তিস্তার ব্যাপারে জয়শঙ্কর মোমেনকে যা বলেছেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ব্যাংককে ভারতের বিদেশমন্ত্রী  ড. এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে তিনি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পরও ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে মোদি সরকারের নয়া বিদেশমন্ত্রী বলেছেন, হ্যাঁ, এটি চূড়ান্ত হয়ে আছে ঠিক, কিন্তু চুক্তি সইয়ের চূড়ান্ত তারিখ এখনই দেয়া যাচ্ছে না। কারণ, তিস্তা কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন না। সীমান্ত লাগোয়া ভারতের আগরতলা বিমানবন্দর সম্প্রসারণে বাংলাদেশের কাছে জমি চাওয়ার চাঞ্চল্যকর খবরের বিষয়ে মন্ত্রী মোমেন কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। বলেন, আমরা এখনও এ বিষয়ে কোনো চিঠিপত্র পাইনি। এ বিষয়ে আমার কোনো জ্ঞান নেই। গত সপ্তাহে ব্যাংককে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিতে গিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, কানাডা, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক বৈঠক-মতবিনিময় হয়েছে।
ঢাকায় ফেরার পর গতকাল প্রথম কর্মদিবসে অনির্ধারিতভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানে নানা বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।

প্রশ্ন আসে অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর, চলতি মাসে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ঢাকা সফর, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং ১১ বছরেও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফেরত আনতে না পারা রাজনৈতিক না কূটনৈতিক ব্যর্থতা? সেই বিতর্ক নিয়েও। আগরতলা বিমানবন্দর সম্প্রসারণে বাংলাদেশের কাছে জমি চাওয়া সংক্রান্ত সংবাদের বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে মন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে জানেন না দাবি করে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরে তিস্তা চুক্তির কোনো সুখবর মিলবে কি-না? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, মনে হয় না। তবে অভিন্ন ৫৪টি নদী নিয়ে আলোচনা হবে। মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেশী দেশ হলে অনেক ইস্যু থাকে। অনেক সমস্যাও থাকে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত উষ্ণ, তাই অনেক সমস্যা হলেও সমাধান হয়ে যায়। আলোচনায় সমাধান আসে। মন্ত্রী নিজে থেকেই দাবি করেন- তার আলোচনার পর সীমান্তে হত্যা কমে এসেছে। তার ভাষায় ‘এটা গুড নিউজ’। চলতি মাসেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে এমনটি জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা প্রস্তুত। মিয়ানমারও এটা চায়। ভারতের পরামর্শ সংখ্যায় কম হলেও এ মাসেই যেন আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করি। দিল্লি জানিয়েছে, রাখাইনে তারা আড়াই শ’ বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে। সেখানে হাজার খানেক লোক থাকতে পারবে। চীন ১ হাজার বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে। সেখানেও তাদের থাকতে কোনো অসুবিধা হবে না।

নাম বদল করে থাকতে পারে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা: এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিদের ফেরত আনার বিষয়ে ১১ বছরেও তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি নেই, কারও কারও অবস্থানও অস্পষ্ট? কেন এমনটা হচ্ছে? জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, সবচেয়ে বড় কথা সরকার একটি স্বচ্ছ বিচার করতে পেরেছে। যেখানে আসামিরাও সমান আইনি সুযোগ পেয়েছে। তিনি দাবি করেন, এমন বিচার ইউরোপিয়ানরাও করতে পারেনি। এটাকে সরকারের বড় সাফল্য হিসাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার চায় দু-একজনকে আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মশর্তবার্ষিকীর আগেই ফেরত এনে রায় কার্যকর করতে। এটা সরকারের ইচ্ছা, সেভাবেই চেষ্টা চলছে। সরকার আইনি প্রক্রিয়ায়ই তাদের ফেরত আনতে চায় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা ইসরাইলিদের মতো রাস্তা থেকে কাউকে ধরে, কিডনাপ করে আনতে চাই না। তাই আমরা ওই সব দেশ, যেখানে খুনিরা রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করছি।

তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের ৪ মাসের মধ্যে তিনি ওয়াশিংটনে গেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে তার আমন্ত্রণে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে তিনি আইনের শাসন এবং গুড গভর্নেন্সের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে থাকা খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে মার্কিন সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। পম্পেও বিষয়টি দেখবেন বলে তাকে কথা দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, পরশু ব্যাংককে মাইক পম্পেও’র সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে। তিনি নিজে থেকেই বলেছেন, দয়া করে আমাকে রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করো না। এতেই বুঝা যায় তার অঙ্গীকারের কথা তার স্মরণে আছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্যাংককে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছে। সেখানেও তিনি প্রায় অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন।

মন্ত্রীর দাবি- খুনি নূর চৌধুরীকে আশ্রয় প্রসঙ্গে কানাডার মন্ত্রীকে বলেছেন, তোমার দেশ শয়তানের দেশ হয়ে যাচ্ছে, মার্ডারারের দেশ হয়ে যাচ্ছে। জবাবে কানাডার মন্ত্রী তার দেশের আইনি বাধার বিষয়টি তুলে ধরে বলেছেন, দেশে ফেরার পর এ নিয়ে আলোচনা করবেন তিনি। তবে বিষয়টি যে তার এখতিয়ারে নেই এমনকি এতে প্রশাসনের কোনো কর্তৃত্ব নেই সেটি জানিয়েছেন। প্রশ্ন আসে, কেন সরকার এই যুগেও খুনিদের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারছে না? এখন তো ইন্টারপোলেরও সহায়তা নেয়া যায়। জবাবে মন্ত্রী বলেন, খুনিরা ৭৫ পরবর্তী সরকারের কাছ থেকে কেবল অর্থই পায়নি তারা দূতাবাসে চাকরিসহ নানা সুবিধাও পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে তারা নামও পরিবর্তন করে থাকতে পারে। তাদের হাতে নানা রকম পাসপোর্টও থাকার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন। তারপরও বারবার মন্ত্রী বলেন, আমাদের ইচ্ছা আগামী বছরের মধ্যে দুজনকে ফেরত আনার। আমরা সেই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আশা রাখি সফল হবো।

No comments

Powered by Blogger.