২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে পাঁচ জনের মৃত্যু

অতিরিক্ত আইজিপির স্ত্রী সৈয়দা আক্তার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপির স্ত্রী, ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের এক ছাত্রী, ঢাকা মেডিক্যালে নরসিংদীর এক কলেজছাত্রী, চাঁদপুরের মতলবের নারী ইউপি সদস্য ও মাগুরাতে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (ফিন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ) শাহাবুদ্দিন কোরেশীর স্ত্রী মারা গেছেন। তার নাম সৈয়দা আক্তার (৫৫)। রবিবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সৈয়দা আক্তার শনিবার (৩ আগস্ট) স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। এর আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

পুলিশ ও স্বজনরা জানান, সৈয়দা আক্তারের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। ঢাকায় পরিবারের সঙ্গে রাজারবাগের পুলিশ অফিসার্স বাসভবন মেঘনায় বাস করতেন।

ইডেন মহিলা কলেজছাত্রীর মৃত্যু

জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. সামিউল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রী শান্তা আক্তারের (২০) মৃত্যু হয়। রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান। শান্তা আমাদের হাসপাতালে এসেছিল শনিবার বিকালে। তিনি ২২ ঘণ্টা আমাদের হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। শক সিনড্রোমে তার মৃত্যু হয়।’ শান্তাদের বাড়ি গাজীপুরে।

তিনি ইডেন কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। শান্তা পরিবারের সাথে ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় থাকতেন বলে তার প্রাইভেট শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানিয়েছেন।

শান্তার বাবা ও ভাইও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে মামুন জানিয়েছেন।

ঢামেকে কলেজছাত্রীর মৃত্যু

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) ডেঙ্গু জ্বরে দিপালী আকতার (২৩) নামের  একজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (৪ আগস্ট) বিকাল ৩টা ১৮ মিনিটে ঢামেকের হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ঢামেকে ডেঙ্গু জ্বরে ১২ জনের মৃত্যু হলো।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তার বাড়ি নরসিংদী জেলার মনহরদী উপজেলায়। তিনি পাইজ গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। বর্তমানে স্বামীর সঙ্গে রামপুরার বনশ্রীতে থাকতেন। দিপালী অনার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার স্বামীর নাম মো. কামাল হোসেন।

ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন)  ডা. নাছির উদ্দীন বলেন, ‘দিপালী ভর্তি হওয়ার সময়ই শকে ছিলেন। তাকে ১ আগস্ট ঢামেকে ভর্তি করা হয়।’

চাঁদপুরে নারী ইউপি সদস্যের মৃত্যু

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার খাদেরগাঁও ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য (মেম্বার) লাভলী বেগম (৪০)। শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে তিনি মারা যান।

লাভলীর স্বামী আবুল বাশার জানান, তারা সম্প্রতি ঢাকায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখান থেকে চাঁদুপরে ফেরার পর বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ২টার দিকে তার জ্বর আসে। তাকে প্রথমে মতলব হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারা শহরের গ্রিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঁচটি পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে তিন দিন চিকিৎসা এবং পরীক্ষা চলে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। শনিবার (৩ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি করার ২ ঘণ্টা পর আইসিইউতে তিনি মারা যান। মরদেহ মতলবের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর নাগদা বাজার বালুর মাঠে জানাজা শেষে তাকে পরিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

তিনি খাদের গাঁও ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।

খাদেরগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘সম্ভবত তিনি ২৫ জুলাই তার এক নিকটাত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ঢাকায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি প্রথমে জ্বর অনুভব করেন। পরে তিনি মতলব এসে গ্রাম্য ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু চিকিৎসা নেন। এরপরও তার জ্বর অপরিবর্তিত থাকায় তিনি মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডেঙ্গু আশঙ্কা করে তাকে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আমরা তার মৃত্যুতে শোকাহত।’

এ প্রসঙ্গে মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে মেম্বারের বাড়িতে গিয়েছি। আমরা জেনেছি, তিনি ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। পরে ঢাকায়ই তার মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে মতলবে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছি। মানুষজনকে সচেতন করছি। এছাড়া ঢাকায় কারও বাড়ি না থাকলে আপাতত সেখানে কেউ যেন না যায়, সেই পরামর্শ দিচ্ছি।’

মাগুরার গৃহবধূর ঢাকায় মৃত্যু

ডেঙ্গু জ্বরে অক্রান্ত মাগুরার জয়া সাহা নামে এক গৃহবধূ ঢাকায় মারা গেছেন। রবিবার (৪ আগস্ট) ভোরে তিনি মারা যান। তার বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বেরোইল পলিতা ইউনিয়নে।

মাগুরার সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ কুমার সাহা জানান, ‘‘ওই নারীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধি পাঠানো হয়। তারা আমাকে জানিয়েছেন, ‘ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে তিনি মারা গেছেন।’ ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর ওই নারীকে মাগুরা হাসপাতালে আনা হয়নি। ’’ জয়া সাহা পুটিয়া গ্রামের চঞ্চল সাহার স্ত্রী।

জয়ার পরিবার জানায়, তার জ্বর হলে শনিবার (৩ আগস্ট) সকালে ফরিদপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে তার মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য, সরকারি হিসাবে শনিবার (৩ আগস্ট) পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৮ জন। এরমধ্যে এপ্রিলে দুই জন, জুনে তিন জন এবং জুলাইয়ে মারা যান ১৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে শনিবার (৩ আগস্ট) পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২২ হাজার ৯১৯ জন। এরমধ্যে এ মাসের প্রথম তিন দিনেই আক্রান্ত হন পাঁচ হাজার ৮৫ জন।

No comments

Powered by Blogger.