সিলেটে মা ও ছেলে খুন: সহসাই রহস্য উদঘাটনের আশায় পুলিশ by ওয়েছ খছরু

সিলেটে নিহত রোকেয়ার বাসায় কারা যেত- বিষয়টি নিয়ে বিশদভাবে তদন্ত করছে পুলিশ। রোকেয়ার স্বামী হেলাল আহমদ প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। আরেক স্ত্রী সুলতানা তান্নাকে নিয়ে বাস করেন নগরীর বারুদখানায়। বাসায় একমাত্র পুরুষ ছিল ছেলে রবিউল ইসলাম রূপম। এর বাইরে আর কোনো পুরুষ তার বাসায় যেত কী না- সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে তদন্ত চালিয়েছে পুলিশ। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি গৌসুল হোসেন জানিয়েছেন- রোকেয়াকেন্দ্রিক তদন্ত সহ সন্দেহের সকল ক্ষেত্র খোঁজ হচ্ছে। তবে প্রথম টার্গেটে রয়েছে কাজের মেয়ে তানিয়াসহ এলাকার যুবকরা। তিনি বলেন- পুলিশ আগামী এক-দুই দিনের এ ঘটনা অনেকটা খোলাসা করতে পারবে। নিহত রোকেয়া নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মূল বাড়ি কুমিল্লা। পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতো সিলেটে। ১৫ বছর আগে সিলেটের নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল। ওই নজরুল ইসলাম ছিলেন পেশায় গাড়ি চালক। প্রায় ৮ বছর আগে নজরুলের সঙ্গে ঘর ভাঙ্গে রোকেয়া বেগমের। তখন রোকেয়া বেগমের নিহত হওয়া ছেলে রবিউল ইসলাম রূপমের বয়স ছিল ৮ বছর। ছেলেকে নিজের সঙ্গে রেখে স্বামীর সঙ্গ ছাড়েন রোকেয়া। এরপর রোকেয়ার পরিচয় হয় জগন্নাথপুরের কলকলি এলাকার হেলাল আহমদের সঙ্গে। হেলাল ছিলেন বিবাহিত। নজরুলের সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার কিছু দিনের মধ্যে হেলালের সঙ্গে বিয়ে হয় রোকেয়ার। হেলালের তরফে রোকেয়ার এক মেয়ে রয়েছে। ওই মেয়ে হচ্ছে রাইসা। ঘটনার দিন রাইসাকেও গলাটিপে ধরেছিল ঘাতকরা। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সে। গতকাল রোকেয়ার ভাই ও মামলার বাদী জাকির আহমদ জানিয়েছেন- ‘হেলাল আহমদ এখন শয্যাশায়ী। তিনি হাঁটাচলা করতে পারেন না। হেলালকে এ ঘটনার সঙ্গে কোনো ভাবেই আমরা সম্পৃক্ত করতে চাই না। যতটুকু জানি হেলাল খুব ভালো মানুষ।’ জাকির জানান- ‘হেলাল অসুস্থ হলেও নিজ পরিবারের প্রতি খেয়াল রাখতেন। কারা এই ঘটনা ঘটাতে পারে- প্রশ্ন করা হলে জাকির হোসেন জানান- এখনো আমরা ধারণা করতে পারছি না। তবে যারাই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা তার বোন রোকেয়ার পরিচিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাইসা কাজের মেয়ের নাম বলেছে। তার খোঁজ পাওয়া গেলে হয়তো অনেক প্রশ্ন খোলাসা হতো।’ দুই দিন পুলিশের হেফাজতে শিশু রাইসা। মা ও ভাইয়ের লাশের পাশে দুই রাত কাটানোর পর পুলিশ যখন উদ্ধার করলো তখন থেকে সে পুলিশের হেফাজতে। রাইসাকে চিকিৎসা দেয়ার পর তাকে এখনো সিলেটের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। সেখানে তার সঙ্গে এক আত্মীয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাকির হোসেন। তিনি জানান- রাইসা এ ঘটনার পর নীরব হয়ে পড়েছে। মাকে খুঁজে ফিরছে। ভাইকেও ডাকছে। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে রাইসা হতবাক। রাইসাই হচ্ছে আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনার মূল সাক্ষী। রাইসাই খুনিদের চিহ্নিত করতে পারবে। ইতিমধ্যে রাইসাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুলিশ বেশ ক্লু পেয়েছে। রাইসার দেয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে খুনিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। এদিকে- নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে রোকেয়া ও তার ছেলে রূপমকে। ঘাতকরা এমনভাবে তাদের কুপিয়েছে একেবারে শরীর ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। শুধু রোকেয়াকেই নয়, তারা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করেছে রূপমকে। এ কারণে ঘটনার দিনই সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানিয়েছিলেন- আক্রোশ থেকে খুনিরা নির্মম এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও তাই মিললো। পোস্টমর্টেমকালে ডাক্তাররা মা ও ছেলের শরীরে ১১২টি আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন। এত টর্চারের ডেড বডি খুব কমই পেয়েছেন ডাক্তাররা। রোকেয়া বেগমের শরীরে ৭২টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এর মধ্যে পেটে ১৫, পিঠে ৩৫, উরুর পেছনের দিকে ১১, দুই হাতে ৩টি করে ৬টি, গলায় ৪টি এবং মাথার পেছনে একটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। রোকনের শরীরে পাওয়া যায় ৪০টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন। এর মধ্যে গলার ডান দিকে ১টি, বুকের বাম পাশসহ বিভিন্ন দিকে ৪টি, পেটে ছোট-বড় ১৫, পিঠে ৩, বাম ও ডান হাতে ১৬টি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তাররা জানিয়েছেন- খুনের ঘটনার আগে রোকেয়া বেগম ধর্ষিত হয়েছিলেন কী না- সেটি স্পষ্ট নয়। তবে তারা আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে টেস্টের জন্য পাঠিয়েছেন। রিপোর্ট আসার পর এ প্রশ্নেরও উত্তর মিলবে বলে জানান ডাক্তাররা।

No comments

Powered by Blogger.