ভূরাজনীতিতে এরদোগানের ভিন্ন কৌশল -তুর্কি পার্লামেন্টে মাহমুদ আব্বাসের বক্তব্য

মস্কোতে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তুরস্কের আঙ্কারা সফর করেছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস। ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে ফিলিস্তিনিদের একতা ও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এ দুটি দেশের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন আব্বাস। হামাসের প্রতিপক্ষ ফাতাহ প্যালেস্টাইন আন্দোলনের নেতা মাহমুদ আব্বাস। তুরস্ক সরকারের সঙ্গে তার রয়েছে অনেক দূরবর্তী সম্পর্ক। তবে তুরস্ক সফরে আব্বাসকে আমন্ত্রণ জানানো ছিল কৌশলী। ২৫শে জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ভাষণ দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে আঙ্কারা। তারপর তারা মাহমুদ আব্বাসকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বুধবার আঙ্কারায় আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। তিনি তার ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির সদস্যদের উদ্দেশ্যে একই দিন বলেন, নেতানিয়াহু যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বক্তব্য দেয়ার অধিকার রাখেন, ঠিক তেমনিভাবে আমরা দেখাতে চাই যে, আমাদের পার্লামেন্টে আব্বাসের বক্তব্য দেয়ার অধিকার আছে।

উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট এরদোগান গাজার হামাস যোদ্ধাগোষ্ঠীর কট্টর সমর্থক। এ জন্য মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে তার সম্পর্ক দূরত্বের। তিনি বলেছেন, হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়েকে ইরানের রাজধানী তেহরানে হত্যা করার আগে তাকে তুরস্ক সফরের আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা ছিল। বৃহস্পতিবার তুরস্কের পার্লামেন্টে ব্যতিক্রমী এক অধিবেশনে বক্তব্য রেখেছেন মাহমুদ আব্বাস। এই পার্লামেন্ট সাজানো হয়েছিল ইসমাইল হানিয়ের ছবি দিয়ে। তিনি ঘন ঘন তুরস্ক সফর করতেন এবং এরদোগানের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্সি বলেছে, আব্বাসের জন্য বিশেষ এই অধিবেশনের উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি তুরস্কের শক্তিশালী সমর্থন প্রদর্শনের জন্য। নিষ্পেষিত ফিলিস্তিনি জনগণের কণ্ঠ যাতে বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে, সেজন্য এমন আয়োজন করা হয়েছিল।
মাহমুদ আব্বাস বক্তব্য রাখার সময় হাততালি দেয়ায় বেশ কয়েকবার তাকে থামতে হয়। তিনি বলেন, গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তিনি অধিকৃত গাজা উপত্যকা সফরে যাবেন। ফিলিস্তিনি ভূমি থেকে ইসরাইল নিজেদেরকে প্রত্যাহার না করলে এই যুদ্ধ শেষ হবে না। ২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা যান না মাহমুদ আব্বাস। তিনি বলেন, নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়াবেন। গাজাকে বাদ দিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হতে পারে না।
এর আগে ৫ই মার্চ তুরস্ক সফর করেন মাহমুদ আব্বাস। কিন্তু তখন ইরান ও হিজবুল্লাহ ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেবে- এমন এক ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজমান ছিল। এরই মধ্যে ইসমাইল হানিয়েকে হত্যার পর হামাসের প্রধান নিয়োগ করা হয়েছে ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে। তিনি ইরানের খুব ঘনিষ্ঠ বলে মনে করা হয়। ফলে হামাসের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে আঙ্কারা। ইসমাইল হানিয়েকে হত্যার কারণে নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তা ব্লক করে দেয় ওই মিডিয়া। এ জন্য এক সপ্তাহের জন্য তুরস্কে ইনস্টাগ্রাম ব্লক করে রাখা হয়।
আঙ্কারা ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহকারী প্রফেসর বেতুল দোগান-আক্কাস বিশ্বাস করেন, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতে বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত আছে তুরস্কের পার্লামেন্টে মাহমুদ আব্বাসের বক্তব্য ও সফর। ফিলিস্তিনিদের সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে সমর্থন দেয় তুরস্ক। কিন্তু গত এক দশকে হামাসের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অধিক থেকে অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অবস্থায় মাহমুদ আব্বাসকে পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখার অনুরোধ করার মাধ্যমে তুরস্ক এটাই দেখাতে চাইছে যে, পশ্চিমতীর ও গাজার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ইসমাইল হানিয়েকে হত্যার মধ্যদিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এই সফর বড় রকম প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন দোগান আক্কাস।

No comments

Powered by Blogger.