নানা গুণে হাতিশুঁড়

হাতিশুঁড় এক প্রকার একবর্ষজীবী আগাছা জাতীয় উদ্ভিদ। একে হাতিশুঁড়ি, হাতিশুণ্ডি, হস্তীশুণ্ডি, শ্রীহস্তিনী, মহাশুণ্ডি ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indicum এবং ইংরেজি নাম Indian heliotrope। এটি এশিয়া মহাদেশের উদ্ভিদ। হাতিশুঁড় একবর্ষজীবী, দৃঢ়, শাখান্বিত উদ্ভিদ যা ১৫ থেকে ৫০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। এর কাণ্ড লোমযুক্ত, যাতে একান্তর বিন্যস্ত ডিম্বাকার পাতা থাকে। পাতা গাঢ় সবুজ। পত্রপিঠ অমসৃণ, খসখসে। কিনারা ঢেউ খেলানো। উটকো গন্ধও পাওয়া যায়। কাণ্ডের শীর্ষে লম্বা ও বাঁকানো পুষ্পদণ্ডজুড়ে ছোট ছোট সাদা ফুল ফোটে। ফুলের রঙ সাধারণত সাদা, তবে হালকা বেগুনিও হতে পারে। এর পাপড়ি একটি, তাতে ৫টি খাঁজ থাকে; অনেকটা কলমি ফুলের মতো। সারা বছর ফুল ফোটে তবে বর্ষাকালে বেশি ফুটতে দেখা যায়। গর্ভাশয় চারখণ্ডিত। ফল ও বীজ ক্ষুদ্র। এই গাছে নানারকম জৈব উপাদান পাওয়া গেছে। যেমন ইনডিসিন, পাইরোলিজিডিন এলকালয়েড্স, হেলিওট্রিন ইত্যাদি। শিকড়ে আছে এসট্রাডিওল।
কোথায় এবং কখন জন্মে : এটি শুকনা অথবা ভেজা প্রায় সব স্থানে জন্মে; আমাদের গ্রাম-বাংলায় এর দেখা মেলে যত্রতত্র। যদিও এখন এর পরিমাণ কমে এসেছে; কিন্তু এখনও এটি বিরল বলা চলে না। এ গাছ জন্মাবার কোনো মৌসুম নেই, সব মৌসুমে এ গাছ জন্মে। লম্বায় ১ থেকে ২ ফুট পর্যন্ত হয়। এই গাছটির ঝাঁঝালো গন্ধ ঠিক মেনথলের মতো। আকারে-প্রকারে মোটেও হাতির মতো প্রকাণ্ড নয়; ছোটখাটো গড়ন। তবে হাতির সঙ্গে তার নামটি জড়িয়ে আছে পুষ্পদণ্ডের কারণে। লম্বা পুষ্পদণ্ডটি হাতির শুঁড়ের মতো। সে কারণেই গাছটির নাম হয়েছে হাতিশুঁড়। এমন কিছু কুলীন গোত্রের নয়। পথের পাশে, ইটখোলার আশপাশে, পতিত ভিটায় যত্নআত্তি ছাড়াই জন্মায়। দিনে দিনে ঘন ঝোপের মতো হয়ে ওঠে হাতিশুঁড় নামের এই গুল্মটি। এটি বর্ষজীবী। কাণ্ড নরম ও ভেতরে ফাঁপা। উচ্চতা এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
গুরুত্ব : ভেষজ চিকিৎসায় এর অনেক ব্যবহার হয়ে থাকে। এর পাতার রস ক্ষত, ফোড়া, চোখের কনজাংটিভাইটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
বিষাক্ততা : হাতিশুঁড়ে ‘পাইরোলিজিডিন এলকালয়েড’ বিষ থাকে। এই বিষের প্রভাবে মানবদেহে টিউমার সৃষ্টি হতে পারে।
ঔষধি গুণ : ফুলায়- হঠাৎ ঠাণ্ডা লেগে হাতে পায়ের গাঁট ফুলে গেলে (এটা সাধারণত কফের বিকারে হয়) এই হাতিশুঁড় পাতা বেটে অল্প গরম করে ওই সব ফুলা জায়গায় লাগালে ওটা কমে যায়। আঘাতের ফুলায়- এই পাতা বেটে গরম করে ওই আঘাতের যায়গায় লাগালে ব্যথা ও ফুলা দুই-ই চলে যায়। বিষাক্ত পোকার কামড়ে- জ্বালা করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফুলেও যায়, সে সময় এই পাতার রস করে লাগালে ওটা কমে যায়। টায়ফয়েড জ্বরে- পিপাসা ও সঙ্গে মাথা চালাও প্রবল থাকে, এ ক্ষেত্রে ওই পাতার রস গরম করে ছেঁকে ওই রস ১০ ফোঁটায় একটু পানিতে মিশিয়ে খেতে দিতে হয়। আধা ঘণ্টা অন্তর দুই/তিনবার খাওয়ালে এই উপসর্গটা প্রশমিত হয়, তবে দুই তিনবারের বেশি খাওয়ানো উচিত নয়। ব্রণ এবং দাগ- গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতো করে দুপুরে গোসল করতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে ব্রণের ওপর প্রলেপ দিলে ব্রণ সারে এবং নতুন করে আর ব্রণ হয় না।
সূত্র : উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট

No comments

Powered by Blogger.