ফয়জুরকে ঘিরে তদন্ত, আরো কয়েকজন আসামি by ওয়েছ খছরু ও আরাফ আহমদ

জনপ্রিয় লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুরকে ঘিরে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রাথমিক তদন্তে ফয়জুর জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী বলে তাদের মনে হয়েছে। ওই বিশ্বাস থেকেই সে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় সে একাই অংশ নিয়েছিল নাকি আরো কেউ ছিল তা বের করতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। ফয়জুরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র‌্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ ধরনের হামলা সাধারণত একা করতে পারে না। তবে জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুর জানিয়েছে সে একাই হামলা চালিয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, ফয়জুরের সঙ্গে হয়তো আরো একজন ছিল। তাকে ধরা যায়নি। এদিকে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ফয়জুরকে প্রধান আসামি করা হলেও অজ্ঞাত আরো চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে ড. জাফর ইকবালের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎকরা। ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভে উত্তাল ছিল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এছাড়া রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। শাহবাগে সমাবেশ করে হামলার ঘটনায় দুইদিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। হামলার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সংবাদ সম্মেলন করে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা জানিয়েছেন।
হামলাকারী ফয়জুরকে নিয়ে সিলেটে কৌতূহলের অন্ত নেই। শহরতলীর শেখপাড়া এলাকার মানুষও তাকে তেমন চিনতেন না। মাঝেমধ্যে মসজিদে নামাজে যেতো। নতুবা বেশিরভাগ সময়ই থাকতো এলাকার বাইরে। দিরাইয়ের জগদল গ্রামেও তার ছিল আরেক পরিচিতি। কখনো সবজি বিক্রেতা, কখনো ফেরিওয়ালা হিসেবে সবাই চিনতো তাকে। মাঝেমধ্যে চলে যেতো দিরাইয়ের জগদলে। ওই এলাকায়ও সে কারও সঙ্গে মিশতো না। র‌্যাব কর্মকর্তারা গতকাল তাকে নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন। ওই সময় তারা জানিয়েছেন, ফয়জুর জঙ্গিবাদকে বিশ্বাস করে। আর ওই বিশ্বাস থেকে সে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছে। এর বেশি কিছু র‌্যাব তার কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারেনি।
হামলার আগে কালো শার্ট ও জিন্স প্যান্ট পরা ফয়জুর অনুষ্ঠানের সময় ড. জাফর ইকবালের ঠিক পেছনে দাঁড়িয়েছিল। প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র-শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তার দাঁড়ানোর ঢং দেখে সবাই মনে করেছিলেন ফয়জুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মুখে দাড়ি রয়েছে। ড. জাফর ইকবাল মঞ্চে নীরবে চেয়ারের মধ্যে বসেছিলেন। দীর্ঘক্ষণ ফয়জুরও তার পেছনে দাঁড়িয়েছিল। তার মুখ দেখে কেউ-ই সন্দেহ করতে পারেনি। অনুষ্ঠানের তখন শেষ পর্যায়ে। ড. জাফর ইকবাল বক্তব্য রাখবেন খানিক পরে। এমন সময় লাফ দিয়ে এসে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে সে। এ সময় এগিয়ে আসেন সবাই। তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। ফয়জুর নিজ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এমনটি ঘটিয়েছে বলেও সে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। জানিয়েছে, ড. জাফর ইকবাল ‘ইসলামবিদ্বেষী’। এটি তার পছন্দ ছিল না। এতে সে একাই পরিকল্পনা করে তার ওপর হামলা চালিয়েছে। ক্যাম্পাসের ঘটনাস্থল থেকে বেশি দূরে নয় ফয়জুরের বাড়ি। দুই কিলোমিটারের মতো হবে। ঘটনার দিন সে অনেক আগে থেকে ওখানে অবস্থান করছিল। ব্লগার ও প্রগতিমনা লেখকদের ওপর হুমকি আসার পর থেকে ড. জাফর ইকবাল ছিলেন সুরক্ষিত। তার নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে যেদিকেই জাফর ইকবাল যান সেদিকেই পুলিশ তাকে নিরাপত্তা দেয়। এমনকি জাফর ইকবাল ক্লাসে থাকলেও পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে দরজায়। ঘটনার দিন শনিবারও পুলিশ ছিল ওখানে। কিন্তু পুলিশ ছিল একটু দূরে। কাছাকাছি ছিল হামলাকারী ফয়জুর রহমান। সে ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়েছিল। ছবিতে দেখা যায় হামলার ঠিক আগ মুহূর্তে পুলিশ সদস্যরা মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তবে এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল হামলাকারী ফয়জুর। এ ঘটনায় পুলিশের গাফিলতি ছিল এই বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা দাবি করেছেন ঘটনার পরপরই হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। ফয়জুরের পুরো নাম ফয়জুর রহমান ফয়জুর। মূল বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের জগদল গ্রামে। পিতা হাফিজ আতিকুর রহমান। