সরকারের পদক্ষেপ হবে বুমেরাং

স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দফায় দফায় বরখাস্ত করছে সরকার। বিশেষ করে রাজশাহী, সিলেট, গাজীপুর, খুলনা সিটি কর্পোরেশন ও হবিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়রদের বরখাস্তের রেকর্ড তৈরি হয়েছে। বিএনপির সমর্থনে নির্বাচিত ৫ সিটি ও একটি পৌরসভাসহ মোট ৬ মেয়র গত চার বছরে ১২ বার সাময়িক বরখাস্ত হন। আগামী বছর শেষ হবে তাদের পাঁচ বছরের মেয়াদ। শেষ সময় কতটা কাজ করতে পারবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন নির্বাচিত এসব জনপ্রতিনিধি। এদিকে জনপ্রতিনিধিদের দফায় দফায় বরখাস্ত করায় ক্ষোভে ফুঁসছেন স্থানীয় জনগণসহ দেশের সাধারণ মানুষ। বরখাস্তের মধ্যে রাজশাহী সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল দু’বার, খুলনায় মনিরুজ্জামান মনির একবার সাময়িক বরখাস্ত হন। সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী দু’বার, বরিশালে আহসান হাবিব কামালকে একবার বরখাস্ত করা হয়। ২০১৩ সালের ১৫ জুন চার সিটি নির্বাচনে তারা বিএনপি-সমর্থক মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। একই বছরের ৬ জুলাই গাজীপুর সিটিতে মেয়র নির্বাচিত হন অধ্যাপক এমএ মান্নান। তিনি তিনবার সাময়িক বরখাস্ত হন। ২০১৫ সালে নির্বাচিত হবিগঞ্জের পৌর মেয়র জিকে গউছ ৩ বার সাময়িক বরখাস্ত হন। মামলার কারণ দেখিয়ে তাদের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব নেয়ার পর চার বছরের বেশির ভাগ সময় চেয়ার সামলাতেই ব্যস্ত সময় পার করেন এসব জনপ্রতিনিধি। একবার বরখাস্ত হয়ে চেয়ারে বসতে না বসতেই আবার কাউকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। আদালতের আদেশে তারা আবার দায়িত্ব ফিরে পান। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই এদের পদচ্যুত করা হচ্ছে বলে স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটাররা মনে করেন। তাদের মতে, জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে না দিয়ে দফায় দফায় বরখাস্ত করে সরকার ভুল করছে। এ পদক্ষেপ তাদের জন্য বুমেরাং হতে পারে। এর প্রভাব আগামী সিটি এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও পড়তে পারে। আজ যে আইনের দোহাই দিয়ে বিএনপি সমর্থক জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হচ্ছে, একই আইনের খক্ষ বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ হতে পারে। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, মিথ্যা মামলায় চার্জশিট দিয়ে আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বারবার বরখাস্ত করা হচ্ছে। এ থেকে একটা জিনিস প্রমাণিত, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি বলে তারা নির্বাচিত মানুষদের ভয় পায়। তিনি বলেন, সরকার গণতন্ত্রচর্চার পথ আরও সংকুচিত করে ফেলছে। সরকারের এসব অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কখনও মেনে নেয়া হবে না। আগামীতে জনগণ সরকারের এ পদক্ষেপের উপযুক্ত জবাব দেবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক যুগান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধিদের কাউকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনপ্রতিনিধিদের ঘন ঘন বরখাস্তের ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণ কাক্সিক্ষত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উন্নয়ন কাজের চেয়ে কখন বরখাস্ত হচ্ছেন এই শঙ্কা নিয়েই তারা সময় পার করছেন। মেয়রকে সাময়িক বরখাস্তের পর ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত কাউকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, ভারপ্রাপ্তদের এলাকার উন্নয়নের চেয়ে অন্যদিকে বেশি মনোযোগ। কিভাবে নিজের দলের লোকজনের উন্নয়ন হবে তা নিয়ে বেশি ব্যস্ত। কারণ এলাকার উন্নয়ন না হলে মেয়র হিসেবে তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। উল্টো নির্বাচিত মেয়ররা কোনো কাজ করেননি এমন অজুহাতও সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। স্থানীয় জনগণের মতে, সরকার এখানেই সবচেয়ে বড় ভুল করছে। তারা বলেন, জনপ্রতিনিধিদের ঠিকমতো কাজ করতে দিলে তারা নানা ধরনের ভুল করত। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রকাশ পেত। এতে তারা ইমেজ সংকটে পড়তেন। যার সুবিধা ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই যেত। কিন্তু বারবার বরখাস্তের কারণে সরকার সে সুযোগ হাতছাড়া করছে। বরখাস্তের কারণে সাধারণ ভোটারের সহানুভূতি নির্বাচিত মেয়রের দিকে। ভবিষ্যতেও তারা এ সুবিধা পাবেন। সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে জনগণ আগামী নির্বাচনেও এসব জনপ্রতিনিধিকে ভোট দিতে পারেন। এতে বঞ্চিত হতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। ভবিষ্যতে শুধু সিটি কর্পোরেশন নয়, জাতীয় নির্বাচনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বরিশাল ও গাজীপুর ছাড়া বাকি তিন সিটিতে বর্তমান মেয়ররাই আগামীতে আবারও দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। হাইকমান্ডের এদের প্রতি আস্থা রয়েছে।
