মাকে কথা রাখতে দেয়নি 'ডেঙ্গু'

মায়ের ছবি হাতে দিয়া। কোলে ছোট বোন দিঘী
মেয়েদের কথা দিয়েছিলেন মা, ফিরে আসবেন। কিন্তু, সে কথা রাখা হলো না। রাখতে দিল না ডেঙ্গু। গত রোববার (৪ আগস্ট) পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন জয়া সাহা। যাওয়ার সময় রেখে গেছেন ১৪ মাস ও ১২ বছরের দুই মেয়েকে। তারা এখনো অপেক্ষায়, মা কথা দিয়েছে, ঠিকই ফিরে আসবে।

মৃতের স্বজনরা জানান, গত সপ্তাহে শ্বশুরবাড়ি পুঠিয়া গ্রামে জ্বরে আক্রান্ত হন জয়া সাহা। এটিকে তারা স্বাভাবিক জ্বর মনে করলেও শনিবার (৩ আগস্ট) সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর নেয়া হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই দিন বিকেলেই ঢাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (৪ আগস্ট) ভোরে মারা যান তিনি।

মৃতের স্বামী চঞ্চল সাহা বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আমার স্ত্রী মারা গেছে। এখন মেয়ে দুটি কীভাবে থাকবে? তাদের কীভাবে মানুষ করব?

সরেজমিনে দেখা যায়, ছোটবোন দিঘীকে কোলে নিয়ে ঘরের দুয়ারে বসে আছে দিয়া। মুখে বিষাদের ছায়া।

সে বলে, 'মা বলেছিল, আমি ফরিদপুর যাচ্ছি চিকিৎসা নিতি। কয়দিনের মধ্যে বাড়ি ফিরে আসবো। তুমি তোমার বুনুর দিকে খেয়াল রেখো। আমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবো। আমার জন্য চিন্তা করো না।'

কান্নাজড়িত কণ্ঠে দিয়া বলে, 'মা বাড়ি ফিরে এলো ঠিকই, কিন্তু আমাকে আর মনি বলে ডাকলো না। ডেঙ্গু তাকে কথা রাখতে দিল না।'

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান বলেন, 'গ্রামবাসীকে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করার কাজ করছি। আমরা উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফগার মেশিন দিয়ে মশক নিধন অভিযান চালাচ্ছি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সবসময় কাজ করছেন।'

মাগুরার সিভিল সার্জন প্রদীপ কুমার সাহা বলেন, মাগুরা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক গৃহবধূর মৃতু্য হয়েছে। তবে, ওই রোগী এখানকার কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নেননি।

তিনি বলেন, মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ও মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে এ পর্যন্ত ৩৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ২৫০ শয্যা হাসপাতলে ২৪ জন ও মহম্মদপুর হাসপাতলে ৮ জন।

No comments

Powered by Blogger.