আবার স্নায়ুযুদ্ধে ফিরছে রাশিয়া?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি নতুন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের কথা শোনালেন। তাঁর ভাষায়, এটা শত্রুর প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বিশ্বের যেকোনো স্থানে আঘাত হানতে সক্ষম। ইতিমধ্যে অস্ত্রটিসহ পুরো ব্যবস্থার পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে রাশিয়া। গত বৃহস্পতিবার আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে পুতিনের দেওয়া রাষ্ট্রীয় ভাষণে উঠে আসা এই প্রসঙ্গ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা হচ্ছে, পুতিন যে ভাষণ দিয়েছেন, তেমন ভাষণ গত এক দশকে আর কোনো বিশ্বনেতা দেননি। ওই ভাষণে তিনি মূলত প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমানতালে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর দেশের কৌশল প্রকাশ করলেন নতুন করে। আর এর মাধ্যমে তিনি স্নায়ুযুদ্ধে অনেকখানি এগিয়ে গেলেন বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। তবে আদৌ সেটা আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নিয়েও সংশয় আছে। পুতিনের ভাষণের সঙ্গে সঙ্গে অ্যানিমেশন করা ভিডিও দেখানো হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়া থেকে ছোড়ার পর পশ্চিমের দিকে যাচ্ছে। সাগরের ওপারের অজানা দেশে আঘাত করছে। বিষয়টি অনেকটা এমন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেদ করে আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি অনায়াসে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। আরও স্পষ্ট করে বললে ফ্লোরিডার মতো কোনো জায়গায় এটি আঘাত হেনেছে বলে মনে হচ্ছে। আর এই অ্যানিমেশনই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ। তিনি গত শুক্রবার ব্রিফিংয়ে বলেন, অ্যানিমেশনে ব্যবহৃত ম্যাপের সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো দেশের সম্পর্ক নেই। এটা ফ্লোরিডা ছিল না। শুধু তা-ই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অঙ্গরাজ্যই ছিল না এখানে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বক্তব্যটি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেনি।
পুতিনের বক্তব্যে সংঘাতের আভাস ছিল না। তাঁর কথা কোনো যুদ্ধবাজের কথার মতো ছিল না। বরং এটি ছিল রাশিয়ার প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের কথা জানানোর একটি আয়োজন। উদ্দেশ্য যা-ই থাকুক না কেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পুতিনের ঘোষণাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়নি। দ্রুতই এর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ সাংবাদিকদের বলেছে, দশকের বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল থাকা অস্ত্রব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তোলার ব্যবস্থা করেছে রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেছেন, দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ার তরফ থেকে এটি যৌক্তিক প্রতিক্রিয়া। রাশিয়া এমন কোনো অস্ত্র তৈরি করছে না, যা শত্রুর দেশের অস্ত্রকে অকার্যকর করে ফেলবে। বরং শত্রুপক্ষের এমন অনেক অস্ত্র আছে, যার কাছে রাশিয়া অসহায়। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্যাটিজিক স্টাডিজের সামরিক বিশেষজ্ঞ আইগর সুতইয়াগিন বলেন, রাশিয়ার যুক্তিগুলো বিভ্রান্তিকর। আর যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কখনোই রাশিয়ার এমন অত্যাধুনিক অস্ত্রকে অকার্যকর করে দেওয়ার মতো করে তৈরি করা হয়নি। চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগের ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্সের জ্যেষ্ঠ গবেষক মার্ক গালেওত্তি বলেন, সব পারমাণবিক কর্মসূচিই হালনাগাদ হতে হয়। কিন্তু রাশিয়ার অস্ত্রটি ধ্বংস করার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্ষমতাধর। তবে এটা ধীর গতিতে এগোবে। আর পুতিনের আমলে এর ব্যবহার হবে না বলেই তিনি মনে করেন। ক্রেমলিনের সাবেক উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ভ্লাদিমির ফ্রোলোভ এটাকে ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ ধরনের অস্ত্র আলোর মুখ দেখবে না বলেই মত তাঁর।

No comments

Powered by Blogger.