রায়ের পক্ষেই বললেন তিন সংবিধান বিশেষজ্ঞ

বিচারকদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে বিচার বিভাগ ও সিনিয়র আইনজীবীদের নিয়ে করা মন্তব্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন দেশের তিন সংবিধান বিশেষজ্ঞ। তার হলেন- ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম এবং সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। রোববার জাতীয় সংসদে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কোনো কোনো সংসদ সদস্য বলেছেন, জাতীয় সংসদে পাস হওয়া কোনো আইন সুপ্রিমকোর্টের বাতিল করার এখতিয়ার নেই। আবার কেউ বলেছেন, সংসদ যদি এ রায় গ্রহণ না করে তাহলে তা কার্যকর হবে না। এ প্রসঙ্গে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সংবিধানে ১১১ অনুচ্ছেদ মতে সুপ্রিমকোর্টের রায় মানতে আমরা সবাই বাধ্য। এটা নিয়ে কোনো বিতর্ক করা উচিত নয়। সর্বোচ্চ আদালতের ওপর সবাইকেই শ্রদ্ধা রাখতে হবে। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, কোনো আইন যদি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় বা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করে অথবা রাষ্ট্রের ভারসাম্য (ব্যালেন্স) ভেঙে পড়ে, তাহলে সে আইন সুপ্রিমকোর্ট বাতিল করতে পারবেন না কেন? তিনি বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলেও আইন বাতিল হয়েছে। তারপর মাসদার হোসেন মামলার রায়ে বিচার বিভাগকে পৃথকীকরণ করা হয়। তিনি বলেন, ‘কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ উত্থাপন হয়, তাহলে জুডিশিয়ারি তদন্ত হবে এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। এখানে আন্তর্জাতিকভাবে যেসব আইনকানুন রয়েছে, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে ইউরোপ বা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে যেসব রুলস দেখা যাচ্ছে, সব জায়গায় এখন জুডিশিয়ারি যে কম্পিটেন্স এবং তাদের যে অ্যাপয়েন্টমেন্ট এবং তাদের যদি কোনো ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন প্রয়োজন হয়, সেটা তারা নিজেরাই করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানেও সে রকম একটা পদ্ধতি চালু আছে যা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। সুতরাং তারাই এটা বিবেচনা করবে।
পার্লামেন্টারি রিমুভাল কোনো দেশেই কার্যকর হতে পারছে না। ভারত, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়াতেও না। সেখানে এ নিয়ে আরও বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়।’ ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘দুনিয়াজুড়ে আমরা যে অবস্থা দেখছি, তাতে বিচারকদের অসদাচরণের কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটি জুডিশিয়ারি ঠিক করবেন। সেটিই হবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। এ বিষয়ে বিভিন্ন দেশে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের যেসব অভিজ্ঞতা আছে, সেগুলো আমি তুলে ধরেছি। এখন এটি বিবেচনার বিষয় আদালতের।’ ‘বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়নের সময় আপনারা এটি সংসদের হাতে কেন দিয়েছিলেন’- এমন প্রশ্নের উত্তরে এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, ‘তখন তো আমরা জুডিশিয়ারি গড়ে তুলতে পারিনি। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফেরার পর আমাদের প্রধান বিচারপতি কে হবেন, তা খুঁজতে থাকি। ১১ জানুয়ারি আমরা প্রধান বিচারপতি খুঁজেছি। কাউকে তো শপথ নিতে হবে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে সায়েমকে নিয়ে এলাম। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি তো সামরিক শাসকের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট হয়ে গেলেন। সময়ের কারণে সে সময়ে আমরা জুডিশিয়ারি গড়তে পারিনি। তখন আপাতত সংসদের হাতে দিয়েছি। কেননা, তখন সংসদ ছাড়া আর কিছু গড়ে ওঠেনি।’ সংবিধান প্রণেতা কামাল হোসেন ও ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম সম্পর্কে সংসদ সদস্যদের সমালোচনার প্রসঙ্গে ড. শাহদীন মালিক বলেন, উনাদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলাটা ভদ্র সমাজের নয়। যিনি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লিখলেন, তাকে যদি দেশ আইন বোঝাতে চান তাহলে কি হবে? তিনি বলেন, কোনো আইন কার্যকর করে নির্বাহী এবং বিচার বিভাগ। আদালত আইন অনুযায়ী রায় দেয়। এ রায় মানতে বাধ্য করবে নির্বাহী বিভাগ। তিনি সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, সেখানে বলা আছে সুপ্রিমকোর্টকে সাহায্য করা নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। অতএব রায় বাস্তবায়নে সংসদের কোনো ভূমিকা এখানে নেই।

No comments

Powered by Blogger.