ভাঙা রাস্তা, যত্রতত্র আবর্জনা, ভোগান্তিতে ৫০ হাজার মানুষ

নাতি সুমনকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় বাড়ি ফিরছিলেন রহিমা বেগম। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর খালপাড় থেকে তিনি অটোরিকশায় ওঠেন। গন্তব্য ওয়ার্ডটির নয়ানগর এলাকা। কিন্তু ভাঙা রাস্তার ঝাঁকুনিতে নাতিকে কোলে নিয়ে স্থির বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। মাঝে মাঝে চালককে ধীরে চালানোর অনুরোধ জানাচ্ছিলেন তিনি। রহিমা বেগম পরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝাঁকুনিতে এদিক-ওদিক ছিটকে যাচ্ছিলাম। এই এলাকার কোনো রাস্তা ভালো নাই। অটোরিকশায় তবুও কিছুটা চলাচল করা সম্ভব। রিকশা হলে ঝাঁকুনি আরও বেশি।’ সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকাবাসীর চলাচলের প্রধান রাস্তা নলভোগ, নয়ানগর, রানাভোলা, ধরঙ্গারটেক ও ফুলবাড়ির কার্পেটিং উঠে গিয়ে ভেঙে গেছে সর্বত্র। পিচঢালাই নষ্ট হয়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের পাশে পানি নিষ্কাশনের নালা না থাকায় শীতেও পানি জমে থাকছে রাস্তায়। আর শুকনো অংশে ধুলাবালি উড়ছে চারদিকে। তাই গন্তব্যে যেতে প্রতিদিন ভোগান্তি পোহাতে হয় ওয়ার্ডটির প্রায় ৫৫ হাজার বাসিন্দাকে। ধরঙ্গারটেকের বাসিন্দা আলী আহম্মদ বলেন, ‘অনেক কষ্টে আছি।
রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। কোথাও গেলে শরীর ব্যথা হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, এখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছে, মনেই হয় না। বিগত বছরগুলোতে কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। ওয়ার্ডটিতে বর্জ্য ব্যবস্থার সুবন্দোবস্ত নেই। আবর্জনা অপসারণের নির্ধারিত স্থান নেই। সব এলাকার বাসাবাড়ি থেকেও আবর্জনা সংগ্রহ করা হয় না। কিছু এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হলেও সেগুলো সেক্টরের ভেতরের এসটিএসে ফেলতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সিটি করপোরেশন। এর ফলে সংগ্রহকারী ব্যক্তিরাও এখন নিয়মিত ময়লা সংগ্রহ করেন না। বাধ্য হয়ে রাস্তার ধারে, বাড়ির পেছনে, বাজারের পাশে, উন্মুক্ত জায়গায়, যে যেখানে পারছেন আবর্জনা ফেলে দিচ্ছেন। ফুলবাড়ি এলাকার গৃহিণী সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিনের আবর্জনা কোথায় ফেলব, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকি। বাধ্য হয়েই বাইরে খোলা জায়গায় আবর্জনা ফেলে দিই। এতে পরিবেশ দূষিত হয়। কিন্তু কী করার আছে বলুন? এলাকায় কোনো আবর্জনা সংগ্রহকারী নেই।’ এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলকায় একাধিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। কারখানার অপরিশোধিত রাসায়নিক মিশ্রিত তরল বর্জ্য সরাসরি মিশছে ডোবা, নালা ও জলাশয়ের পানিতে। দূষিত হচ্ছে পানি। শুষ্ক মৌসুমে বিষাক্ত দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। ধরঙ্গারটেকের বাসিন্দা আবু নাঈম বলেন, পানির দুর্গন্ধে থাকা যায় না। দম বন্ধ হয়ে আসে। আগে এলাকার জলাশয়ে দেশি মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন এসবের কিছুই নেই। স্কুল-কলেজ ছাড়া কিশোর-যুবকদের খেলাধুলার উন্মুক্ত জায়গা নেই। বিকেলবেলা খেলার জন্য তাই বেছে নিতে হয় নির্মাণাধীন কোনো ভবনের বালুর ঢিবি। ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলে সেই সুযোগটিও বন্ধ হয়ে যায় তাদের। খুঁজতে হয় নতুন জায়গা। নয়ানগর শুক্রভাঙ্গা মসজিদ এলাকার যুবক জোবায়ের হাসান বলেন, ‘আমাদের খেলার মাঠ নেই। মাঠের অভাবে অনেক ছেলেমেয়েকে ঘরে বসেই সময় পার করতে হয়। আবার অনেক কিশোর-যুবক আড্ডাবাজি ও নেশার দিকে ঝুঁকছে।’ গত জুলাইয়ে হরিরামপুর ইউনিয়নের ফুলবাড়ি, রানাভোলা, ধরঙ্গারটেক, নয়ানগর, দিয়াবাড়ি, নলভোগ এলকাগুলো নিয়ে ডিএনসিসির নতুন ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড গঠন করা হয়। প্রায় ৫৫ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। পুরোনো তালিকা অনুসারে ভোটার আছে প্রায় ২৮ হাজার। ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, নতুন যুক্ত বর্ধিত অঞ্চলে সেবা দিতে কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজ করছে। খুব শিগগির পরিকল্পনা অনুযায়ী সেবা চালু করা হবে। নতুন করে সেবা পেতে একটু ধৈর্য ধরতে হবে বলেও তিনি জানান। অন্যদিকে সাবেক হরিরামপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বলেন, রাস্তার কাজ যেটুকু হয়েছে, তার সবই ইউনিয়নের নিজস্ব অর্থায়নে করা। বাজেটের স্বল্পতার কারণে বাকি উন্নয়নকাজ করা সম্ভব হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.