হাওরের কৃষকরা আতঙ্কে

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। বাঁধ সংস্কারের নির্ধারিত সময় ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। তবে ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের সংস্কারের কাজ এখনও শেষ হয়নি। এ ছাড়া বাঁধ সংস্কার কাজে প্রকল্প কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে বাঁধ মেরামতের দাবিতে জেলা শহর থেকে শুরু করে হাওরপাড়ের মানুষ নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। জানা গেছে, জেলার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, মদনসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা নিয়ে হাওরাঞ্চল গঠিত। বিশেষ করে ওইসব অঞ্চলে একমাত্র বোরো ফসলের ওপর এলাকার মানুষকে নির্ভর করে চলতে হয়। যথাসময়ে বাঁধ সংস্কার না করা এবং যেনতেনভাবে কাজ করায় প্রায় প্রতিবছর অকাল বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়। গত বছর মার্চের শেষের দিকে হাওরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে ও অকাল বন্যার ফলে জেলার খালিয়াজুরীতে শতভাগ ফসল পানিতে তলিয়ে বিনষ্ট হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাছসহ অন্যান্য প্রাণিজ সম্পদ। মদন, মোহনগঞ্জ, কলমাকান্দা, দুর্গাপুরসহ জেলার অন্য উপজেলায়ও বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এবারও বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ না হওয়ায় ফসলহানির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এ ছাড়া হাওরাঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সমন্বয় না করে সড়ক ও জনপথ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ হাওরের কোনো কোনো এলাকায় সড়ক নির্মাণ করেছে। সেগুলো হাওরবাসীর কোনো কাজেই আসবে না। স্থানীয় প্রশাসন কাজের তদারকী করলেও কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি। তবে কাজের বিল ঠিকই পরিশোধ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও জেলার মদনের মাখনা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ছাত্রনেতা শফি আহমেদ বলেন, হাওরে ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ মোটামুটি হয়েছে। তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা প্রকল্প থেকে বাদ পড়েছে। এগুলো দেখে মেরামত করা প্রয়োজন। তা না হলে হাওরে পানি আসতে শুরু করলে ফসল তলিয়ে যাবে। গত বছরের বন্যায় ধনু নদীতে ৫ থেকে ৬ ফুট পলি জমে।
এ কারণে কয়েকদিন আগে ধনু নদীর লেপসিয়া ও নাওটায় শত শত মালবোঝাই কার্গো আটকা পড়েছিল। যতক্ষণ পর্যন্ত ধনু নদী পরিপূর্ণভাবে খনন করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতেই থাকবে। হাওরে বেড়িবাঁধ সংস্কার একটি সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। পাহাড়ি ঢল এলে বেড়িবাঁধ উপচে হাওরে পানি প্রবেশ করবে। এ থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ পেতে হলে নদী খনন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। খালিয়াজুরী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া জব্বার বলেন, সঠিক নিয়মে প্রকল্প তৈরি করা হয়নি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) বেশিরভাগ কমিটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের নিজস্ব লোকজনদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসওর যোগসাজশে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা বাদ দিয়ে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। পানি আসতে শুরু করলে হাওরে পানি প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে যাবে। নির্মিত এসব বাঁধ কোনো কাজেই আসবে না। নেত্রকোনা জেলার হাওর উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি স্বাগত সরকার শুভ বলেন, নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলেও অধিকাংশ বাঁধ মেরামতের কাজ এখনও শেষ হয়নি। অধিকাংশ প্রকল্পে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ায় এ অনিয়ম হয়েছে। খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার আবদুল্লাহ আল-মামুন বাবু বলেন, প্রায় সব বাঁধেই মাটি ফেলানোর কাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে সংস্কারের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে বাঁধের মাটি লেবেল করার কাজ। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় এখন আর কোনো বাঁধ নেই। অকাল বন্যায় ফসলহানির সম্ভাবনা কম। নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়নি। আর এখন কাজের তদারকি করে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্নিষ্ট এসও। তবে সংস্কার কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি। ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.