নারী চিকিৎসক ধর্ষণ-হত্যা: ডাক্তারদের কর্মবিরতি পশ্চিমবঙ্গে দোষারোপের রাজনীতি

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আরজি কর মেডিকেল কলেজের একজন নারী ডাক্তার (৩১)কে ধর্ষণ শেষে হত্যাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনায় ফুটছে পুরো দেশ। শনিবার ইন্ডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশনের (আইএমএ) ডাকে সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেছেন চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, অত্যাবশ্যক নয় হাসপাতালে এমন সব সেবা এদিন বন্ধ করে রাখেন তারা। আইএমএ হলো ভারতে চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। গত সপ্তাহে ওই হাসপাতালের একজন নারী ডাক্তারকে হাসপাতালের ভেতরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল হয়ে ওঠে। রাজ্য সরকার এ মামলার তদন্ত সিবিআই-এর হাতে হস্তান্তর করেছে। এরই মধ্যে নিহত চিকিৎসকের পিতামাতা বলেছেন, তাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে পুরুষের বিপুল পরিমাণ শুক্রাণু পাওয়া গেছে।

এর পরিমাণ ১৫০ মিলিগ্রাম। নারীদের নিরাপত্তার স্থান সংকুচিত হয়ে আসায় এই হত্যাকে বর্বরোচিত মাত্রা বলে আখ্যায়িত করেছে আইএমএ। ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইয়ে তারা দেশবাসীর সমর্থন দাবি করেছেন। যে হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি উত্তেজিত জনতা সেখানে ভাঙচুর করেছে। তারপর থেকে কয়েকদিনে নারীদের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ এবং তাদের উন্নত সুরক্ষার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনরতরা। এক বিবৃতিতে আইএমএ বলেছে, জরুরি এবং হতাহতের সেবা অব্যাহত থাকবে। তাদের ধর্মঘট স্থায়ী হবে ২৪ ঘণ্টা। এমআরআই-এর প্রেসিডেন্ট আর ভি আসোকান বিবিসিকে বলেছেন, অনেক বছর ধরেই সহিংসতার শিকার হয়ে আসছেন চিকিৎসকরা। তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেন। কিন্তু সর্বশেষ যে ঘটনা ঘটেছে তা ভিন্ন মাত্রার। একটি বড় শহরে একটি মেডিকেল কলেজে যদি এমন অপরাধ হতে পারে তাহলে এটা থেকে বলে দেয় যে, চিকিৎসকরা কোথাও নিরাপদ নন। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে কিছু সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সহিংসতার বিরুদ্ধে মেডিকেল স্টাফদের অধিক সুরক্ষিত রাখতে আইন শক্তিশালী করা সহ দাবিসমূহের একটি তালিকা দিয়েছে আইএমএ। এতে আরও আছে হাসপাতালে নিরাপত্তার মাত্রা বৃদ্ধি করা। বিশ্রামের জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করা। হত্যাকাণ্ডের একটি নিপুণ ও পেশাদারি তদন্ত দাবি করেছে তারা। হাসপাতালে ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচার করার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি নিহত ও ধর্ষিত নারীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

আরজি কর মেডিকেল কলেজে গত সপ্তাহে উদ্ধার করা হয় ৩১ বছর বয়সী ট্রেইনি ওই নারী ডাক্তারের মৃতদেহ। এ সময় কলেজের  সেমিনার হলে তাকে আহত ও অর্ধনগ্ন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শিফট পরিবর্তনের সময় তিনি সেখানে বিশ্রাম নিতে গিয়েছিলেন। এই অপরাধে জড়িত সন্দেহে হাসপাতালের একজন স্বেচ্ছাসেবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই নারীর মৃত্যুর পর ভারতে আরও ধর্ষণের খবর সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন- নারীর বিরুদ্ধে দানবীয় আচরণের কঠোর ও দ্রুত শাস্তি দেয়া হবে।

ওদিকে এই নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে দোষারোপের রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এই হামলার জন্য রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস পার্টিকে দায়ী করেছে বিরোধী ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি। এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সহিংসতাকে উস্কে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক বহিরাগতদের দায়ী করেছে তারা। ওদিকে ভয়হীন, স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার দাবিতে বুধবার রাতে পশ্চিমবঙ্গে হাজার হাজার নারী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। যদিও এই বিক্ষোভ ছিল শান্তিপূর্ণ, তবু পুলিশ এবং আরজি কর হাসপাতালে প্রবেশ করা অজ্ঞাত একটি গ্রুপ পুরুষের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। ওই সময় ওই গ্রুপটি হাসপাতালের জরুরি ওয়ার্ডে ভাঙচুর করেছে। এসব ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কমপক্ষে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দিল্লি, হায়দরাবাদ, মুম্বই ও পুনে সহ ভারতের অন্য বড় বড় শহরেও প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.