তারিক রামাদানকে নিয়ে এ কোন ষড়যন্ত্র? by জি. মুনীর

তারিক রামাদান। জন্ম ১৯৬২ সালের ২৬ আগস্ট, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। তার জন্ম এক মিসরীয় মুসলমান পরিবারে। বাবা সৈয়দ রামাদান আর মা ওয়াফা আল-বান্না। যিনি ছিলেন হাসান আল-বান্নার জ্যেষ্ঠ কন্যা। এই হাসান আল-বান্না ১৯২৮ সালে মিসরে প্রতিষ্ঠা করেন সুপরিচিত রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুড। মিসরের ট্রেড ইউনিয়নিস্ট, লেখক ও উদার সংস্কারবাদী মুসলিম জামাল আল-বান্না (১৯২২-২০১৩) ছিলেন হাসান আল-বান্নার (১৯০৬-৪৯) কনিষ্ঠ ভাই। তারিক রামাদানের বাবা সৈয়দ রামাদান ছিলেন মুসলিম ব্রাদারগুডের প্রথম সারির নেতা। তাকে মিসরের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জামাল আবদুল নাসের মিসর থেকে সুইজারল্যান্ডে নির্বাসনে পঠান। সেখানে জন্ম হয় তারিক রামাদানের। সুইজারল্যান্ডে জন্ম নেয়া তারিক রামাদান একজন ফরাসি-সুইস মুসলিম। একজন শিক্ষক, লেখক ও দার্শনিক। তিনি অক্সফোর্ডের সেন্ট অ্যান্টোনিস কলেজের ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির কন্টেম্পরারি ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের থিওলজি অ্যান্ড রিলিজিয়ন ফ্যাকাল্টির (ধর্মতত্ত্ব ও ধর্মবিষয়ক অনুষদের) ছাত্রদের পড়ান। তিনি কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির এবং মরক্কোর মুন্ডিয়াপলিস বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক। তিনি জাপানের দোশিশা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, দোহাভিত্তিক ‘রিসার্চ সেন্টার ফর ইসলামিক লেজিসলেশন অ্যান্ড এথিকস’ তথা সিআইএলই-এর ডিরেক্টর এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতরের ‘অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অন রিলিজিয়ন অর বিলিফ’-এর সদস্য। তিনি ২০০০ সালে টাইম ম্যাগাজিনের নির্বাচিত একুশ শতকের সাতজন রিলিজিয়াস ইনোভেটরের একজন এবং ২০০৪ সালে নির্বাচিত হন বিশ্বের ১০১ জন সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তির একজন। ‘ফরেন পলিসি’ পাঠকদের ভোটে তিনি ২০০৫, ২০০৬, ২০০৮-২০১০, ২০১২-২০১৫ সালে বিবেচিত বিশ্বের শীর্ষ ১০০ জন প্রভাবশালী চিন্তাবিদ ও একজন বৈশ্বিক চিন্তাবিদ। তারিক রামাদান নিজেকে একজন ‘সালাফি সংস্কারক’ বলে দাবি করেন। তার মুখ্য আগ্রহের ক্ষেত্র হচ্ছে ইসলামি শিক্ষা, ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, রাজনীতি, আন্তঃধর্ম সংলাপ, সাহিত্য ও সংস্কার। এ মানুষটিকে গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ থেকে প্যারিসের ফ্লিউরি-মেরোগিস কারাগারে একটি নির্জন সেলে কড়া নিরাপত্তায় আটক রাখা হয়েছে। তাকে তার পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি তার সাথে ফোনেও কথা বলার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি লিওন ও প্যারিসে দুই নারীকে ধর্ষণ করেছেন, যথাক্রমে ২০০৯ ও ২০১২ সালে। বলা হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়েরের জন্য তদন্ত চলছে। ২০১৭ সালের অক্টোবরে ধর্মনিরপেক্ষ সক্রিয়বাদী Henda Ayari রওয়েনের প্রসিকিউটরের অফিসে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন, তারিক রামাদান তাকে প্যারিসের একটি হোটেলে যৌন নির্যাতন করেছেন। এই মহিলা এর আগে এ অভিযোগের ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন ২০১৬ সালে তার প্রকাশিত বই ’ai choisi d’être libre (in English I Chose to be Free)’-এ। তবে সে বইয়ে তিনি তার ওপর যৌন হামলাকারীর প্রকৃত নাম প্রকাশ করেননি। ২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর তিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঘোষণা করেন : This is a very difficult decision, but I also have decided it is time to denounce my aggressor, who is Tariq Ramadan. এভাবেই তিনি তারিক রামাদানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির কথাটি প্রকাশ করেন। তখন রামাদানের আইনজীবী ইয়াসিন বওজরৌ বলেন, তিনি এই মহিলার বিরুদ্ধে তারিক রামাদানের পক্ষে মানহানির মামলা দায়ের করবেন রওয়েনের প্রসিকিউটরের অফিসে। তা ছাড়া তিনি সে দেশের একটি পত্রিকাকে জানান, তারিক রামাদান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ মহিলার এই অভিযোগের কিছু