পাশাপাশি বারবার বরখাস্তের কারণে নেতাকর্মী এবং স্থানীয় জনগণও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তাই তাদের আবারও মনোনয়ন দেয়া হলে ভোটাররাও বিষয়টিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখবে এবং ভোটের ফলাফল বিএনপির পকেটে যাবে। তবে বিগত আন্দোলনে গাজীপুর মেয়র প্রত্যাশিত ভূমিকা না রাখায় হাইকমান্ড কিছুটা ক্ষুব্ধ। তার পরিবর্তে ওই এলাকার প্রভাবশালী নেতা হাসান উদ্দিন সরকারকে এবার মেয়র পদে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী, সিলেট, খুলনায় তাদের মেয়র প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। গত নির্বাচনে যাদের সমর্থন দেয়া হয়েছিল এবার তাদেরই দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। বরিশাল ও গাজীপুর সিটিতে ক্ষমতাসীনদের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বিদ্যমান স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন), স্থানীয় সরকার (পৌরসভা), স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) এবং স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন অনুযায়ী কোনো জনপ্রতিনিধি যে কোনো ধরনের ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হলে (আদালত কর্তৃক চার্জশিট গৃহীত হলে) কিংবা ওই প্রতিনিধি শারীরিকভাবে সক্ষমতা হারালে কিংবা পরিষদের সভায় পরপর তিনবার অনুপস্থিত থাকলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারে। এ আইনের মাধ্যমেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। তবে এ আইন অপপ্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। বিরোধী জনপ্রতিনিধি হিসেবে পরিচিতদের ক্ষেত্রেই এ আইন বেশি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, আইনের ধারাগুলো বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ মেয়রদের ব্যাপারে ঘন ঘন ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধরনের প্রয়োগ পক্ষপাতিত্বমূলক। হয়তো সে কারণেই হাইকোর্ট সাময়িক বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করছেন। তিনি বলেন, সরকার রাজনৈতিক ব্যাপারে প্রায়ই পক্ষপাতমূলক আচরণ করে। এটা আরও একটি জলজ্যান্ত নমুনা। ওইসব সিটি কর্পোরেশনে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে সরকারের এ পদক্ষেপ তাদের প্রার্থীর বিপক্ষে যাবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। এর মাধ্যমে শুধু জনগণের ম্যান্ডেটকে ভণ্ডুল করা হচ্ছে না, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার এসব পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ থেকে বিরত না হলে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ আরও বাড়বে এবং এর পরিণতি ভালো হবে না। বিষয়গুলো বুমেরাং হয়ে এক সময় সরকারের দিকেই ফিরে আসতে পারে। যে আইনের দোহাই দিয়ে আজ বিরোধী হিসেবে পরিচিত জনপ্রতিনিধিদের বরখাস্ত করা হচ্ছে, সময় পরিবর্তন হলে এটা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধেও ব্যবহার হতে পারে। শুধু তাই নয়, আগামী নির্বাচনেও সরকারের এ পদক্ষেপ হিতে বিপরীত হতে পারে। এভাবে নির্বাচিত মেয়রদের বারবার বরখাস্তের পেছনে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করেন ওইসব এলাকার স্থানীয় ভোটাররা। তারা মনে করেন, ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে এরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের বারবার বরখাস্ত করা মানে ভোটারদের রায় নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। সাধারণ মানুষের পছন্দকে সরকার কোনো মূল্যই দিচ্ছে না। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের শাহজালাল (র.) মাজার সংলগ্ন এক হোটেল ব্যবসায়ী মো. মমতাজ আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এটা জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বরখাস্ত করা হলে কোনো প্রশ্ন উঠত না।
দু’বার বরখাস্ত, ক্ষমতার বাইরে ছিলেন দু’বছর বুলবুল : চার বছরের মধ্যে দু’বছরই ক্ষমতার বাইরে ছিলেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। গত ২ এপ্রিল দায়িত্ব নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফের সাময়িক বরখাস্ত হন তিনি। পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ সরকার হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়ায় ২০১৫ সালে ৭ মে বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে আপিলের পর ২০১৬ সালের ১০ মার্চ উচ্চ আদালত তার বরখাস্তের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপর আইনি লড়াই শেষে ২ এপ্রিল সকালে দায়িত্ব নিতে নগরভবনে যান মেয়র বুলবুল। কিন্তু বিকালেই তাকে আবারও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর ৪ এপ্রিল তিনি এই আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট করেন। আদালতের নির্দেশে ৮ এপ্রিল মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান বুলবুল। এ বিষয়ে মেয়র বুলবুল বলেন, ‘আমি জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। কিন্তু শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই আমাকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে মামলার চার্জশিট দিয়ে সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আইন আমাকে দায়িত্ব ফিরিয়ে দিয়েছে। যদিও এরই মধ্যে চার বছর চলে গেল। কিন্তু নগরবাসীর উন্নয়নে হয়তো কাক্সিক্ষত সেবা দিতে পারিনি।’
