আইনে আছে, বাস্তবে নেই

আইন অনুযায়ী, রপ্তানি ও আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার, কাভার্ড ভ্যান বা ট্রাকে ইলেকট্রনিক সিল ও তালা ব্যবহার বাধ্যতামূলক হলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। ফলে কার্যকর হচ্ছে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এ-বিষয়ক বিধিমালা। ছয় বছর ধরে আলোচনা ও গবেষণার পর এনবিআর ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ‘ইলেকট্রনিক সিল ও লক সেবা বিধিমালা’ জারি করেছিল। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে যেসব পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হবে, সেসব পণ্য চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) বা অফ-ডকে পরিবহনের ক্ষেত্রে বিধিমালাটি কার্যকর হওয়ার কথা। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, সুশাসনের জন্য ডিজিটালাইজেশন, পণ্যের অধিকতর নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং চুরি ও সম্ভাব্য নাশকতা ঠেকাতেই এক বছরের জন্য বিধিমালাটি জারি করা হয়েছিল। আলিফ করপোরেশন নামক প্রতিষ্ঠানকে বিধিমালার আওতায় লাইসেন্সও দিয়েছে এনবিআর। এই অবস্থায় বিধিমালাটির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি এনবিআরকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সর্বশেষ অবস্থার খোঁজ নেবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জুলফিকার আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, বিধিমালাটি কার্যকরের মূল দায়িত্ব কাস্টমসের। বিধিমালায় উল্লেখ রয়েছে, ইলেকট্রনিক সিল হচ্ছে অবৈধভাবে ঘষামাজা বা পরিবর্তন প্রতিরোধ-সক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিক প্রযুক্তির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেনটিফিকেশন ডিভাইসেস (আরএফআইডি) সম্পন্ন সিল, যা বাহ্যিক গড়নে লক সংযুক্ত হওয়ায় পণ্যের কনটেইনারের নিরাপত্তা বিধান করে। আর লক হচ্ছে কনটেইনারে ব্যবহার উপযোগী লক বা তালা, যা আরএফআইডিভিত্তিক সিল সংযুক্ত, চাবি দিয়ে খোলা ও বন্ধ করতে হয়। বিষয়টি প্রথমে সামনে নিয়ে আসে চট্টগ্রাম কাস্টমস। এই কাস্টম হাউস এনবিআরকে জানায়, বন্দর থেকে খালাসের জন্য প্রতি মাসে ১০ হাজার কনটেইনার চট্টগ্রাম কাস্টমসে আসে। মূলধনি যন্ত্রপাতির পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্কের বাণিজ্যিক পণ্যও থাকে।
আবার বন্ডের আওতায় আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রচলিত সিল ও স্বাক্ষর ব্যবহারের পরিবর্তে পণ্যের অধিকতর নিরাপত্তাব্যবস্থা-সংবলিত ইলেকট্রনিক সিল ও তালা ব্যবহার করা হলে চালানগুলো সার্বক্ষণিকভাবে ট্র্যাকিং করা সম্ভব হবে। বিধিমালাটি জারির পেছনে প্রথম আলোকে একটি উদাহরণ তুলে ধরেন এনবিআরের একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘পতেঙ্গা কাঠগড়ের আইসিডি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের দিকে যাচ্ছিল ২০ লাখ পিস জিনস। পথে সিলগালা খুলে ৩৫১ কার্টন জিনস সরিয়ে নেয় একটি সংঘবদ্ধ দল। পরে পুলিশের অভিযানে তা ধরা পড়ে এবং ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ইলেকট্রনিক সিল ও তালা থাকলে এটি হতে পারত না।’ বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিধিমালাটি অপ্রয়োজনীয়। তাই শুরু থেকেই তাঁরা এর বিপক্ষে মত দিয়ে আসছেন। এনবিআর এটি জোর করে করেছে। আর বিকেএমইএর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনকে (এফবিসিসিআই)  এক মতামতে বলা হয়েছে, বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী সিল ও তালা ব্যবহার হয়ে থাকে। ফলে নতুন কিছুর দরকার নেই। তবে এনবিআরের চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে এফবিসিসিআই বলেছে, ‘কনটেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিতে ইলেকট্রনিক সিল ও লক ব্যবহার আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কনটেইনারে পণ্য পরিবহন বাড়ছে, তাই এ পদ্ধতি চালু করার প্রয়োজনীয়তা আছে।’

No comments

Powered by Blogger.