দিন পর দ্বিতীয় আরেক মহিলা তারিক রামাদানের বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। ৪৫ বছর বয়সী এই প্রতিবন্ধী মহিলা অভিযোগ করে ২০০৯ সালে তারিক রামাদানে হোটেল কক্ষে তাকে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ করা হয়। তৃতীয় আরেক মহিলা দাবি করেন, তারিক রামাদান তাকে পর্নোগ্রাফিক মেসেজ পাঠাতেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তাকে ব্ল্যাকমেইল করে যৌন হয়রানির শিকারে পরিণত করেন। আরো চারজন সুইস মহিলা ২০১৭ সালের দিকে একের পর এক সামনে আসেন, তারাও তারিক রামাদানের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হন, যখন এরা টিনএজার ছিলেন। ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর ফ্রান্সের স্যাটায়ারধর্মী পত্রিকা ‘চার্লি হেবডো’ একটি প্রচ্ছদ কাহিনী প্রকাশ করে তারিক রামাদানের এসব বিষয়কে অনুষঙ্গ করে। ৯ নভেম্বর এসব অভিযোগের কথা উল্লেখ করে ফ্রান্সের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রচ্ছদ কাহিনী প্রকাশ করে। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে কাতার সরকার এই অভিযোগের প্রেক্ষাপটে তারিক রামাদানকে কাতারে প্রবেশ করতে দেয়নি। ৩১ জানুয়ারি ফ্রান্সের পুলিশ তাকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন। উল্লেখ্য, গত বছরের নভেম্বরে তারিক রামাদান অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ছুটি নেন ধর্ষণ ও যৌন অসদাচরণের এই মামলা মোকাবেলা করার জন্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলে হয়, তারিক রামাদান এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে agreed leave of absence নিয়েছেন to contest allegations of rape and sexual misconduct। আর এই ‘agreed leave of absence-এর অর্থ acceptance or presumption of guilt নয়। কিন্তু ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের পুলিশ তার বিরুদ্ধে এই মামলার আনুষ্ঠানিক চার্জশিট দাখিল করে। আর ২ ফেব্রুয়ারি থেকে তাকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। আসলে তাকে অন্যায়ভাবে আটক রাখা ফ্রান্সের বিচারব্যবস্থার ভাবমর্যাদাকেই ক্ষুণ্ন করছে। উল্লেখ্য, গত ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ তারিক রামাদান স্বেচ্ছায় প্যারিস পুলিশের কাছে যান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের জবাব দিতে। তিনি তদন্ত কর্তৃপক্ষের সাথে পূর্ণ সহযোগিতাও করেন। এর পরও তাকে কারাগারে আটকে রেখে তার সাথে নির্দয় ব্যবহার করা হচ্ছে। মোটামুটি তার সাথে করা আচরণ রীতিমতো অবর্ণনীয় বিদ্রুপাত্মক। এ যেন বিচারের আগেই তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করে নেয়ার শামিল। লিওনের ঘটনার অভিযোগে অভিযোগকারী বলেছেন- তাকে তারিক রামাদান ধর্ষণ করেছেন একটি হোটেলে ২০০৯ সালের ৯ অক্টোবর বিকেলে। কিন্তু তারিক রামাদানের অ্যাটর্নি প্রসিকিউশনের কাছে প্রমাণ দাখিল করেছেন, তারিক রামাদানের ফ্লাইট লন্ডন থেকে লিওনে পৌঁছেনি সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটের আগে। আর সাড়ে ৮টার দিকে শত শ্রোতার উপস্থিতিতে একটি হলে তিনি ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্যারিস পুলিশ পরে নিশ্চিত করে, তারা এই এভিডেন্স গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু তা পরে কেস ফাইলে ছিল না, কারণ তা হারিয়ে যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে তারিক রামাদানের ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটের আগে লিওনেই পৌঁছেনি, সেখানে তিনি কী করে ওইদিন বিকেলে একটি হোটেলে এক মহিলাকে ধর্ষণ করতে পারেন। আবার যেখানে তিনি সাড়ে ৮টায় আবার একটি হলে সাধারণ্যে ভাষণও দেন। তা কি প্রমাণ করে না, এটি একটি সাজানো ধর্ষণ মামলা? আরো অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, ২০০৯ সালে এই অভিযোগকারী ও ফ্রান্সের উচ্চপদস্থ ম্যাজিট্রেট মাইকেল ডিবাকের মধ্যকার সাক্ষাতের বিষয়টি, যে সাক্ষাৎকারটি ঘটে অধ্যাপক তারিক রামাদানের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর উদ্দেশ্যে কুখ্যাত ইসলামোফোব ক্যারোলিন ফৌরেস্ট এবং অ্যান্টোনি সেফির ডিবাকের সহায়তায়। বিষয়টি ফৌরেস্ট ও অভিযোগকারী কিস্টিলির বক্তব্যের সাথে সাংঘর্ষিক। ডিবাক বর্তমানে কাজ করছেন ফ্রান্সের কোর্ট অব কেসেশনে। তিনি এর আগে কখনো এ কথা প্রকাশ করেননি যে, তার সাথে ক্রিস্টিনি বা এই মামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল। এটি তার পক্ষ থেকে ফ্রান্সের আইনের ও নৈতিকতার লঙ্ঘন। অপর দিকে অভিযোগে উল্লিখিত প্যারিসের ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালে। এ ঘটনাটি তারিক রামাদানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়টিকে আরো অসাড় প্রমাণ করে। এই ঘটনার অভিযোগকারী হচ্ছেন হেন্দ্রা অ্যাভারি। তিনি ২০১৪ সালের জুন ও আগস্টের মধ্যবর্তী সময়ে ফেসবুকের মাধ্যমে তারিক রামাদানের কাছে কমপক্ষে ৮০টি মেসেজ পাঠান। এগুলো তিনি পাঠান উল্লিখিত ঘটনার দুই বছর পর। এ দিকে উদঘাটিত হয়েছে, অ্যাভারি সম্প্রতি ফ্রান্সের গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন, তিনি এসব মেসেজ পাঠিয়েছেন এবং এগুলো পাঠিয়েছেন তার তৈরি দ্বিতীয় আরেকটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে। প্রথম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তারিক রামাদানকে অত্যুক্তি করছিলেন বলে তারিক রামাদান প্রথম অ্যাকাউন্টটি ব্লক করে দিলে এই মহিলা দ্বিতীয় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলেন বলেও স্বীকার করেন। সম্প্রতি এ ব্যাপারটি উৎঘাটিত হওয়ার কারণেই হয়তো অ্যাভারি গত সপ্তাহে পুলিশের ডাকে সাড়া দিয়ে পুলিশের সাথে দেখা করেননি। কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে, এ দুই মহিলার অভিযোগ সারবেত্তাহীন হওয়ার বিষয়টি ক্রমেই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হওয়ার পরও সরকার পক্ষ তারিক রামাদানকে আটকে রেখেছে কারাগারে। ফ্রান্সের মূলধারা গণমাধ্যমও এ ব্যাপারে রহস্যজনক পক্ষপাতদুষ্টতা অবলম্বন করে চলেছে। গণমাধ্যমগুলো এই সাজানো মামলাকে কেন্দ্র করে পক্ষপাতদুষ্টতা ছাড়াও তারিক রামাদানের ভাবমর্যাদা বিনাশের অপচেষ্টায়ও শামিল হয়েছে। উদাহরণ টেনে বলা যায়, বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, তারিক রামাদানের কাছে একটি মিসরীয় পাসপোর্ট রয়েছে। তিনি এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে মিসরে পালিয়ে যেতে পারেন। আসলে তার কাছে কোনো মিসরীয় পাসপোর্ট নেই। তিনি শুধু সুইজারল্যান্ডেরই নাগরিক। তারিক রামাদান সম্পর্কে ফ্রান্সের গণমাধ্যমের এই অপপ্রচার এবং সে দেশের বিচারব্যবস্থা তার প্রতি যে আচরণ করছে, তা বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফরাসি সমাজ সেসব মানুষকে সহজে গ্রহণ করতে পারে না, যারা সে দেশে ইসলাম-বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে সাহসিকতার সাথে প্রতিবাদ করে। আর তারিক রামাদান দীর্ঘ দিন ধরে সে কাজটিই করে আসছেন। তিনি ফ্রান্সে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে চলা মুসলমানদের অধিকারসংক্রান্ত বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলে আসছেন। সার্বিকভাবে ইউরোপ জুড়ে এক ধরনের ইসলামফোবিয়া চলছে। সেখানে মুসলমানদের দরিদ্র ও ক্ষমতাহীন করে রাখার প্রবণতা ইউরোপীয় সমাজে চলছে। বিষয়টি ইউরোপের মুসলমানদের মধ্য এক ধরনের উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। তারিক রামাদান এসব বৈষম্যের প্রবল সমালোচক। তা ছাড়া তিনি আল্ট্রা-কনজারভেটিভ মুসলিমদের গোঁড়ামি ও মুসলিম শাসকদের কর্তৃত্বপরায়ণতারও সমালোচক। তারিক রামাদানকে এই নাজেহাল করা এবং এ ধরনের অভিযোগ এনে তার ব্যক্তিমর্যাদা খাটো করার হীন প্রচেষ্টার সাথে বিভিন্ন মহলের ইন্ধন থাকতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। তার বিরুদ্ধে এই আচরণ শুধু ইসলাম বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের নিবর্তনমূলক কোনো বিষয়ই নয়, বরং হতে পারে তার মতো একজন মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্য বিভিন্ন মহলে ইন্ধন জোগান দিচ্ছে ফ্রান্স সরকার। আর হঠাৎ করে পুরনো দিনের নানা অভিযোগ নিয়ে মহিলাদের অভিযোগের এই কোরাস শুরু হলো এবং তার প্রতি সরকারের কঠোর আচরণই কেন চলছে, তা কিন্তু নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। এটি ফ্রান্সের এক ধরনের অন্যায় ও গোঁড়ামি। এসব নানা বিষয় মনে রেখে অনেকেই আশঙ্কিত, এই সাজানো মামলায় তারিক রামাদান ন্যায়বিচার পাবেন কি না।

No comments

Powered by Blogger.