রাজুর পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার by মাহবুব খান বাবুল

মাত্র ২ ঘণ্টা আগে রাজু কথা বলেন তার মা রোশেনা আক্তারের সঙ্গে। রোববার সৌদি আরবের দুপুর ১টা আর বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টায় রাজু ফোন দেয় তার মাকে। ফোন ধরতেই রাজু বলে,  আম্মা তুমি কি করো? দুপুরের খাবার খেয়েছো কিনা তাও জানতে চায়। এর দুই ঘণ্টা পরই সৌদি আরবে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় রাজু। সরাইল সদর ইউনিয়নের হাফিজটুলা গ্রামের বাসিন্দা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুছ। সাত সদস্যের দরিদ্র পরিবারের সুখের চিন্তা করে দেড় বছর আগে বড় ছেলে রাজু (২৭)কে পাঠিয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যে। এ জন্য তিনি ধারদেনা ও সুদি করে ৯ লক্ষাধিক টাকা খরচ করেন। এক বছরেরও অধিক সময় রাজু বেকার অবস্থায় অনেক কষ্টে ছিল। খাবারের টাকা পাঠাতে হতো বাড়ি থেকে। গত ৩/৪ মাস আগে একটা চাকরি পেয়েছিল রাজু। কিন্তু গত রোববার সৌদি আরবে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় রাজু। মুহূর্তের মধ্যে কেড়ে নিলো রাজুর পরিবারের সকল স্বপ্ন। চরম অন্ধকার নেমে আসে কুদ্দুছের সংসারে। রাজুর অকাল মৃত্যুর খবরে গোটা গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ। হতবিহ্বল হয়ে বারবার চিৎকার করছেন রাজুর মা-বাবা। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তান রাজুর ৬ষ্ঠ শ্রেণির পর আর পড়া হয়নি। পিতার আয়- রোজগারে সংসার চলছিল না। এ অবস্থায় রাজু বিদেশ গিয়ে পরিবারকে সুখ দেয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পরে ধার-দেনা ও সুদি করে ৯ লক্ষাধিক টাকা খরচ করে দেড় বছর আগে সৌদি আরবের রিয়াদে পাঠান রাজুকে। কে জানতো কুদ্দুছের স্বপ্ন এত দ্রুত ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে? রাজুরও স্বপ্ন ছিল অনেক টাকা রোজগার করার। মা-বাবা, ভাইবোনকে সুখি করার স্বপ্ন নিয়েই রাজু পাড়ি দিয়েছিল প্রবাসে। স্বপ্ন ছিল টাকা কামাই করে সংসারে সুখ ফিরিয়ে আনবে। সড়ক দুর্ঘটনা রাজুর সকল স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। ৩-৪ মাস আগে রাজু সৌদি আরবের সাইনবোর্ড নামক একটি কোম্পানির কাফেলায় যোগদান করেন। রোববার কর্মস্থল থেকে গাড়িতে করে বাসায় ফেরার উদ্দেশে রওনা দেন রাজু।  সেখানকার স্থানীয় সময় বিকাল ৩টার দিকে মক্কা রোডে রাজুকে বহনকারী গাড়িটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় রাজু। তার লাশটি বর্তমানে সেখানকার খাসিরাহ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। রাজুর বাবা কুদ্দুছ মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবার স্বপ্ন ছিল টাকা রুজি করে আমাদেরকে সুখ দেয়া। স্বপ্ন ও সুখ দুটিই শেষ। সুদি করে টাকা এনে টাকা বাবাকে পাঠাইছিলাম। আমার সবকিছু শেষ। শেষ বারের মতো আমাদের নাড়ি ছেঁড়া বুকের ধনকে একটি বার দেখতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.