ঢাকায় আসা-যাওয়ায় সতর্ক মানুষ by শুভ্র দেব

ডেঙ্গু আতঙ্কে ঢাকায় আসতে এবং সামনের ঈদে বাড়ি ফিরতে সতর্ক মানুষ। ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া  ঢাকা আসছেন না অনেকে। আবার যারা ঈদে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারাও হিসেব-নিকেষ কষছেন পরিস্থিতি সামনে রেখে। এ কারণে বাস এবং ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটেননি অনেকে। ঢাকার বাস কাউন্টার, রেল স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে এখনও অবিক্রিত অনেক টিকেট রয়েছে। পরিবহণ মালিক, শ্রমিক ও কাউন্টার মাস্টার, স্টেশন ম্যানেজার ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন সর্বত্রই এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক। ডেঙ্গু আক্রান্তরা সহজেই সেরে উঠছেন না।
ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় মৃতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। এসব কারণে মানুষ ঢাকা আসতে নিরুৎসায়িত হচ্ছে। অথচ যাত্রীদের সুরক্ষায় প্রতিটা বাস ছাড়ার আগে মশার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। কাউন্টারে অপেক্ষারত যাত্রীদের মশা থেকে সুরক্ষার জন্য ওষুধ দেয়া হচ্ছে। সরজমিন গতকাল ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় ঢাকার বাইরে থেকে আসা বাসগুলোতে যাত্রীদের সংখ্যা কম ছিল। দুরপাল্লার বাসের যাত্রীরা জানিয়েছেন, গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া এখন কেউ ঢাকায় আসছেন না। বিশেষ করে বিদেশগামী, অসুস্থ, সরকারি কোন সংস্থায় কাজের উদ্দেশ্য অনেকেই আসছেন। তবে ভ্রমণের উদ্দেশ্য বা আত্মীয় স্বজনের বাসায় থাকার উদ্দেশ্য কেউ আসছেন না। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে বগুড়া থেকে আসা যাত্রী মোহন শিকদার বলেন, আমি যে বাসটাতে এসেছি বাসের অর্ধেক সিটও পূর্ণ হয়নি। মহাখালী বাস টার্মিনালে টাঙ্গাইল থেকে আসা যাত্রী আলম বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের বাসগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কম ছিল। একইভাবে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে একই চিত্র দেখা গেছে।
এনা পরিবহনের ঢাকা-সিলেট রুটের কাউন্টার ব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম বলেন, সিলেট অঞ্চল থেকে যাত্রী কিছুটা আসলেও ঢাকা থেকে যাওয়ার যাত্রী খুবই কম। আশা করছি ঈদের সময় যাত্রী কিছুটা বাড়বে। বিকাশ পরিবহণের কাউন্টার মাস্টার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যাত্রী এখন খুবই কম আসা যাওয়া করছে। তবে কি কারণে করছে না সেটা বুঝতেছি না। মহাখালি বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, যাত্রীর চাপ খুবই কম। ডেঙ্গু ও বন্যার কারণে যাত্রীরা ঢাকায় আসতেছে না। এমনকি ঢাকার বাইরের যাত্রীর সংখ্যাও কম। আশা করছি ঈদ আসলে সব ঠিক হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ যেমন নাই তেমনি ঢাকার বাইরেও কম যাচ্ছে। শুধু ডেঙ্গু না দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা হয়েছে তাই পরিস্থিতি এমন হয়েছে। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়েও আমরা কাজ করছি। আমরা সবাইকে ডেকে বলেছি বাস ছাড়ার আগে যেন স্প্রে করা হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক হোসাইন আহম্মেদ মজুমদার বলেন, ঢাকার বাইরের যাত্রীরা ঢাকা আসছেন না ভয়ে। কারণ অনেকেই মনে করছেন ঢাকা গেলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন। আবার ঢাকার বাসিন্দারা চিন্তা করছেন এই সময় ঢাকার বাইরে গেলে যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় তবে গ্রামে ভাল চিকিৎসা মিলবে না। তাই যে যেখানে আছে সেখানেই বসে আছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় যাত্রীদের জন্য মালিকরা কি ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটা বাসে যেমন মশক নিধন স্প্রে করা হচ্ছে তেমনি ঢাকার, মহাখালি, সায়েদাবাদ, গাবতলী ও গুলিস্তানের বাস কাউন্টারে মশার ওষুধ মারা হচ্ছে। যাতে বাসের অপেক্ষারত যাত্রীদের এডিস মশা না কামড়ায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল যাত্রী পরিবহণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিক পাটোয়ারি বলেন, অন্য সময়ের তুলনায় যাত্রীর চাপ কম। তবে কেন কমেছে তা বলতে পারব না। শ্রীনগর-৩ সুপারভাইজর রুহুল আমীন বলেন, ডেঙ্গুর কারণে একটা ভয় কাজ করতেছে তাই যাত্রীরা আসা যাওয়া কম করছেন।

No comments

Powered by Blogger.