গানের পেছনের কারিগর এবং বাস্তবতা by মিল্কি রেজা

গান, প্রগতিশীল সমাজের সুখের এক অন্যতম মাধ্যম। একটি ভালো গানের রয়েছে অসীম ক্ষমতা যা একজন মানুষকে মানসিক শান্তি দিতে সক্ষম। আর ভালো গান বলতে কথা, সূর, মিউজিক এবং শিল্পীর কন্ঠ ও গায়কী- সবকিছুরই সঠিক মিশ্রণ। একটি ছাড়া অন্যটি বিফল। প্রথমেই গীতিকারের হৃদয় থেকে শুরু করে শিল্পীর কন্ঠ পর্যন্ত সঠিক যত্নের মাধ্যমেই একটি গান হয়ে ওঠে অনবদ্য। আর সে গানটি অর্জন করে এমন ক্ষমতা যা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেতে পারে। তবে আমরা ক'জন একটি গান শোনার পরে তার পেছনের পথচলাগুলো নিয়ে চিন্তা করি? আমরা শুধু শিল্পীকেই হয়তো চিনে থাকি। তবে একজন শিল্পীই কেবল নন, একটি সফল সঙ্গীত আয়োজনে সমান দায়িত্ব পালন করেন আরো কয়েকজন। একজন ছাড়া অন্যজন অচল বা একটি ছাড়া আরেকটি। গানের কথাগুলো সর্বপ্রথম কড়া নাড়ে গীতিকারের মনের কোনে। তিনিই ভালো জানেন, কথাগুলোর পিছনের গল্প, তিনিই সর্বপ্রথম কল্পনা করেন গানটির মেজাজ, মহল, কথাগুলোর আবেদন। তারপর সেগুলোকে বিন্যাস করেন ছন্দে, মাত্রায় স্তবকে। তাঁর হৃদয়ের একান্ত শব্দগুলোকে দেন শৈল্পিক রুপ এবং পুরোটা গান জুড়েই থাকে একটি বিশেষ বার্তা। এরপর সে গান যখন সুরকারের হাতে আসে তখন তিনি কথাগুলোকে সুরে বাঁধেন।
সুরের সাথে গানের মেজাজের সম্পর্ক নিবিড়। কাজেই তাঁকেও বুঝতে হয় গানটির প্রকৃত মেজাজ, জানতে হয় শব্দগুলির পেছনে থাকা গীতিকারের ভাবনাগুলো, তাঁর কল্পনায় আঁকা ছবিগুলো। তবেই একজন সুরকার পারবেন গানের মেজাজকে অপরিবর্তিত রেখে সুর বাঁধতে। এরপর মিউজিক ডিরেক্টর তাঁর নিপুণ পারদর্শিতায় মিউজিক আয়োজন করেন। আর মিউজিক ভুল জায়গায় আঘাত করলে বদলে যেতে পারে গানের মেজাজ, মহল, বার্তা সবকিছুই। সুতরাং, তাঁকেও জানতে হয় গীতিকার, বা সুরকারের চিন্তাগুলোকে। সর্বশেষে শিল্পীর কাছে গানটি পৌছায়। পরম মমতায় শিল্পী তাঁর গায়কী এবং সুরের মুর্ছনায় গানটিকে রুপ দেয়। তাঁর কন্ঠে আবেদনের ভিন্নতায় গানটি তার কাঙ্খিত রুপে আসীন হয়। আর সেক্ষেত্রে অবশ্যই শিল্পীকে গীতিকার সুরকার এবং মিউজিক ডিরেক্টরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়। জানতে হয় গানটির পথচলা, উৎপত্তি সম্পর্কে এবং তিনি যখন সবকিছু নিজের মধ্যে ধারন করেন তখন তাঁর নিজস্ব আবেগ সেখানে যুক্ত হয়, আর তখনি গানটি হয়ে ওঠে অনবদ্য। ছুঁয়ে যায় শ্রোতার হৃদয়। সুতরাং এই বলয়টি রক্ষা করা এবং প্রতিনিয়ত মধ্যকার যোগাযোগই মূলত নিয়ম হওয়া উচিত। না হলে হাজারো গান আমরা শুনতে পাবো ঠিকই; তবে গুণগত মানসম্মত গান পাওয়া সম্ভব হবে না অথবা সঠিক শিল্পমান বিশিষ্ট একটি স্বতঃস্ফূর্ত সৃজন আমরা পাবো না। যা সৃষ্টি হয়েছে সৃষ্টের আবেদনে, সৃষ্টির চাহিদায় নয়।

No comments

Powered by Blogger.