উন্নতমানের চিকিৎসা সহজলভ্য হোক by এমদাদুল হক সরকার

বিজ্ঞানপড়ুয়া স্কুলছাত্রদের যখন প্রশ্ন করা হয়- বড় হয়ে সে কী হতে চায়, উত্তরে তাদের অনেকেই বলে থাকে- ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। এর একটি কারণ হল ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার সম্মানজনক পেশা। ছোটবেলায় ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনা লিখতে গিয়ে অনেকেই লিখেছেন, বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই। কারণ গ্রামে সুচিকিৎসার বড়ই অভাব। ডাক্তার হয়ে গ্রামে গিয়ে তিনি সুচিকিৎসা দেবেন। কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও তার বক্তব্যে চিকিৎসকদের গ্রামে চিকিৎসা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি সদুপদেশ। প্রধানমন্ত্রীর ওই সদুপদেশের দুটি অর্থ দাঁড়াতে পারে। এক. দেশে অনেক ভালো চিকিৎসক আছেন, তবে তারা শহরে থাকতে চান। দুই. গ্রামগুলোই শুধু ভালো চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত, শহরে সুচিকিৎসার অভাব নেই। কাজেই যে কেউ অন্তত শহরাঞ্চলের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার ওপর ভরসা রাখতে পারেন। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন কথাই বলে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি চোখের চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। অধিকাংশ উচ্চবিত্তই বিদেশে পাড়ি জমান যে কোনো ধরনের চিকিৎসার জন্য। এটা আমাদের জাতির জন্য লজ্জাজনক ও বেদনাদায়ক। এতে বোঝা যায়, দেশে হয় ভালো চিকিৎসা নেই, নয়তো দেশীয় চিকিৎসায় তাদের আস্থা নেই। রাজনৈতিক নেতাদের যদি দেশের চিকিৎসায় আস্থা না থাকে, তাহলে ১৬ কোটি সাধারণ মানুষ আস্থা রাখবে কিভাবে?
উচ্চবিত্তরা না হয় বিদেশ থেকে চিকিৎসা নিলেন, কিন্তু সাধারণ মানুষরা যাবে কোথায়? প্রতি বছর চিকিৎসার জন্য লাখ লাখ রোগী বিভিন্ন দেশে যান। চিকিৎসা বাবদ দেশ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা বিদেশ চলে যায়। জানা যায়, দেশব্যাপী তিন শতাধিক এরকম এজেন্ট রয়েছে, যাদের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার রোগী বিদেশে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ভারতেই যাচ্ছে প্রতি মাসে গড়ে ১৫ হাজার রোগী। বাকিরা চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়া যাচ্ছে বলে এজেন্ট প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন। এ হিসাবে প্রতি বছর কমপক্ষে আড়াই লাখ লোক বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান বলে এজেন্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। এর ফলে দেশের অর্থের যেমন অপচয় হচ্ছে, তেমনি দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা হচ্ছে অবহেলিত। মানুষের প্রধান মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে চিকিৎসা একটি। মেডিকেল জার্নাল দ্য লেনসেটে প্রকাশিত গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিস শিরোনামের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ ও মানের দিক দিয়ে বাংলাদেশ তার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলংকা ও চীনের চেয়েও এগিয়ে। ওই প্রতিবেদনে বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ৫২, আর ভারতের অবস্থান ১৫৪। তবুও চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারত কিংবা অন্য দেশে পাড়ি জমায় মানুষ। ক্ষমতাবানরাই দেশে চিকিৎসার গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ, এটি দুঃখজনক। আশা করি, সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। দেশে উন্নতমানের চিকিৎসা সহজলভ্য করা হবে।
এমদাদুল হক সরকার : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

No comments

Powered by Blogger.