শ্রীলংকায় নতুন রাজনৈতিক সঙ্কটের আশঙ্কা

শ্রীলংকায় স্থানীয় নির্বাচনের তাৎপর্য তেমন অর্থপূর্ণ নয়। তবে তা থেকেও দেশটির ভবিষ্যত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক অনিশ্চয়তা ভর করেছে। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের নেতৃত্বে নতুন গড়ে তোলা দল ব্যাপক বিজয়ের পর এ আলোচনা জোরালো হয়েছে। দু’বারের সাবেক একই প্রেসিডেন্টের এভাবে ফিরে আসা এক বিস্ময়কর বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও যুদ্ধ অপরাধের অভিযোগে ২০১৫ সালে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। ৭২ বছর বয়সী রাজাপাকসে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ২০০৫ সালে।
এরপর ২০১০ সালে আবার। এর এক বছর পরে তামিল বিদ্রোহীদের দমন করে তার সরকার। এর মধ্য দিয়ে শ্রীলংকায় ২৫ বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। নির্বাচনের ফল প্রকাশের প্রাক্কালে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অনলাইন সিএনএনে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক মানভীনা সুরি ও স্টিভ জর্জ। গত রোববার সেখানকার স্থানীয় নির্বাচনে তার দল বিস্ময়কর বিজয় অর্জন করে। এর মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর সংঘাত ও অস্থিতিশীলতায় আঘাতপ্রাপ্ত সেখানকার ভঙ্গুর রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেন আবার হুমকিতে পড়লো। নিজের ফেসবুক পেজে একটি বার্তা পোস্ট দিয়েছেন রাজাপাকসে। এতে তিনি বলেছেন, নির্বাচনে আমাদের বিজয় এটা পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তোলে যে, নিষ্ক্রিয়তায় শ্রীলংকানরা হতাশ। তারা নতুন করে শ্রীলংকাকে গড়ে তুলতে চান। এর মধ্য দিয়ে তিনি স্থানীয় এই নির্বাচনকে একটি গণভোটের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সরকার বিরোধী তার যে আন্দোলন তাতে তিনি মূল ভূমিকায় উঠে এসেছেন। তার প্রচারণা থেকে টার্গেট করা হয়েছে, সরকারের অর্থনীতি, উচ্চ হারে ট্যাক্স আরোপ। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা জাতীয় সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেও তার সমর্থকরা অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন, হ্যামবানটোটা বন্দর ৯৯ বছরের জন্য চীনের কাছে লিজ দিয়েছে সরকার। এ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। শ্রীলংকায় আগামী দু’বছরের মধ্যে পার্লামেন্ট নির্বাচনের শিডিউল নেই। তবু স্থানীয় নির্বাচনে রাজাপাকসে যতটা ভাল করেছেন তা সরকারের জন্য একটি বড় আঘাত। বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ২০১৫ সালে সরকার গঠন করেন। তার সঙ্গেী হয় কতগুলো সংখ্যালঘু গ্রুপ। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিকেন্দ্রীকরণে, সরকার গঠনে স্বচ্ছতায়। সেখানে স্থানীয় নির্বাচনে মাহিন্দ রাজাপাকুসের দল পোডুজানা পেরামুনা, যা পিপলস ফ্রন্ট নামে পরিচিত, তারা পেয়েছে শতকরা ৪৪.৬৫ ভাগ আসন। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমেসিংঘের ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি। তারা পেয়েছে শতকরা ৩২.৬৩ ভাগ আসন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার শ্রীলংকা ফ্রিডম পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম এলায়েন্স রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তারা পেয়েছে মাত্র ৮.৯৪ ভাগ সমর্থন।

No comments

Powered by Blogger.