সোয়াকপমন্ডে আছি, তিনি সেখানে পরিবার নিয়ে গিয়েছেন বিশ্রামের প্রয়োজনে। তখন ছুটির সময়, পরিবারের সঙ্গে কাটাবার সময়; কিন্তু আমি আমার পরিবারের সঙ্গে ছিলাম না, আর আমার সারাটা বছর ওভাবেই কেটে গেছে। ওভাবেই কেটেছে আমার জীবনের অধিকাংশ ভালো সময়।
এখন সেসব পেছনে ফেলে এলাম। আমি ঘরে ফিরছি। বহু বছর আগে যে-পথে হেঁটে গিয়েছিলাম, সে-পথেই ফিরছি। কেবল তখন আমি সতেরো বছরের এক মেয়ে আর আমার দৃষ্টি ছিল সামনে। চলে গিয়েছিলাম এক কিশোরী মেয়ে – এই চল্লিশ বছরে তিনটি সন্তানের মা হয়েছি, বারদুয়েক গ্রামে এসেছি – এখন ঘরে ফিরছি এক বৃদ্ধা।
আমার অপরিচিত ওই মেয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল, তারপর ঘুরে জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে তাকাল আমার দিকে। বুঝলাম একটা উত্তর বা কোনো এক ধরনের ইশারার অপেক্ষা করছে ও। এমনভাবে চিন্তায় হারিয়ে গিয়েছিলাম যে, ও কিসের অপেক্ষা করছে ধারণা করতে পারছিলাম না। অবশ্য আমার সন্তানরা কখন কী চায় সে-ধারণা তো আমার ছিল না। আবার ও শান্তস্বরে প্রশ্নটা করল, ওকি বেশি জোরে হাঁটছে, আমার কি তাতে অসুবিধে হচ্ছে। ঈশ্বর আমার – এত মায়া। অন্তত একজন সত্যিই জানতে চাইছে আমার তাল মিলিয়ে, চলতে অসুবিধে হচ্ছে কি-না, আমাকে বলছে না আরো দ্রুত হাঁটতে, বলছে না আমার ঘরে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ, বলছে না আরো ভোরে ঘুম থেকে উঠতে, কাজে আরো মনোযোগী হতে, কুকুরটাকে স্নান করাতে … আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। জলে ভরে গেল আমার দুটো চোখ, গলা বুজে এলো কিন্তু জেগে উঠল আমার প্রাণ। অপরিচিত ওই মেয়ে মাথা থেকে স্যুটকেসটা মাটিতে নামাল। তারপর আমারটা ধরে নামিয়ে ওটার পাশেই রাখল।
আস্তে বলল, ‘একটু জিরিয়ে নিই আমরা।’ বাক্স দুটোর ওপর পাশাপাশি বসার পর বলল, কী যে ভালো হয়েছে, তুমি বাড়ি ফিরেছ।’
এরপর একেবারে চুপচাপ বসে রইলাম আমরা।
বাতাসে কেবল ঝিঁ-ঝিঁ পোকার শব্দ। এত সুখ, এত শান্তি আমি কখনো পাইনি। ওই অপরিচিতার দিকে তাকিয়ে আমারই কন্যাকে দেখলাম। জানলাম আমি বাড়ি ফিরে এসেছি। আমি অযাচিত নই। আমার গর্ভজাত ফল আর আমি একত্রিত হয়েছি। আমারই শরীরে জন্মেছিল এই ফল। নিজের বিধ্বস্ত, বিকৃত শরীরটার দিকে তাকিয়ে পৃথিবীর কথা মনে হলো – কত সুন্দর সব ফুল ফোটে এর মাটিতে।
উঠে পড়ে মারিয়া বলল, ‘আমাদের যেতে হবে, সবাই অপেক্ষা করে আছে।’ ‘তুমি আগে চলো, তোমার সুবিধামতো এগোও, আমি তোমার পেছনে থাকব।
এবার আমি মেরুদন্ড সোজা রেখে, দৃষ্টি সামনে প্রসারিত করে ওই সরুপথে মারিয়ার আগে আগে চলতে শুরু করলাম। তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে।
---------
লেখক-পরিচিতি
মধ্য-পঞ্চাশের দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের পোর্ট এলিজাবেথে মিলি জাফতার জন্ম। ইউনিভার্সিটি ও হস্টেল ম্যাগাজিনের জন্য তাঁর লেখালেখির শুরু। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁর ‘Home Coming’ বা ঘরে ফেরা গল্পটি প্রথম প্রকাশিত রচনা। তিনি ফিল্মের জন্য আরেকটি ‘Home Coming’ লিখেছেন, কিন্তু তার বিষয়বস্ত্ত আলাদা। তিনি কবিতাও লিখেছেন। ১৯৯০ সালের স্বাধীনতার পর তিনি নামিবিয়া প্রজাতন্ত্রের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন এবং রাজধানী উইন্ডহিকে বসবাস করছেন, কাজও করছেন।
No comments