নাইটদের স্বপ্নভঙ্গ, ফাইনালে মুম্বাই

দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দশম আইপিএলের ফাইনালে ওঠল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। রোববার খেতাবি লড়াইয়ে রাইজিং পুনে সুপারজায়ান্টের মুখোমুখি হবে রহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন মুম্বাই। ৩৩ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে নেন রহিত শর্মারা। কেকেআরকে ১০৭ রানে অল-আউট করার পরেই জয়ের ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল মুম্বই। আসলে, টি-২০ ফরম্যাটে ১২০ বলে ১০৮ রান তুলে ম্যাচ জেতা কোনো কঠিন কাজ নয়। নাইটরা নিশ্চিত পরাজয় জেনেও কিছুটা লড়াই করেন। পীযূষ চাওলা ও উমেশ যাদবের প্রচেষ্টায় ৩৪ রানে মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান্সের ৩ উইকেট পড়ে যায়। ওপেনার লেন্ডল সিমন্সকে ৩ রানে ফেরান পীযূষ। ১৪ রানে আউট হন পার্থিব প্যাটেল। অম্বাতি রায়াডুকে ৬ রানে বোল্ড করে কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন চাওলা। চতুর্থ উইকেটে ক্রুনাল পান্ডিয়াকে সঙ্গে নিয়ে মুম্বইয়ের অধিনায়ক রহিত শর্মা ৫৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তুলে দলকে ফাইনালের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন। রহিত আউট হন ২৬ রানে। তাঁর ইনিংসে রয়েছে একটি চার ও একটি ছক্কা। ক্রুনাল পান্ডিয়া আটটি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩০ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন। ৯ রানে ক্রিজে ছিলেন কিয়েরন পোলার্ড। শুক্রবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিহীন ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বোলারদের বিরুদ্ধে কোনও লড়াই মেলে ধরতে পারেনি কলকাতা নাইট রাইডার্সের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। যশপ্রীত বুমরাহর পেস ও করণ শর্মার স্পিনের ছোবলে শুরুতেই কাটা কলা গাছের মতো নুইয়ে পড়ে কেকেআর। ৩১ রানেই পড়ে যায় নাইট রাইডার্সের ৫টি উইকেট। প্রায় খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন ইশাঙ্ক জাগ্গি ও সূর্যকুমার যাদব। ষষ্ঠ উইকেটে তারা ৫৬ রান যোগ করেন।
জাগ্গি ২৮ রান করে আউট হন। সূর্যকুমার যাদবের সংগ্রহ ৩১ রান। মূলত এই দুই ব্যাটসম্যানের সৌজন্যে কেকেআরের স্কোর শতরানের গণ্ডি টপকায়। যদিও নাইটরা পুরো কুড়ি ওভার খেলতে পারেনি। গম্ভীর বাহিনীর এমন নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ শুধু সমর্থকদের নয়, লজ্জায় ফেলে দিয়েছিল কলকাতা নাইট রাইডার্সের অন্যতম মালিক শাহরুখ খানকেও। তার চোখ-মুখ দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, তিনি নাইটদের উপর বেজায় ক্ষুব্ধ। টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রহিত শর্মা। দারুণ ফিল্ড প্লেসিং করে নাইট রাইডার্সের রান আটকে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি অনেকটাই সফল হন। দ্বিতীয় ওভারেই কেকেআরের তারকা ব্যাটসম্যান ক্রিস লিনকে তুলে নেন যশপ্রীত বুমরাহ। ভারতীয় পেসারটির বলে স্ট্রেট ড্রাইভে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে কিয়েরন পোলার্ডের হাতে ধরা পড়েন লিন (৪)। পাওয়ার প্লে’তে সব দলই বেশি রান তোলার চেষ্টা করে। আর ক্রিস লিন এব্যাপারে সিদ্ধহস্ত। সেটা জেনেই লং অনে ফিল্ডার রেখেছিলেন ক্যাপ্টেন রহিত। সেই ফাঁদেই পা দেন লিন। তবে কেকেআরের ব্যাটসম্যানরা যেভাবে উইকেট উপহার দিয়েছেন, তা একজন ক্রিকেট শিক্ষার্থীকেও লজ্জায় ফেলবে। সুনীল নারিন শুরুটা ভালোই করেছিলেন। বাউন্ডারি হাঁকানোর নেশায় নারিন (১০) স্টেপ আউট করতে গিয়ে স্টাম্পড হন। রবীন উথাপ্পা নিজের শহরে মাত্র ১ রানে বুমরাহর বলে এলবিডব্লু হয়ে ডাগ-আউটে ফেরেন। কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলাটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা উচিত ছিল অধিনায়ক গৌতম গম্ভীরের। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে বৃষ্টি বিঘ্নিত এলিমিনেটর ম্যাচে তিনি দলকে জিতিয়েছিলেন। ফলে গোতিকে ঘিরে প্রত্যাশা ছিল বেশি। কিন্তু তিনি চাপের মুখে মাথা উঁচু রেখে মাঠ ছাড়তে পারেননি। মাত্র ১২ রানে করণ শর্মার বলে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ধরা পড়েন কেকেআর ক্যাপ্টেন।
সপ্তম ওভারের পঞ্চম বলে গম্ভীরকে ও ষষ্ঠ বলে কলিন ডে গ্র্যান্ডহোমকে (০) আউট করে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের লেগ স্পিনার করণ শর্মা। তবে লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হলেও ৪ ওভারে ১৬ রান দিয়ে করণ তুলে নেন ৪টি উইকেট। অনবদ্য বোলিং পারফরম্যান্স তাঁর। বুমরাহ ৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে একটি মেডেন সহ ৭ রান দিয়ে নেন ৩টি উইকেট। তরুণ ব্যাটসম্যান ইশাঙ্ক জাগ্গি ও সূর্যকুমার যাদব খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন। মণীশ পাণ্ডের চোট থাকায় গত ম্যাচেও খেলার সুযোগপেয়েছিলেন জাগ্গি। গত ম্যাচে তিনি কঠিন সময়ে অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এদিন তার সামনে লড়াইয়ের মঞ্চটা ছিল আরো কঠিন। প্রতিপক্ষ দলের বোলাররা গোড়ায় সাফল্য পেয়ে যাওয়ায় পরের দিকে আরও বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছিলেন। তবে সাহসী ব্যাটিং করেন ইশাঙ্ক জাগ্গি। উইকেটে টিকে থেকে রান খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান নাইট রাইডার্সের সহ-অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। দশম আইপিএল তাঁর ভালো যায়নি। খারাপ ফর্মের জন্য তিনি দল থেকে বাদও পড়঩ছিলেন। তবে অন্ধকার সরিয়ে কেকেআর শিবিরে আলো ছড়ানোর সুযোগ ছিল সূর্যর সামনে। শুরুটা বেশ ভালোই করেছিলেন সূর্য। আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে তিনি দ্রুত গতিতে রান তোলার চেষ্টা করেন। রান রেট বাড়ানোর নেশায় তিনিও চালিয়ে খেলতে গিয়ে ২৫ বলে ৩১ রানে আউট হন যশপ্রীত বুমরাহর বলে।আইপিএলের মঞ্চে মুম্বই সব সময়ই কেকেআরের সামনে বড় গাঁট। ২১বারের সাক্ষাৎকারে নাইটরা হেরেছে ১৬ বার। জিতেছে মাত্র ৫ বার। দশম আইপিএলে তিনবার নাইটদের হারাল মুম্বই। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নাইটরা স্নায়ুর চাপটা নিতে ব্যর্থ।

No comments

Powered by Blogger.