বাংলাদেশের বামপন্থিদের চোখে: বৈশ্বিক রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে

শি জিন পিং অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রেসিডেন্ট থাকলে বৈশ্বিক রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে বলে ধারণা করছেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। গতকাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মানবজমিনকে তিনি বলেন, চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি বুদ্ধিমত্তা ও সাংগঠনিকভাবে খুবই পরিপক্ব। বর্তমানে সমসাময়িক বিশ্বের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি মনে করছে শি জিন পিংয়ের মতো নেতা একটা মেয়াদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে তার প্রজ্ঞা, বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, দুরদর্শিতাকে কাজে লাগানো উচিত। যে কারণে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে অস্থিতিশীল। এই পরিস্থিতিতে শি জিন পিংয়ের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতার প্রেক্ষিতে বিশ্ব রাজনীতি স্থিতিশীল অবস্থার দিকে ধাবিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
অপরদিকে চীনা প্রেসিডেন্টের অনির্দিষ্ট মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি মনে করছেন, শি জিন পিং আজীবন ক্ষমতায় থাকবেন এমনটি ভাবা সঠিক নয়। নতুন আইনের কারণে প্রেসিডেন্টের দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকার বাধা দূর হয়েছে। প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে দেশটি লাভবান হবে বলে মনে করছেন তিনি। মেনন বলেন, দেশের প্রয়োজনে তারা মনে করেছে এটা করা উচিত। নতুন যে সময়ে তারা প্রবেশ করতে যাচ্ছে সেজন্য এটা প্রয়োজন। তারা সোস্যালিস্ট পার্টির পরিধি বাড়াতে চাচ্ছে। বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছে। সেজন্য তারা হয়তো মনে করছে শি জিন পিংয়ের নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা থাকা জরুরি।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পরীক্ষামূলকভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার মেয়াদ বাড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, দেং জিয়াও পিংয়ের পর দুই টার্ম ফিক্সড পিরিয়ড তারা করেছিল। তাদের পত্রপত্রিকায় যে আলোচনা, যেভাবে জিনিসটা এসেছে তারা দেখেছে পার্টির মধ্যে রীতিমতো অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হয়। বিশেষ করে অনেকেই জানে দুই টার্মের পরে এ আর থাকবে না তখন এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয় এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। তারা মনে করছে যে বড় ধরনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য যে স্থিতিশীলতা দরকার সেটা ব্যাহত হয়।
তিনি আরো বলেন, শি জিন পিংয়ের ব্যাপারে আমরা দেখছি যে উনি একটা বিশাল প্রজেক্ট নিয়ে নেমেছেন। বিশেষ করে ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোডের প্রজেক্ট। সেই প্রজেক্টের বাস্তবায়ন দুই টার্মে সম্ভব কিনা সেটা স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে। তবে, তারা একই সঙ্গে বলছে একটা বয়সে এসে অবসর নিতে হয়। সেই অবসর নেয়ার বয়স পরিবর্তন করেনি। পরিবর্তন শুধু দুই মেয়াদের। এই পরিবর্তন মানে যে আজীবন থেকে যাবে সেটা মুশকিল এই সময়। তবে, চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে এই ধরনের এক্সপেরিমেন্ট আমরা কমবেশি দেখেছি। মাও সে তুং, দেং জিয়াও পিংয়ের ধারাবাহিকতায় নতুন ধরনের এক্সপেরিমেন্টের দিকে যাচ্ছে। তারা নতুন করে উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে যে কিভাবে প্রতিযোগিতা কমানো যায়। একই সঙ্গে স্থিতিশীলতা রেখে দেশে বড় আকারের পরিবর্তন করা যায়। দেখা গেছে দেং জিয়াও পিংয়ের সময় তারা লাভবান হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.