ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ

ভারতের ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেন মানিক সরকার (৬৯)। আজ রোববার দুপুরে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যটির রাজ্যপাল তথাগত রায়ের কাছে তিনি তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। রাজ্যপালও তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন। তবে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেউ শপথ গ্রহণ না করা পর্যন্ত মানিক সরকারকেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানোর কথা বলা হয়েছে। জানা গেছে, ভারতের এ রাজ্যর পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী পদে দৌড়ে সবার আগে রয়েছেন রাজ্যটির বিজেপি সভাপতি বিপ্লব কুমার দেব। পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পরই মানিক সরকার গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘আমি রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি এবং তিনি আমাকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী না আসা পর্যন্ত দায়িত্ব সামলানোর কথা বলেছেন’। মানিক সরকার আরো বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য আমি সব সরকারি কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানাই’। বিদায় বেলায় তিনি বলেন, ‘রাজ্যের মানুষ ও প্রশাসন ২০ বছর ধরে আমাকে সরকার চালাতে সহায়তা করেছে। রাজ্যের মানুষ আমাদের সাথে ছিল এবং আমরাও মানুষের সাথে ছিলাম। তাদের সহযোগিতা ছাড়া সরকারি নীতি কার্যকর করা অসম্ভব ছিল। আমি তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করতে চাই না’। মানিক সরকারের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকারের অবসান ঘটিয়ে রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় আসে বিজেপি ও ইন্ডিজিনাস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা (আইপিএফটি) জোট। ৬০ আসন বিশিষ্ট রাজ্যটির ৫৯টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বিজেপি জোট পায় ৪৩টি আসন। এর মধ্যে বিজেপি একাই পায় ৩৫ আসন।
বামেরা পায় ১৬টি আসন। দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম জমানায় ২০ বছর (১৯৯৮ সাল থেকে) একটানা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মানিক সরকার। বিধানসভার নির্বাচনে মোট সাতবার জিতে বিধায়ক হয়েছেন তিনি। প্রথমবার ১৯৮১ সালে উপনির্বাচনে জয় পেয়েছিলেন। এরপর ১৯৮৩, ১৯৮৮, ২০০৩, ২০০৮, ২০১৩ সালে। আর সর্বশেষ বিজেপি ঝড়ের মধ্যেও গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচনে নিজের ধনপুর বিধানসভা কেন্দ্রটি অক্ষত রেখেছেন স্বচ্ছ ইমেজের এ ব্যক্তিটি। ধনপুর আসনটিতে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও নারীনেত্রী প্রতিমা ভৌমিককে পাঁচ হাজার ৪৪১ ভোটে পরাজিত করেন মানিক সরকার। পশ্চিম ত্রিপুরার সিপাহীজলা জেলার এ বিধানসভা আসনটি থেকে এ নিয়ে পরপর পাঁচবার বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তিনি। তবে বামদের এ অপ্রত্যাশিত হারের পর তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে এ দিন সকালে সংবাদমাধ্যমকে মানিক সরকার জানিয়েছেন, ‘সবে গতকাল ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে আমাদের এখন হারের পর্যালোচনা করতে হবে’। তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘আমার কাজ এখন শুধু ত্রিপুরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। গরিবদের জন্য আমি কাজ করে যাবো। ত্রিপুরার গরিব মানুষের নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে তাদের হয়ে লড়াই চালিয়ে যাবো’।

No comments

Powered by Blogger.