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফয়জুর দ্বিতীয়। প্রথম ভাই কাতার প্রবাসী। শহরতলীর শেখপাড়া গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য গিয়াসউদ্দিন জানিয়েছেন, ফয়জুরের পিতা আতিকুর রহমান প্রায় ৫ বছর আগে তাদের গ্রামে জমি কিনে বাড়ি তৈরি করেন। ওই বাড়িতে ফয়জুর সহ তারা বসবাস করতেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। পাশেই ফয়জুরের মামা ফজলুর রহমানের বাড়ি। তাদের দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক। ফয়জুরের পিতা স্থানীয় একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। আর প্রায় সময় গ্রামের মসজিদে নামাজ পড়াতেন। ফয়জুরের সঙ্গে এলাকার কারও কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে সে সম্প্রতি সিলেটের জিন্দাবাজারে একটি কম্পিউটার দোকানে চাকরি নিয়েছিল। ক্যাম্পাসে যখন ফয়জুরকে আটক করা হয় তখনই খবর পেয়ে যান তার পিতা আতিকুর রহমান সহ পরিবারের সদস্যরা। তারা তড়িঘড়ি করে বাসায় তালা দিয়ে চলে যান। কোথায় চলে যান সেটিও কেউ বলতে পারেনি। এমনটি করেন ফয়জুরের মামা ফজলুর রহমানও। তিনিও তার পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে ফেলেন। মধ্যরাতে হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে ফয়জুরের। তখন তার সম্পর্কে তথ্য পায় র‌্যাব সদস্যরা। তাৎক্ষণিক র‌্যাব তার শেখপাড়াস্থ বাসায় তল্লাশি চালায়। কাউকে বাসায় পাওয়া যায়নি। তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে র‌্যাব তল্লাশি চালায় বলে জানান স্থানীয় মেম্বার। ওখান থেকে র‌্যাব সদস্যরা কিছু বই উদ্ধার করেন। তবে সেই বইগুলো কিসের জানা যায়নি। পরে র‌্যাব সদস্যরা পরবর্তীতে ফয়জুরের মামা ফজলুর রহমানের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। গতকাল সকালে শেখপাড়া গ্রামে গেলে স্থানীয় জনতা ছুটে আসেন ফয়জুরের বাড়িতে। তার আগে কেউ-ই ভয়ে ওই বাড়িতে যাননি। গ্রামের লোকজন জানান, কয়েক বছর আগে এই গ্রামে রাজন খুনের ঘটনা ঘটেছিল। এ কারণে এলাকার মানুষ ভয়ে তটস্থ ছিল। এখন ফয়জুরকে ঘিরে গোটা গ্রামের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাতে কয়েক দফা পুলিশ ও র‌্যাব এসেছে । এ কারণে রাতে কেউ আর বের হয়নি। শেষ রাতের দিকে জালালাবাদ থানা পুলিশ এসে আরেক দফা ফয়জুরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে গেছে। এ সময় ফয়জুরের মামা ফয়জুলও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন। রাত ১০টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা ফয়জুরকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে নিয়ে আসা হয় রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আনার প্রায় দুই ঘণ্টা পর তার জ্ঞান ফেরে। জ্ঞান ফেরার পরপরই র‌্যাব প্রথমে তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। প্রথমে নাম বলে শফিকুর রহমান। শেষে বলে ফয়জুর রহমান। রাত সোয়া একটার দিকে সিলেট র‌্যাবের প্রধান প্রেস ব্রিফিং করেন। ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে সে একাই এ হামলা চালিয়েছে। তার সঙ্গে আর কেউ ছিল কি-না সেটি তদন্তে দেখা যাবে। তবে ইসলামবিদ্বেষী কথা বলায় সে নিজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেছে বলে র‌্যাবকে জানিয়েছেন। ওখানে প্রেস ব্রিফিংয়ের পর রাত ২টার দিকে র‌্যাব সদস্যরা তাকে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে আরো উন্নত চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে র‌্যাব তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। দুপুর পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে আরো তথ্য পাওয়া যায়। এদিকে র‌্যাব ফয়জুরের মামা ফজলুর রহমান ছাড়াও দিরাই থেকে তার চাচা আবদুল কাহেরকে গ্রেপ্তার করে। এই দুই জনের সম্পৃক্ততা গতকাল পর্যন্ত র‌্যাব পায়নি। তবে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়নি। রাজা ম্যানশনের একজন ব্যবসায়ীকেও আটক করা হয়। ওই ব্যবসায়ীরও কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। জালালাবাদ থানায় রাত সোয়া ১২টার দিকে এজাহার দাখিল করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশরাকুল ইসলাম। সকালের দিকে পুলিশের পক্ষ থেকে আরো একটি এজাহার দেয়া হয়। পুলিশ দুটি এজাহারকে এক করে গতকাল দুপুরে একটি মামলা রেকর্ড করে। ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে গ্রেপ্তারকৃত ফয়জুর রহমানকে। অজ্ঞাত রাখা হয়েছে আরো ৪-৫ জনকে। বিকালে র‌্যাব সদস্যরা আসামি ফয়জুরকে সিলেটের জালালাবাদ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পুলিশ তার হেফাজতে ফয়জুরকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেছে। এদিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গতকাল ছিল উত্তাল। শিক্ষার্থীরা ঘটনার পর তিন দফা দাবি তুলে ধরেছে। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ ক্যাম্পাসে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে। বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ এক প্রেস ব্রিফিং করে ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়কে অচিরেই সিসি ক্যামেরার আওতার আনা হবে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত লাইটিং করা হবে। ৪ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। হামলাকারী ফয়জুর কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত মঞ্চে গেছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।
