ট্রাম্পের বুকফাটা আর্তনাদ!

পরমাণু সমঝোতার ভিত্তিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের কিছু পাওনা পরিশোধ করায় তীব্র কষ্ট পেয়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এক টুইটার বার্তায় বুকের ভেতরের সে কষ্টের কথা প্রকাশ করে দিয়েছেন। এমনই মন্তব্য ইরানের এক সংবাদমাধ্যমের। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মার্কিন ধনকুবের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোববার তার বার্তায় লিখেছেন,
‘আমি কখনো একথা ভুলতে পারব না যে, ওবামা ১৭০ কোটি ডলার নগদ অর্থ ইরানের হাতে তুলে দিয়েছেন। অথচ কংগ্রেস, এফবিআই কিংবা বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে এর কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালের গোড়ার দিকে ক্ষমতা গ্রহণ করেই তার দেশসহ সাত বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সহযোগিতায় তার নির্বাচনে জয়লাভ নিয়ে আমেরিকায় তোলপাড় শুরু হওয়ায় জনমতকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে ইরান বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। ট্রাম্প ইরানকে যে ১৭০ কোটি ডলার নগদ অর্থ দেয়ার কষ্ট ভুলতে পারছেন না সে অর্থ ছিল ইরানের পাওনা যা কয়েক দশক ধরে আমেরিকার কাছে আটকা ছিল। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে ওয়াশিংটন নানা অজুহাতে এ অর্থ আটকে রাখলেও ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতায় তা ফেরত দিতে সম্মত হয় তৎকালীন ওবামা প্রশাসন। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে পরমাণু সমঝোতার বাস্তবায়ন শুরু হলে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সে অর্থ তেহরান ফেরত পায়।
পরমাণু সমঝোতা বাতিলে অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন ট্রাম্প : ইরান
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, ছয় জাতির সঙ্গে সই হওয়া পরমাণু সমঝোতা ইরান মেনে চললেও আমেরিকা এরইমধ্যে এর কোনো কোনো ধারা লঙ্ঘন করেছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহে তেহরানে ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব এশিয়ান পলিটিক্যাল পার্টিস বা আইসিএপিপি'র সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমেরিকা প্রথম থেকেই পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে শত্রুতা করে আসছে। সমঝোতা বাতিল করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপচেষ্টার প্রতি নজর রাখতে এশিয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি তিনি আহ্বান জানান। আরাকচি বলেন, মার্কিন সরকার পরমাণু সমঝোতা বাতিল করতে ইউরোপীয় দেশগুলোর সমর্থন চেয়েছে। তিনি বলেন, পরমাণু ইস্যুতে সৃষ্ট কৃত্রিম সংকট সমাধানে ইরান সরকার আলোচনায় যোগ দিয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশ অন্য দেশের ক্ষতি করে নিজে আঞ্চলিক শক্তি হওয়ার চেষ্টা করছে এবং যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পুতিন : ‘টিভির ট্রাম্প আর বাস্তবের ট্রাম্প এক নয়’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, টেলিভিশনে যে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখা যায় তার সঙ্গে বাস্তবের ট্রাম্পের কোনো মিল নেই। জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের অবকাশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর এ মন্তব্য করেছেন পুতিন। তিনি বলেন, সাক্ষাতের পর তার মনে হয়েছে আংশিকভাবে হলেও আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। ‘ব্যক্তিগত পর্যায়ে সে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন পুতিন। গত সেপ্টেম্বরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক সম্পর্কে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এ বৈঠকের মতো করে যদি আমরা আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাই তাহলে দু’দেশের মধ্যে আংশিকভাবে হলেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। পুতিন বলেন, বৈঠকে আমেরিকার গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের অভিযোগের বিষয়টি তুলেছিলেন ট্রাম্প। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, ওই নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল। ২০১৬ সালের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে রাশিয়াই ডোনাল্ড ট্রাম্পর্কে প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সেইসঙ্গে মার্কিন গণমাধ্যমে একথা ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে যে, বহু বছর আগে রাশিয়া সফরে গিয়ে ট্রাম্পের যে চারিত্রিক স্খলন হয়েছিল তার ভিডিও চিত্র মস্কোর হাতে রয়েছে এবং সেই ফুটেজ দিয়েই ট্রাম্পকে কাবু করে ফেলেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এই দু’টি অভিযোগই রুশ প্রেসিডেন্ট অস্বীকার করেছেন। আর ওই দুই অভিযোগের সত্যতা সম্পর্কে জনমনে জল্পনা চলতে থাকার মধ্যেই প্রথমবারের মতো পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করলেন ট্রাম্প।

No comments

Powered by Blogger.