সিলেটের আরিফ ২৭ মাসই ছিলেন দায়িত্বের বাইরে, বরখাস্ত হন দু’বার : সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ২০১৩ সালের ১৫ জুন নির্বাচিত হন। দায়িত্ব গ্রহণের ১৪ মাস পর ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর কারাগারে যান তিনি। কারাগারে যাওয়ার পর ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি বরখাস্ত হন আরিফ। ২ বছর কারাভোগের পর চার মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি মুক্তি পান তিনি। ২ এপ্রিল তিনি মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান। দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের আরিফকে বহিষ্কার করা হয়। তবে মাত্র ৪ দিনের মাথায় ৬ এপ্রিল আদালতের রায়ে ফের মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান আরিফ। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত মেয়র আরিফ দীর্ঘ ২৭ মাস দায়িত্বের বাইরে ছিলেন। এ ব্যাপারে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘ ২৭ মাস দফতরের বাইরে থাকায় নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ পাইনি। অতীতের মতো নগরবাসী আমার পাশে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না।’
ভালোই আছেন বরিশালের কামাল : প্রায় চার বছরের দায়িত্ব পালনকালে খুব একটা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়নি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামালকে। দায়িত্ব গ্রহণের শুরুর দিকে একবার বরখাস্ত এবং পরে আরও একবার কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া বিরোধী দলের মেয়র হিসেবে তেমন কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি তাকে। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলার অভিযোগ রয়েছে কামালের বিরুদ্ধে। উল্লেখযোগ্য কোনো মামলা এমনকি একদিনের জন্যও জেলে যেতে হয়নি তাকে। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র কামাল যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অন্তত ১০ বার বিক্ষোভ এমনকি নগরভবনে ঢুকতে পর্যন্ত বাধা দেয়া হয়েছে। বুঝে-শুনে আইন-কানুন মেনে কাজ করি বলেই আটকাতে পারেনি কেউ। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি এটা সত্য নয়।’ বেশিদিন পদে থাকলেও স্বস্তিতে নেই মনি : অন্যান্য মেয়রের চেয়ে খুলনার মেয়র মো. মনিরুজ্জামান মনি বেশিদিন দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছেন। তবে আর্থিক চাপে স্বস্তিতে নেই তিনি। দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর মেয়র মনিরুজ্জামান মনি সাময়িক বরখাস্ত হন। ওই সময় ২৮ দিন জেল খাটেন তিনি। এরপর উচ্চ আদালতের রায়ে গত বছরের ২১ নভেম্বর মেয়রের দায়িত্ব ফিরে পান। মনি যুগান্তরকে বলেন, টাকার অভাবে প্রত্যাশিত উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি। গত চার বছরে নগরীর উন্নয়নে ৫০২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও মাত্র ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দুটি প্রকল্পই আবার বিদেশি অনুদানে। সরকারি কোনো বরাদ্দ মেলেনি।
মেয়র এমএ মান্নান ৪ বছরে তিনবার বরখাস্ত, ২২ মাস কারাগারে : ২০১৩ সালে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গত ৪ বছরে তিনবার বরখাস্ত এবং ২২ মাস কারাভোগ করেন গাজীপুরের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান। ১৮ জুন আদালতের নির্দেশে মেয়রের দায়িত্ব নেন। তবে দরিদ্র তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা এক মামলায় আদালত চার্জশিট গ্রহণ করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার তাকে আবারও বরখাস্ত করে। মেয়র পদ ফিরে পেতে সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে রোববার হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মান্নান। আদালত তিন মাসের জন্য ওই আদেশ স্থগিত করেন। এ ব্যাপারে বরখাস্তকৃত মেয়র এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, দেশে নির্বাচিত সরকার নেই। অনির্বাচিত সরকার অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে সিটি কর্পোরেশন চালাতে চায়। জনগণের ভোটের কোনো মূল্যায়ন সরকারের কাছে নেই।
 ৪ বার বরখাস্ত গউছ : হবিগঞ্জের পরপর ৩ বারের নির্বাচিত মেয়র জিকে গউছ কারাগারেই কাটিয়েছেন ১ হাজার ৩৩০ দিন। দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত হয়েছেন ৪ বার। ২০১৭ সালের শুরুতে উচ্চ আদালত থেকে জামিন পান তিনি। একই বছর ২৩ মার্চ উচ্চ আদালতের নির্দেশে পদও ফিরে পান। কিন্তু পদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে তৃতীয় ও চতুর্থ দফায় বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জিকে গউছ বলেন, ‘এলাকার উন্নয়ন করি বলেই জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেন। কিন্তু সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বারবার বরখাস্ত করছে।’

No comments

Powered by Blogger.