দফায় দফায় মানববন্ধন-মিছিল: ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। গতকাল সকাল থেকেই দফায় দফায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে তিনদফা দাবি পেশ করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে হামলার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং সঠিক তথ্যসমূহ প্রকাশ করতে হবে। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার দ্রুত বিচার। ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ কঠোর নিয়ন্ত্রণ, দ্রুত সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। এদিকে সকাল ১১টায় শাবি শিক্ষক সমিতি এবং একই সময় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য সমিতি, দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে মানববন্ধন-মিছিল, সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর সাড়ে ১২টায় শাবি ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিল এবং পরবর্তীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। একই সময় শাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এদিকে দিনব্যাপী শাবি ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ কালোব্যাজ ধারণ করে এই হামলার প্রতিবাদ জানায়। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। এদিকে শিক্ষক সমিতি সোমবার ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে। মানববন্ধন-মিছিল-সমাবেশে এসময় শিক্ষার্থীরা ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও, এক হও’, ‘জাফর স্যারের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘তোমার আমার অধিকার, নিরাপত্তা জোরদার’, দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। এদিকে হামলার বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে লাইব্রেরি ভবনের সামনে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বিকালে অধ্যাপক ড. সৈয়দ সামসুল আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ শাবি শাখা।
ভিসির সংবাদ সম্মেলন: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এই হামলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ড. জাফর ইকবাল এখন সুস্থ ও সম্পূর্ণ শঙ্কা মুক্ত। আমরা আশা করছি তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে আবার ফিরে আসবেন। আর কর্তব্যরত পুলিশের অবহেলা আছে কিনা এই বিষয়ে আমার আইজিপির সঙ্গে কথা হয়েছে, তিনি বিষয়টি দেখবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী যাতে জঙ্গিবাদে না জড়িয়ে পরে এজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ক্লাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক বিভাগকে চিঠি দিয়েছি। ১৫ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকলে তার বিষয়ে খোঁজ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বৃৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পুরো ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা আরো বৃদ্ধি করা হবে। প্রত্যেক পয়েন্টকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার জন্য চার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে। পুরো ক্যাম্পাসে লাইটের সংখা আরো বাড়োনো হবে। এ ছাড়া অচিরেই সীমানা প্রাচীরের কাজ শুরু করা হবে। বিকাল ৪টায় উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
যা বললেন র‌্যাবের সিও: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমান ফয়জুর জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী হয়ে ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালিয়েছে। গতকাল বিকালে র‌্যাব-৯ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘ফয়জুরের কাছ থেকে র‌্যাব বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের একটি দল কাজ করছে। ইতিমধ্যে র‌্যাব তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ ধরনের হামলা কেউ একা করতে পারে না। তার সঙ্গে আরো কেউ ছিল বলে আমরা ধারণা করছি। তবে, জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুর র‌্যাবকে জানিয়েছে, সে একাই হামলা চালিয়েছে।’ এই র‌্যাব কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘ফয়জুর মাদরাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়াশোনার পর আর পড়েনি। বিভিন্ন স্থানে সে কাজ করেছে।’ আজাদ জানায়, ফয়জুরকে সিলেট মহানগরীর জালালাবাদ থানায় হস্তান্তর করা হবে। জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় মূল তদন্ত করবে পুলিশ। তবে, র‌্যাব ছায়া তদন্ত করবে। ফয়জুরের পরিবারের সদস্যদের খোঁজ করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব। সিলেট শহরতলির কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়াস্থ ফয়জুরের বাড়ি থেকে কিছু ইসলামী বইসহ অন্যান্য আলামত র‌্যাবের একটি দল খতিয়ে দেখছে বলেও জানান আলী হায়দার আজাদ।
তদন্ত কমিটি গঠন: শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপর গত শনিবার হামলার ঘটনায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) প্রশাসন কর্তৃক তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শাবি ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করছেন। তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান হলেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল গণি। তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম ও সিএসই বিভাগের প্রফেসর ড. শহীদুর রহমান।

No comments

Powered by Blogger.