শতকোটি টাকার মালিক সাবেক মন্ত্রীর এপিএস by মিলন পাটোয়ারী
জানা গেছে, অবৈধভাবে ঘুষের টাকায় আমেরিকায় কিনেছেন বিলাসবহুল ফ্লাট। সেখানে থাকেন স্ত্রী তমা ও তার সন্তান। বিদেশেও পাচার করেছেন বিশাল অংকের টাকা। দুর্নীতির যেন শেষ নাই মিজানের। লালমনিরহাটের কাকিনার বানিনগরে তার শশুরবাড়ি। শশুর আবু তালেব ছিলেন সামান্য সম্পদের মালিক। এখন হয়েছে প্রায় শত বিঘা জমি। রয়েছে ব্যাংক ব্যালেন্স। মিজানের স্ত্রী তমা এলাকার ফার্স্ট লেডি বলে পরিচিত। স্ত্রী তমাকে দিয়েছেন গাড়ি আমেরিকায় বাড়ি। কালীগঞ্জের কাকিনা মহিপুর এলাকায় মিজানের স্ত্রী তমার গাড়িতে পাচার করা হতো মদ, ফেনসিডিলসহ মাদক। গাড়ি তল্লাশি করায় ছিল না কোনো পুলিশের সাধ্য। এ সুবাদে প্রতিদিন সেই গাড়িতে পাচার করা হতো মাদক। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ গাড়িটি আটক করে ডিবি পুলিশ। মন্ত্রীর এপিএস মিজানের স্ত্রীর গাড়ি হওয়ায় পুলিশ বিষয়টি পাশ কাটিয়ে মামলাটি ভিন্নভাবে দায়ের করেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, এপিএস মিজানের শ্যালক মাদক নিয়ন্ত্রণ করতো। গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এপিএস এম মিজানের ক্যাশিয়ার বলে পরিচিত রেল কর্মচারী জাকির হোসেন। এ ছাড়াও সোনা পাচারের রয়েছে ব্যবসা। এই সোনা পাচারে তার পাটনার রয়েছে মহিষখোচা কলেজের শিক্ষক সেফাউল। অভিযোগ রয়েছে, মিজান প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গেও জড়িত ছিল। তার সহযোগী ছিলেন এমডি মিজান। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, মিজান অনামিকা ট্রেডার্স এর নামে মহিষখোচা তিস্তা বাঁধ নির্মাণে ১০ কোটি টাকার কাজ জোর করে টেন্ডারে নিয়ে নিম্নমানের কাজ করেন। যা ৬ মাসেই লণ্ড ভণ্ড হয়ে পড়ে। জানা গেছে, সুইস ব্যাংকেও রয়েছে টাকা। আদিতমারীর মহিষখোচা গ্রামে গেলে গ্রামবাসীরা জানান, মিজান কোটি কোটি টাকার মালিক। তার বাপের জমি নদীতে ভেঙে যায়। তাদের তেমন কিছু ছিল না। এখন অঢেল জমির মালিক তার পরিবারের লোকজন।
জানা গেছে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর এপিএস থাকার সময়ে আদিতমারীর মহিষখোচার কচুমুড়া এলাকায় ২০ বিঘা, বারঘরিয়া বালুঘাটে ১৫ বিঘা, গোবধন চরে ৫০ বিঘা জমি ক্রয় করে। মহিষখোচা বাজারে কোটি টাকার উপরে জমি ক্রয় করে। মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পেটাতো। হয়রানি করতো মিথ্যা মামলা দিয়ে। তিস্তা নদীর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে ১৫ বছরে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। রয়েছে তার অবৈধ মালু মহাল। তিনি ৮টি ট্রাকের মালিক। প্রতিদিন অবৈধ বালুর কারবার থেকে বালু বিক্রি করছে এপিএস’র লোকজন। প্রশাসন সবেই জানেন কিন্তু অসহায়। মহিষখোচায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৮টি গ্রুপের ৪৪ কোটি টাকার কাজ সাব কন্ট্রাক্ট বাগিয়ে নেয়। কাজ করেছে অত্যন্ত নিম্নমানের।
অপরদিকে মিজানের ছোটভাই এরশাদুল হক চাকরি করেন হাতিবান্ধায় ভূমি অফিসের পিয়ন পদে। ২০ তম গ্রেডে চাকরি করে ১০ হাজার টাকা তার বেতন। বড়ভাই মন্ত্রীর এপিএস হওয়ায় চাকরি না করেও তুলতেন বেতন। পিয়ন থেকে সেও এখন কোটি টাকার মালিক। মহিষখোচা বাজারে সোনালী ব্যাংকের সামনে বড় বড় গোডাউনে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার ভুট্টা। নামে-বেনামে মিজান জেলার আদিতমারী পলাশীর বনচৌকি দোলাসহ বিভিন্ন স্থানে আরও প্রায় দেড়শত বিঘার অধিক জমি ক্রয় করেছে। যার মূল্য প্রায় কয়েক কোটি টাকা। এ ছাড়াও আদিতমারী ভাদাই ঘোষের দোকানের পিছনে জমি ক্রয় করে ১১ শতকের উপরে। এতে ৭৫ লাখ টাকা মূল্য হবে বলে জানান এলাকাবাসী।
মিজানের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস ছিল না কারও। থানা-পুলিশ ছিল তার নিয়ন্ত্রণে। এ ছাড়াও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পেতো না কেউ। প্রতিবাদ করলেই পুলিশ দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতো। মিজানসহ সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নামে দুদকে একটি অভিযোগ দায়ের হয়। সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের পক্ষে মনি কিশোর নামে এক কর্মচারী দুদকে অভিযোগ করেছিলেন। এই অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ পর্যন্ত হয়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে তদন্তে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এসব বিষয়ে এপিএস মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পলাতক রয়েছে বলে তার ঘনিষ্টজনরা জানান। ওদিকে লালমনিরহাট জেলার দায়িত্বে কুড়িগ্রাম দুদক উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ দিলে তাদের নির্দেশে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
No comments