চট্টগ্রামে যুবলীগ নেতার বাসায় গিয়ে জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক লাঞ্ছিত

যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও আলোচিত ব্যবসায়ী নিয়াজ মোরশেদ এলিটের বাসায় বৈঠক করতে গিয়ে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক ও চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার। পরে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে বিক্ষুব্ধ জনতার কাছ থেকে তাকে উদ্ধার করে। শনিবার দুপুরে মিরসরাই উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে নিয়াজ মোরশেদ এলিটের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এসময় বিএনপি’র বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গোলাম আকবর খোন্দকারকে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন। এলিট মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের পরিচালক ও চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। তার বাবা মনিরুল ইসলাম ইউসুফ বিএনপি’র উত্তর জেলা কমিটির সাবেক সদস্য। এছাড়া তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গোলাম আকবর দলের কয়কজন নেতাকর্মী নিয়ে এলিটের বাড়িতে যান। সেসময় এলিটের পাশাপাশি তার বাবা বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলাম ইউসুফও ছিলেন। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হতেই স্থানীয় বিএনপি’র নেতাকর্মীর ওই বাড়ি ঘেরাও করেন। এরমধ্যে তাদের সঙ্গে গোলাম আকবর খোন্দকারের বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে খোন্দকার ও তার সহযাত্রীদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা ও শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট নিজের গ্রামের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন এমন খবর ছিল বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছে।

শনিবার দুপুরে তাকে উদ্ধার করতে ওই বাড়িতে যান বিএনপির জেলা আহবায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার। এ খবর শুনে দীর্ঘ ১৫ বছর শেখ হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের শিকার বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে। পরে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম অবরুদ্ধ গোলাম আকবরকে উদ্ধার করতে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিনকে জানালে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে এবং নিরাপদে ফিরে যেতে সাহায্য করেন।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা মিরসরাই উপজেলা বিএনপির এক নেতা মানবজমিনকে বলেন, নিয়াজ মোর্শেদ এলিট দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগের পদ ব্যবহার করে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করেছে। সে ও মোশাররফ ( ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন) মিলে আমাদের জুলুম করেছিল। তাদের কারণে নেতাকর্মীরা বাড়িছাড়া হয়েছিল। এলিট যুবলীগের সাইনবোর্ড বিক্রি করে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। মূলত তার অবৈধ সম্পদের ঠিকাদারি করতেই খোন্দকার সাহেব তার বাসায় গোপনে বৈঠক করতে গিয়েছিল।

এ বিষয়ে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও সাবেক এমপি গোলাম আকবর খোন্দকার মানবজমিনকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ইউসুফ সাহেব আমাকে তার বাসায় দাওয়াত দিচ্ছিলেন। আজকে ঢাকায় যাওয়ার সময় মিরসরাইয়ে আমাদের এক প্রয়াত নেতার কবর জেয়ারত করি। পরে মনিরুল ইসলাম ইউসুফ সাহেবের বাসায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে নুরুল আমিন চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করেছে। তিনি বলেন, মনিরুল ইসলাম ইউসুফ বিএনপি’র প্রবীণ নেতা। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মিরসরাই আসন থেকে প্রাথমিকভাবে ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছিলেন। পরে তার কাছ থেকে নিয়ে নুরুল আমিনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। তখন থেকেই হয়তো তাদের দু’জনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। আমি জেলা বিএনপি’র আহবায়ক হিসেবে সবাইকে নিয়েই তো কাজ করতে হয়। আর ইউসুফ সাহেবের ছেলে এলিট যে যুবলীগের নেতা, সেটা আমার সেভাবে জানা ছিলো না।

No comments

Powered by Blogger.