শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় অভিযোগ গঠন

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দু'টি মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সোমবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আব্দুল হামিদ এই অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে আগামী ২০ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। এদিকে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করায় উপজেলার যুগিখালি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম, মাহাফুজুর রহমান সাবু ও রিঙ্কুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাগজপত্র অনুযায়ী ঘটনার সময় এ মামলার অপর আসামি বিএনপি নেতা রাকিব হোসেন মোল্লার বয়স ১০ বছর ১০ মাস ১৯ দিন হওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন।
সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর জেলা বিএনপির সভাপতি ও তৎকালীন সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতাকর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাস (সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপরে দাঁড় করিয়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। হামলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, সাংবাদিকসহ কমপক্ষে  এক ডজন দলীয় নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনায় থানা মামলা না নেয়ায় একই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনকে আসামি করে সাতক্ষীরা নালিশী আদালত ‘ক' অঞ্চলে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়। বিচারক এম আই ছিদ্দিকী তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কলারোয়া থানার ওসি এসএম গোলাম কিবরিয়াকে নির্দেশ দেন। তিনি ২০০৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঘটনা মিথ্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে গিয়েও জবানবন্দি না নিয়ে নিজের মনগড়া কথা ১৬১ ধারার জবানবন্দি হিসেবে উল্লেখ করেছেন বলে ওসির বিরুদ্ধে এফিডেফিড দিয়ে আদালতে হাজির হয়ে বিচারককে তা অবহিত করেন সাক্ষী কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, শওকত হোসেন, শহীদুল ইসলাম, প্রভাষক জাভিদ হাসান, আমিনুল ইসলাম লাল্টু ও আলতাফ হোসেন লালু। বাদী মোসলেম উদ্দিন পুলিশ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের ২২ জানুয়ারি আদালতে নারাজির আবেদন জানালে শুনানি শেষে তা খারিজ হয়ে যায়। এ খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধে বাদী ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২২ এপ্রিল শুনানি শেষে বিচারক এ রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন। নিরুপায় হয়ে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট বাদী এ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ক্রিমিনাল মিস কেস দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আপিল মঞ্জুর করে নিম্ন আদালতের আদেশের উপর স্থগিতাদেশ দেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। আদেশের কপি দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর ফাইলবন্দি থাকার পর ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়। ১৭ সেপ্টেম্বর বাদীর উপস্থিতিতে নারাজির শুনানি করার জন্য মূখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন। ওই দিন বিচারক নিতাই চন্দ্র সাহা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু'টির সাক্ষীরা জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে আগামী ২০ জুলাই সাক্ষীরার জন্য দিন ধার্য আছে। অপর টিআর ১৫১/১৫ মামলাটি মূখ্য বিচারিক হাকিম রাফিজুল ইসলামের আদালতে আগামী ১৩ জুলাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলায় ইতিমধ্যে ছয়জন সাক্ষী তাদের জবানবন্দি দিয়েছেন। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গণি জানান, এ মামলার অন্যতম আসামি বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার ও জহুরুল ইসলামের রিভিশন আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.