বিষাক্ত ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন বাসিন্দারা

নগরীর শ্যামপুরে রি-রোলিং মিল থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। এলাকায় সব সময় থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। এতে বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। বাসিন্দারা বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। কলকারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। শ্যামপুর বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নবসম্পৃক্ত ৫৮ ও ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে (সাবেক শ্যামপুর ইউনিয়ন)। শ্যামপুরের খাল ও খাসজমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এলাকায় বিরাজ করছে নোংরা পরিবেশ। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। রাস্তাঘাট সরু ও ভাঙাচোরা। এলাকায় রয়েছে চরম গ্যাস সংকট। ওয়াসার পানিতে চরম দুর্গন্ধ। ঘন ঘন বিদ্যুৎতের লোডশেডিং এলাকাবাসীর নিত্যসঙ্গী। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। এছাড়াও এলাকায় নেই খেলার মাঠ ও কমিউনিটি সেন্টার। মাদক গ্রাস করে ফেলছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বক্ষব্যাধি কনসালট্যান্ট ডাক্তার এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, ধোঁয়ার মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইড ও গ্রিন হাউস ইফেক্ট বেশি থাকে। এতে মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁফানি, সিওপিডি রোগ এমনকি ফুঁসফুঁসে ক্যান্সারও হতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা দ্রুত আক্রান্ত হয়। শ্যামপুর ইউনিয়ন ১৯২০ সালে স্থাপিত হয়। পরে এ ইউনিয়নটি দুই ভাগে বিভক্ত করে শ্যামপুর ও দনিয়া ইউনিয়ন নামে যাত্রা শুরু হয়। শ্যামপুরে ২৪টি গ্রাম ও ৩টি মৌজা রয়েছে। জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ২৯৮। ভোটার সংখ্যা ৬৯ হাজার ৮১৮। ৩৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪টি, বেসরকারি ১৭টি, মাদ্রাসা ৯টি তার মধ্যে ১টি সরকারি। স্বাক্ষরতা দানে সক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা শতকরা ৭৫ ভাগ। মসজিদ রয়েছে ৫০টি। এর মধ্যে শ্যামপুর লাল মসজিদটি সবচেয়ে পুরনো মসজিদ ও শ্যামপুর বড়ইতলা হাজী কফিল উদ্দিন জামে মসজিদ মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে।
১টি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু সার্বক্ষণিক ডাক্তার নেই। ২৪টি গ্রামের মধ্যে উত্তরে নতুন শ্যামপুর, নতুন আলী বহর। দক্ষিণে ঢাকা ম্যাচ, তেলকল, মুন্সীখোলা, নতুন কদমতলী, ডিআইটি প্লট, শিল্প এলাকা, আবাসিক এলাকা, চাকদাহ, ওয়াসা কলোনি। পূর্বে-পূর্ব কদমতলী, মোহাম্মদবাগ, মেরাজনগর, নামা শ্যামপুর। পশ্চিমে ধোলেশ্বর, শ্যামপুর লাল মসজিদ, শ্যামপুর কদমতলী, পুরাতন আলী বহর ও রাজাবাড়ী অবস্থিত। পূর্ব কদমতলী এলাকার একাধিক বাসিন্দা যুগান্তরকে বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকায় হাঁটুপানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তখন রাস্তাঘাটে কাদা-পানিতে একাকার হয়ে পড়ে। শ্যামপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ৩ বছর এলাকায় কোনো উন্নয়ন হয়নি। কিছু নামধারী লোকজন তাদের পকেট ভারি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। বড়ইতলা রেল লাইনের মেসার্স জামান ফার্মেসির মালিক ডাক্তার মো. কামরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ঘন ঘন বিদ্যুৎতের লোডশেডিংয়ে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ওয়াসার পানিতে ময়লা আর দুর্গন্ধ। এসব পানি পান করে পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন মানুষ। শ্যামপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. শফিকুর রহমান (সাইজুল) যুগান্তরকে বলেন, ইউনিয়নের কিছু অংশে শিল্পকারখানা রয়েছে। এসব শিল্পকারখানা বিধি মোতাবেক পরিচালনা না করায় বাসিন্দারা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে রি-রোলিং মিলের ধোঁয়ায় এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, এসব কারখানাকে লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।  এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইউনিয়নে ৫০ থেকে ৬০ বিঘা খাস জমি রয়েছে।  এসব জমি উদ্ধার করে খেলার মাঠ, সরকারি কমিউনিটি সেন্টার, মহিলা কলেজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে। মো. শফিকুর রহমান (সাইজুল) আরও বলেন, আমার আমলে ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ভবিষ্যতে একটি খেলার মাঠ, একটি উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি কলেজ স্থাপন এবং কারিগরি বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। শ্যামপুর ইউনিয়নে প্রধান সড়কগুলোতে ল্যাম্প পোস্ট বসানো হবে। শতভাগ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শরীর চর্চা কেন্দ্র তৈরি করা হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে ও মাদক নিয়ন্ত্রণে একটি পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.