১০০ জনে কাজ করেন ৪৯ নারী

বিশ্বজুড়ে কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীরা এখনো অনেকটাই পিছিয়ে। সারা বিশ্বে এখন প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে কাজ করার সুযোগ পান ৭৫ জন। আর প্রতি ১০০ জন নারীর মধ্যে কাজ করেন মাত্র ৪৯ জন। শুধু তা-ই নয়, নারীর বেকারত্বের হারও পুরুষের তুলনায় বেশি। সারা বিশ্বে নারীর গড় বেকারত্বের হার এখন ৬ শতাংশ, পুরুষের ক্ষেত্রে তা ৫ দশমিক ২ শতাংশ। নারীর কর্মসংস্থান পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ‘বিশ্ব কর্মসংস্থান ও সামাজিক পরিস্থিতি: নারীর অবস্থান ২০১৮’ শীর্ষক এ গবেষণা গতকাল বুধবার একযোগে সারা বিশ্বে প্রকাশ করা হয়। আইএলওর প্রতিবেদন বলছে, কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পিছিয়ে আছেন মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার নারীরা। মধ্যপ্রাচ্যে প্রতি ১০০ জনে মাত্র ১৯ জন নারী কাজ করার সুযোগ পান। উত্তর আফ্রিকায় এ হার ২২ শতাংশ। আর দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতি ১০০ জনে কাজ করার সুযোগ পান ২৮ জন নারী, পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ৭৯। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, দেশটিতে কৃষিবহির্ভূত অনানুষ্ঠানিক খাতে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় বেশি। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের এমন বৈষম্য বিশ্বের আর কোনো অঞ্চলে নেই। তবে উন্নত বিশ্বে নারীর কর্মসংস্থানের অবস্থা কিছুটা ভালো। উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব ইউরোপে নারীদের বেকারত্বের হার পুরুষের তুলনায় কম। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশে নারী-পুরুষের কাজের বৈষম্যের হার কমলেও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে এ বৈষম্য বেড়েই চলেছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে এমন প্রবণতার কারণ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব দেশের নারীরা এখন বেশি করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করছেন।
পড়ালেখার কারণে তাঁরা এখন কর্মক্ষেত্রে কম আসছেন। আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীরা যেসব কাজ করেন, তার মানও সন্তোষজনক নয়। পুরুষের তুলনায় ঘরের কাজে নারীর অংশগ্রহণের হার দ্বিগুণ। কিন্তু ঘরের কাজ করার জন্য তাঁরা কোনো পারিশ্রমিক পান না। এ কাজকে অনেকটা অনানুষ্ঠানিক খাতের কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোতে প্রতি ১০০ জনে ৪২ জন নারী ঘরের কাজ করেন, পুরুষের ক্ষেত্রে এ হার ২০ শতাংশ। ২০২১ সাল পর্যন্ত এ পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ ঘরের কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা আগামী তিন বছরে নেই। পারিশ্রমিক পাওয়ার ক্ষেত্রেও পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেকটা পিছিয়ে আছেন বলে আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০১৬ সালে এ বিষয়ে আইএলওর চালানো এক সমীক্ষা অনুযায়ী একই রকমের কাজ করে পুরুষের তুলনায় নারীরা ২০ শতাংশ কম পারিশ্রমিক বা মজুরি পান। আইএলওর উপমহাপরিচালক ডেবরাহ গ্রিনফিল্ড এ প্রতিবেদনের বিষয়ে বলেন, বেশ কিছু অর্জন ও অগ্রগতির পরও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ এখনো যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে পুরুষের সমকক্ষ হতে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কর্মসংস্থান, মজুরি ও যেকোনো বিষয়ে নারীর প্রতি বৈষম্য কমিয়ে আনতে সবাইকে অনেক বেশি কাজ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.