সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার পেতে যা করছে কিশোর-কিশোরীরা

এমনিই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো এখন ল্যাপটপ, মোবাইলে ডুবিয়ে রেখেছে শিশু থেকে কিশোর ও যুব সম্প্রদায়কে। আর নতুন এক সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের কিশোর-কিশোরীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের পরিচিতি আরো বাড়াতে নাকি রাত-দিন নানাভাবে কাঠখড় পুড়িয়ে চলেছে। কেমন ছবি দিলে তাতে লাইক বেশি পড়বে, কোন পোস্ট দিলে সেটা অন্য ইউজাররা পড়ে দেখবে এই সবই সারাক্ষণ ঘোরাফেরা করছে কিশোর-কিশোরীদের মনে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামই এখন তাদের সারাদিনের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরা মূলত প্রাথমিকভাবে খেয়াল রাখছে, কোন পোজে ছবি তুললে তা সোশ্যাল মিডিয়ার বন্ধুদের কাছে আকর্ষণীয় হবে, সেই সব বিষয়টিই তারা সবথেকে বেশি মাথায় রাখে। গবেষকদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ঃসন্ধিকালের কিশোর-কিশোরীরাই অন্য বন্ধুর মনে ছাপ ফেলতে সবথেকে বেশি ব্যস্ত থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরভিনে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোয়ানা ইয়াউ বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীরা অযত্নের সঙ্গে কোনো পোস্ট করে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা কী পোস্ট করছে, সে ব্যাপারে তারা আশ্চর্যজনকভাবে সচেতন থাকে।’ ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম সাধরণত যুব সম্প্রদায়কে গোটা বিশ্বের সঙ্গে তাদের ভাবনা আদান-প্রদান করার অনেক বড় সুযোগ করে দিয়েছে। যাদেরকে তারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনে যেমন তাদের ক্লাসের বন্ধু তাদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার পরও যাতে যোগাযোগ রাখা যায়, সেটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত রেখেছে কিশোর-কিশোরীদের। অনলাইনে নিজেদের আরো সুন্দর করে প্রদর্শন করার সুযোগ করে দেয় এই সোশ্যাল মিডিয়াই। আর সেইসব কারণেই ধীরে ধীরে কিশোর-কিশোরীরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে সোশ্যাল মিডিয়ার ওপরই সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। গবেষকরা বলছেন, কিশোরীদের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট আরো বেশি গুরুত্ব বহন করে। কীভাবে কোনও পোস্ট তারা করবে সে ব্যাপারে তারা অন্যদের কাছ থেকে পরামর্শও নেয়। ছবি পোস্ট করতে বেশি সময় লাগিয়ে দেয়। তারপর সেই ছবিতে ক্যাপশন দিয়ে সেটি বিশেষ বিশেষ বন্ধুদের কাছে শেয়ার করা। গোটা এই পদ্ধতিতে সময়ও লাগে অনেকটাই বেশি।
কারণ কিশোরীরা ফোটো ক্যাপশনে অনেক কিছু লিখে তারপর সেটি পোস্ট করে। এমনকী তাদের নিজেদের ফটোয় যাতে বন্ধুরা কমেন্ট বা লাইক করে সেই জন্য তারা অন্য বন্ধুদের নানা পোস্টেও খুঁজে খুঁজে লাইক করে। ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকে এই ধরনের কিশোরীরা প্রায় সারাক্ষণই অনলাইন থাকে। যাতে তাদের লাইক ও কমেন্টের সংখ্যা আরও বাড়ে। এমনকী তারা নিজের ফোটোয় কমেন্ট বা লাইক করার জন্য বন্ধুদের অনুরোধও করে। কিশোররা অবশ্য ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ব্যস্ত থাকলেও তারা নিজেদের পোস্টে কমেন্ট বা লাইক করার জন্য অন্য বন্ধুদের কাছে অনুরোধ করে না বলে সমীক্ষায় জানা গিয়েছে। গবেষক ইয়াউয়ের মতে, আমরা দেখেছি যে কিছু কিছু কিশোর-কিশোরী ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম নিয়ে এতটাই সতর্ক এবং পোস্ট নিয়ে এতটাই ভাবছে যে কিছু কিছু সময় তা আদতে তাদের হতাশ করে দেয়। ফলে সামনা সামনি কথা বলার বদলে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলছে বলে তাদের মধ্যে স্পর্শকাতরতা ও ভাবাবেগের বিষয়গুলিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ ফলে সাধারণ কোনও ইতিবাচক পোস্টকেও তারা ভুলভাবে নিয়ে ফেলছে। ইতিবাচক সাধারণ পোস্টের গুরুত্ব বুঝতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বয়ঃসন্ধিকালের ৫১ জন কিশোর-কিশোরীর ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। তার মধ্যে ছিল ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি ২৭ জন কিশোরী এবং ২৪ জন কিশোর। তারপর বয়স, তাদের ক্লাস এবং লিঙ্গ বেছে তিন থেকে আটজনের মধ্যে দল ভাগ করে ১০টি দলের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। শুধু কিশোর, শুধু কিশোরী এবং কিশোর-কিশোরী উভয় - এইভাবে দলগুলোকে ভাগ করা হয়। এবং সমীক্ষা চালানোর সময় কোনো প্রাপ্তবয়স্ককে সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.