দেশের সঙ্গে আলিদার বিশ্বাসঘাতকতা দায় কার

যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি অ্যাথলেট আলিদা শিকদারকে সুযোগ দেয়ার চড়া মূল্য দিতে হল। ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্ট এবং তার প্রিয় ইভেন্ট লং জাম্পে অংশ না নিয়েই ফিরে গেছেন যুক্তরাষ্ট্রে। অ্যাথলেটিক্স অঙ্গনে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অথচ দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারকে সুযোগ না দিয়ে আলিদাকে আজারবাইজানের বাকুতে এনেছিল অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। গেল বছর গৌহাটি এসএ গেমসে আলিদাকে আনার চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস। বাংলাদেশের হয়ে খেলতেও চেয়েছিলেন আলিদা। সেসময় তার পেছনে প্রশিক্ষণ বাবদ কয়েক লাখ টাকা খরচ করা হয়েছিল। ঢাকায় আসার পর বাবা মোমিন শিকদার ও মেয়ে আলিদা শিকদারকে উপহার দিয়েছিলেন বিওএ’র সহ-সভাপতি শেখ বশির আহমেদ মামুন। এসএ গেমসে পদক জয়ের  প্রত্যাশায় তাকে খেলাতে চেয়েছিল বিওএ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব আশা জলাঞ্জলি দিয়ে গৌহাটিতে যাননি আলিদা। তা সত্ত্বেও এবার ইসলামিক সলিডারিটি গেমসের আগে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিওএ।
আজারবাইজানে যেতে রাজিও হন আলিদা। বাকুতে গিয়ে প্রায় দু’সপ্তাহ থেকেছেন। ঘুরেছেন। এমনকি ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ও লং জাম্পে নামও নিবন্ধন করেছেন। কিন্তু এবারও ট্র্যাকে না নেমে দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। গেমসের দুটি ইভেন্টে বাংলাদেশের অ্যাথলেট হিসেবে নাম অন্তর্র্ভুক্ত করেও শেষ পর্যন্ত খেলেননি। এতে গেমসে অংশ নেয়া বিশ্বের ৫৬টি দেশের ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তাদের সামনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। দেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তারকে সুযোগ না দিয়ে আলিদা শিকদারকে পাঠিয়ে দেশের সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন ক্রীড়ামোদীরা। অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম চেঙ্গিস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এসএ গেমসেই বোঝা গিয়েছিল আলিদা শিকদারের মতিগতি। সেসময় আমরা কয়েক লাখ টাকা খরচ করেও দেশের জন্য তাকে খেলাতে পারিনি। এমন অ্যাথলেটকে কেন যে বিওএ আবারও বেছে নিল, তা আমার বোধগম্য নয়। যে একবার দেশের সঙ্গে প্রহসন করেছে, সে বারবার করবে এটাই স্বাভাবিক।’ গেমসের আগে আলিদাকে উৎসাহ জোগাতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব মন্টু।
সেখানে গিয়ে তিনি আলিদার মাধ্যমে দেশকে সোনার পদক উপহার দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। এখন সেই মন্টু বলছেন, ‘আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। তার আগেই বিওএ তাকে (আলিদা) পছন্দ করেছে। এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আসলে সে অসুস্থতার কথা বলে ট্র্যাকে নামেনি।’ গেমসে আলিদা যে দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন তা স্পস্ট। শেফ দ্য মিশন একেএম নুরুল ফজল বুলবুলের কথায়, ‘পেটের পীড়ার জন্য খেলতে চায়নি আলিদা। আমরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে, তার কোনো শারীরিক সমস্যাই ছিল না। সে ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে। কেন করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।’ বিওএ’কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আলিদা প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশটা তার বাবা মোমিন শিকদারের মাতৃভূমি, তার নয়। আলিদার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। লাল-সবুজ পতাকার জন্য তার দরদ থাকবে কী করে? এভাবে দেশের ক্রীড়াবিদদের বঞ্চিত করে প্রবাসী অ্যাথলেটদের এনে খেলাতে না পারায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে বিওএ। ক্ষুণ হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি। এ দায় কার?

No comments

Powered by Blogger.